স্বপ্নেও কখন ভাবি নাই যে, একদিন ঠাকুরের কথা লিখিতে বসিব। অনুরোধ উপরোধ অনেক আসিয়াছে কিন্তু আমি অটলই রহিয়াছি। সকলকেই সরলভাবে বলিয়াছি যে, তাঁহার সম্বন্ধে কিছু লিখিতে আমার সাহস হয় না। ঠাকুরের যাহা স্বরূপ তাহা আমি বুঝি নাই, বুঝিবার অধিকারও নাই, সুতরাং তাঁহার সম্বন্ধে কিছু বলিতে গেলেই তাঁহাকে আমার স্তরে নামাইয়া আনা ছাড়া গত্যন্তর নাই। অসম্পূর্ণ এবং কিয়দংশে বিকৃত একটা চিত্র আঁকিবার চেষ্টা করা অপেক্ষা কিছু না করাই ভাল, এই ধারণাই আমি বরাবর পোষণ করিয়া আসিয়াছি। তথাপি যে আজ ঠাকুরের কথা বলিতে বসিয়াছি, গোড়াতেই তাহার একট কৈফিয়ৎ দেওয়া প্রয়োজন মনে হইতেছে।
এক কথায় বলিতে গেলে ঠাকুরের দেহত্যাগের পর যে নূতন পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে, তাহাