ষষ্ঠ অধ্যায় (১)

ঁকুন্জলাল নাগ মহাশয় যে দিন ঠাকুর দর্শনে আসিয়াছিলেন, তাহার ৩/৪ দিন পরের কথা। ঠাকুরের অসুখ ধীরে ধীরে কমিয়া আসিতেছিল, প্রত্যহই একবার, কোন দিন বা দুইবার, তাঁহাকে দেখিয়া আসিতাম। সেদিন প্রাতঃকালে ঠাকুর দর্শনে আসিলাম। আমি ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া উপবেশন করিতেই প্রভাতবাবু বলিলেনঃ “তোমাকে একটা শুভ সংবাদ দিই, কাল হইতে মাছ ছাড়িয়া দিয়াছি, দু’চার দিনের মধ্যে আতপও ধরিব। ভাবিয়া দেখিলাম যে, আতপ-নিরামিষ না খাইলে ইষ্টকর্ম্ম যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা যায় না।” এই কথা বলিয়া মনের উপর খাদ্যের প্রভাব, আমিষ ও নিরামিষের গুরুতর পার্থক্য, ইত্যাদি বিষয়ে কয়েকটি বচন উদ্ধার করিয়া একটি অতি মনোরম ও হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা করিলেন। ঠাকুর নীরবেই রহিলেন, ভাল মন্দ কিছুই বলিলেন না। প্রভাতবাবুর বক্তৃতা আমার উপর খানিকটা প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, সুতরাং মনে মনে স্থির করিলাম যে, ঠাকুরকে নিরিবিলি কথাটা একবার জিজ্ঞেসা করিতে হইবে কিন্তু সে দিন আর সুযোগ হইল না।

    পরের দিন বেলা ৮টার সময় আবার ঠাকুর দর্শনে আসিলাম। একতলায় মতিবাবুর সঙ্গে দেখা হইল, তিনি বলিলেন, “প্রভাতবাবুর খুব দ্রুত পরিবর্তন হইতেছে বলিয়া মনে হয়, এদিকে নিরামিষ ধরিয়াছেন, আবার গতকাল হইতে সংকল্প করিয়াছেন যে, প্রত্যহ এক অনুধ্যায় করিয়া ভাগবত পাঠ করিবেন। ঠাকুর যখন উপস্থিত থাকিবেন তখন তাঁহাকে শুনাইয়াই ভাগবত পাঠ করিবেন, স্থির করিয়াছেন। এখন উপরে ঠাকুরের ঘরে পাঠই চলিতেছে।” আমি আগ্রহ সহকারে উপরে যাইয়া দেখিলাম যে, বাস্তবিকই প্রভাতবাবু নিবিষ্ট মনে ভাগবত পড়িতেছেন এবং ৩/৪ জন ভদ্রলোক বসিয়া শুনিতেছেন। পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, সেই ঘরের বাহিরে ছোট্ট একটি ছাদ ছিল। সেই ছাদে দাঁড়াইয়া এক ভদ্রলোক সিগারেট টানিতেছিলেন। তিনি আমার হাত ধরিয়া দাঁড় করাইলেন, এবং বলিলেন যে, কাল রাত্রিতে তাহার বাড়ীতে চুরি হইয়া গিয়াছে। কিছু গয়নাগাটি ও তিনশত টাকা নগদ লইয়া গিয়াছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ “ঠাকুর থাকিতে আমার এই সর্ব্বনাশ হইল কেন”? ভদ্রলোকের দূর্ভাগ্যবশতঃ কথাটা প্রভাতবাবুর কানে গিয়েছিল। আর যায় কোথায়? প্রভাতবাবু অগ্নিশর্ম্মা হইয়া উঠিলেন এবং  চিৎকার করিয়া ঠাকুরকে বলিলেনঃ “ঠাকুরালি ছাড়িয়া এবার চৌকিদারী ধরুন, নতুবা ভক্তমন্ডলীর হাতে আপনার নিস্তার নাই।” তারপর আরম্ভ হইল সেই ভদ্রলোকের পালা, প্রভাতবাবু তাহাকে যাচ্ছেতাই করিতে লাগিলেন। ঠাকুর কি দারওয়ান, না চৌকিদার যে তাহার বাড়ীর খবরদারী করিবেন, তিনি কি এইসব মতলব লইয়াই ঠাকুরের কাছে আসিয়াছেন, তবে যেন আর ভবিষ্যতে না আসেন, নতুবা খুনাখুনি হইয়া যাইবে, ইত্যাদি,ইত্যাদি। কতক্ষণ এরূপ চলিত বলিতে পারিব না, কারণ প্রভাতবাবু অত্যন্ত চটিয়াছিলেন এবং তাহার মুখ একবার ছুটিলে সহজে বন্ধ হইতে চাইত না। কিন্তু হঠাৎ ঠাকুর প্রভাতবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ “এইটা পড়তে আছেন কোন অধ্যায়?” আমরা সকলে হাসিয়া উঠিলাম এবং প্রভাতবাবুরও চমক ভাঙ্গিল এবং মনে হইল যে, তিনি অত্যন্ত লজ্জিত হইয়াছেন। হাত হইতে ভাগবতখানা ঠাকুরের বিছানার উপর ফেলিয়া রাখিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন এবং ঐ ভদ্রলোককে সঙ্গে লইয়া নীচে চলিয়া গেলেন। আমিও সঙ্গে সঙ্গে গেলাম।

      নীচে যাইয়া কিছুক্ষণ কথাবার্ত্তার পর আমরা ঐ ভদ্রলোককে শান্ত করিতে সমর্থ হইলাম। তিনি অত্যন্ত বদমেজাজী লোক ছিলেন এবং কাহাকেও বড় একটা গ্রাহ্য করিতে চাহিতেন না। প্রভাতবাবুর গালাগালিতে তিনিও অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হইয়াছিলেন। ঐ ভদ্রলোকও স্বীকার করিলেন যে, এভাবে কথাটা বলা তাহার সঙ্গত হয় নাই। কিন্তু এখন ভাবি যে, ভদ্রলোক এমন কি অন্যায় করিয়াছিলেন।  তাহার একমাত্র অপরাধ যে তিনি কথাটা সোজা এবং সরলভাবে বলিয়া ফেলিয়াছিলেন। পরমার্থ আমাদের অনেকের কাছেই শুধু কথার কথা মাত্র। বৈষয়িক স্বার্থের সঙ্গে ঠাকুরকে যে কতকটা জড়াইয়া লই না, একথা বোধ হয় হলফ করিয়া কেহই বলিতে পারি না। এই প্রসঙ্গে অনেক কথাই মনে হইতেছে। শুনিয়াছি যে এক ভদ্রলোকের কন্যা আত্মহত্যা করিয়াছিল এবং পরের দিনই তিনি ঠাকুরের ফটোখানা আসন হইতে তুলিয়া পুকুরে ফেলিয়া দিয়াছিলেন। কোন গুরুতর বিপদে পড়িলে অনেককেই বলিতে শুনিয়াছিঃ “তাহা হইলে ঠাকুর আছেন কি জন্য?” অর্থাৎ ঠাকুরের কাজ হইল চৌকিদারি, খবরদারী ও সর্ব্বপ্রকারে আমাদের সেবা। সে যাহাই হউক, প্রভাতবাবু বাড়ী চলিয়া গেলেন,ভবিষ্যতে আর কখনও তিনি ভাগবত পাঠের চেষ্টা করেন নাই। আমি আবার ঠাকুরের নিকট গিয়া বসিলাম। কিন্তু সে দিনও আমার সেই “মাছ ছাড়িবার” কথাটা উত্থাপন করিবার সুযোগ হইল না।  

      পরের দিন কলেজ ছিল না, একটু দেরী করিয়াই ঠাকুরের কাছে আসিলাম। যাহা ভাবিয়াছিলাম তাহাই হইল, দেখিলাম যে, তিনি একাই বসেয়া রহিয়াছেন, নিকটে কেহই নাই। আমি যাইয়া প্রনাম করিতেই তিনি আমার মাথায় হাত বুলাইয়া দিলেন কিন্তু কোন কথা বলিলেন না। তাঁহার বিছানার উপর একটি নস্যির কৌটা ছিল,তিনি কৌটাটি হাতে তুলিয়া লইলেন এবং একান্ত মনে উহারই পরিচর্য্যায় নিযুক্ত হইলেন। আমি বসিয়া মুগ্ধনেত্রে দেখিতে লাগিলাম। ঠাকুর কৌটাটি একবার খুলিলেন, আবার বন্ধ করিলেন, তারপর কাপড়ের খুঁট দিয়া অতি যত্নসহকারে কৌটাটি ঘষিয়া পরিস্কার করিতে লাগিলেন। একবার কৌটাটি ঘষেন, একটু থামিয়া চোখের সম্মুখে আনিয়া নিবিষ্ট মনে দেখেন, আবার ঘষেন, আবার দেখেন, এইরূপ প্রায় ২০ মিনিট ধরিয়া চলিল। আমি যে সম্মুখে বসিয়া রহিয়াছে সে খেয়ালই যেন ঠাকুরের নাই। চাহিয়া দেখিলাম যে, ঠাকুরের মুখখানা আনন্দে যেন একেবারে ডগমগ হইয়া উঠিয়াছে। আমি মুগ্ধ হইয়া গেলাম। ঠাকুরের এই ভাব যে সেদিনই প্রথম দেখিলাম তাহা নহে , পূর্ব্বেও বহুবার দেখিয়াছি, পরেও দেখিয়াছি, কিন্তু যখনই দেখিয়াছি তখনই মুগ্ধ হইয়াছি। “অহৈতুকী আনন্দ” বলিয়া একটা কথা শুনা যায়, বোধ হয় ইহাই সেই আনন্দ। হেতুটা নগণ্য, নাই বলিলেও চলে, একটা উপলক্ষ মাত্র, কিন্তু আনন্দের যেন তুফান বহিয়া যাইতেছে। হেতু ভিন্ন কোন কিছুর একটা কল্পনাও আমরা করিতে পারি না, সুতরাং প্রকৃত আনন্দ যে কি তাহার কোন ধারণাই আমাদের নাই। সামান্য একটা অকিঞ্চিৎকর কথা বা ব্যাপার লইয়া বহুক্ষণ অনাবিল আনন্দে মাথিয়া থাকিতে পারে এরূপ লোক যে দেখি নাই এমন নহে, কিন্তু তাহাদের সংখ্যা ক্রমেই ক্ষীণ হইয়া আসিতেছে। লাভ-লোকসানের খতিয়ান অন্ততঃ কিছুটা না ছাড়িতে পারিলে আনন্দের কাছেও ঘেঁষা যায় না। ছেলে বয়সে দেখিয়াছি যে, শেষ রাত্রে কবিগান আরম্ভ হইয়াছে, সরঞ্জামের মধ্যে একটি ঢোল ও একটি কাঁসি, উপরে সামিয়ানার পরিবর্ত্তে ২/১ খানা নৌকার পাল টানান আর বসিবার জন্য হোগলা এবং চাটাই। কিন্তু এই সামান্য আয়োজনের মধ্যে যে আনন্দের তুফান বহিতে দেখিয়াছি ,তাপ-নিয়ন্ত্রিত হলঘরে গদি আঁটা চেয়ারে বসিয়া, লক্ষ, লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রস্তুত সবাক-চিত্র দেখিয়া বাবুরা যে সে আনন্দের সামান্য একটু অংশও উপভোগ করিতে পারেন না তাহা আমি নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। এমন কত লোক দেখিয়াছি যে, মাছের ডুলা ও দুধের ঘটি লইয়া বাজার যাইবার পথে কবির আসর দেখিয়া তাহাতে বসিয়া গিয়াছে, বৈকালে আসর ভাঙ্গিলে খেয়াল হইল যে বাজারও হয় নাই, খাওয়াও হয় নাই। বাবুরা হয়ত বলিবেন যে, ইহাদের সময়ের মূল্যেজ্ঞান নাই, দায়িত্ব বোধ নাই, ইহাদের কথা না তোলাই ভাল, কিন্তু আমি বলিব যে, সময়ের মূল্যজ্ঞান দায়িত্ব বোধ টনটনে রকমের থাকিলে, অর্থাৎ অন্তত কিছুটা আত্মভোলা হইতে না পারিলে আনন্দের নাগাল পাওয়া যায় না। কি করিলে কি হইবে,এটা করিলে ওটা হইবে, এই জাতীয় চিন্তা আমাদিগকে এমন আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া ফেলিতেছে যে, আমাদের জীবনে আনন্দ ক্রমশঃই লুপ্ত হইয়া আসিতেছে। আমার এক সময়ে ফুটবল খেলা দেখিবার বাতিক ছিল। গোড়ার দিকে দেখিয়াছি যে, দর্শকবৃন্দের মধ্যে অনেকেই খেলা দেখিতেই যাইতেন এবং খেলা উপভোগ করিতেও জানিতেন। কোন বিশেষ দলের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকিলেও, অথবা সাধারণভাবে কোন দলের পৃষ্ঠপোষকতা করিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে মর্যাদা দিবার অথবা তাহাদের ক্রীড়ানৈপুন্যকে তারিফ করিবার মত উদারতা অনেকের ছিল। সুতরাং তাহারা খেলার মাঠ হইতে কিছুটা আনন্দ লইয়াই বাড়ী ফিরিয়া আসিতেন। কিন্তু শেষের দিকে দেখিয়াছি যে, বাস্তবিক খেলা দেখিতে কেহ আসে না, অধিকাংশ আসে “গোল” দেখিতে, এবং সেই “গোল” স্বপক্ষের না হইয়া বিপক্ষের হইলেই রেফারি বেচারার বিপদ ঘনাইয়া উঠে।  আরো অনেক কিছুই বলিতে পারি, কিন্তু আমার মনে হয় যে, তাহা নিষ্প্রয়োজন। বলিতেছিলাম অহৈতুকী আনন্দের কথা। এ বিষয়ে আমার নিজের কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে বলিয়াই কথাটা তুলিতে সাহসী হইয়াছিলাম। কিন্তু ইহা এমন বস্তু যে একে অন্যকে বুজাইয়া দিতে পারে না, নিজে নিজেই বুজিয়া লইতে হয়।

    আবার ঠাকুরের কথায় ফিরিয়া যাইতে হইতেছে। প্রায় ২০ মিনিট পরে ঠাকুর নস্যির কৌটাটা রাখিয়া দিলেন এবং আমার দিকে চাহিয়া মৃদু একটু হাসিলেন। হঠাৎ ঠাকুর উঠিয়া দাঁড়াইলেন এবং আমি কিছু বুজিয়া উঠিবার পূর্ব্বেই টেবিলের উপর হইতে দোয়াত ও কলমটি লইয়া পুনরায় স্বস্থানে আসিয়া বসিলেন। কথাটা বুজাইবার জন্য এখানে ঘরটির একটা বিবরণ দেওয়া প্রয়োজ। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ছোট্ট একখানি ঘর, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং প্রস্থে ৮ ফুটের বেশী হইবে না। দক্ষিণের দেয়াল ঘেঁষিয়া ঠাকুরের বিছানা, তাহার উত্তরে আমাদের জন্য একখানা সতরন্ঞ্চি, পূর্ব্বে একটি দরজা ও একটি জানালা, পশ্চিম-উত্তর কোণে অতি ছোট একখানা টেবিল। এই টেবিলখানার উপরেই দোয়াত ও কলমটি ছিল। আমি যেখানে বসিয়াছিলাম, সেখান হইতে হাত বাড়াইয়া অনায়াসে জিনিস দুইটি তুলিয়া লইয়া ঠাকুরকে দিতে পারিতাম, আমার উঠিবারও প্রয়োজন হইত না। কিন্তু ঠাকুর আমাকে কিছু বলিলেন না, নিজেই উঠিয়া দোয়াত ও কলমটি লইয়া আসিলেন। বরাবরই দেখিয়াছি যে, যে-কাজ নিজে করা সম্ভব তাহার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হইতে ঠাকুর সহজে চাহিতেন না, এইজন্য তাঁহার সহিত অনেক সময়ে ছোটখাট কলহ বাধিয়া যাইত। শোচ হইতে ফিরিয়া নিজেই ঘটি মাজিতে বসিয়া গেলেন, জোর করিয়া ঘটি কাড়িয়া লইলাম, নিজের বিছানাখানা নিজেই ঝারিয়া লইতে উদ্যত হইলেন, বলপূর্ব্বক বাধা দিয়া তাঁহাকে নিরস্ত করিলাম, এইরূপ ব্যাপার হামেশাই ঘটিত। এই ছোটখাট ব্যাপারগুলি অনেক সময়েই আমাকে ভাবাইয়া তোলে। আমি অতিমাত্রায় তামাকপ্রিয়, কলকি একপ্রকার জুড়ায় না বলিলেও চলে। সুতরাং এই তামাক সাজার ব্যাপার লইয়া একটি খিটিমিটি লাগিয়াই থাকে। এত তামাক সাজা সহজ ব্যাপার নহে, সুতরাং চাকরেরাও বিরক্ত হয়, ছেলেমেয়েরাও এড়াইয়া চলিতে চায়। আবার এদিকে এই তামাকের ব্যাপারে সামান্য একটু অব্যবস্থা হইলেই আমার মেজাজ তিরিক্ষি হইয়া উঠে। হাঁকডাক করিয়া একটা অনর্থ বাধাইয়া তুলি।অনেকবার ভাবিয়াছি যে, সামান্য একটু চেষ্টা করিলেই তো এই গোলযোগের মীমাংসা হইয়া যায়।  অতি সহজ মীমাংসা তামাক ছাড়িয়া দেওয়া কিন্তু আমি সে মীমাংসার কথা বলিতেছি না। হাঁকডাক করিয়া এবং মেজাজ খারাপ করিয়া যে-শক্তির অপচয় করি তাহার সিকি খরচেই বোধ হয় তামাকটা নিজেই সাজিয়া লওয়া যায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না। এতদিন ধরিয়া ঠাকুরের সঙ্গ করিলাম, কত দেখিলাম, কত শুনিলাম, কিন্তু শিখিলাম না কিছুই। সে যাহাই হউক, আমার যে ঠাকুরকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করিবার ছিল তাহা ভুলিয়াই গিয়াছিলাম, হঠাৎ মনে হওয়ায় তাঁহাকে বলিলামঃ “ প্রভাত মাছ ছাড়িয়া দিল, আমিও তা’হলে মাছ ছাড়িয়া দেই।”  ঠাকুর বলিলেনঃ “আপনি মাছ ছাড়তে যান কেন, যখন ছাড়িবার মাছই আপনাকে ছাড়িয়া যাইবে।” প্রভাতবাবুর বক্তৃতার প্রভাবটা এই তিন দিনেই অনেকটা কমিয়া আসিয়াছিল, ঠাকুরের কথায় আর তাহার চিহ্নও রহিল না।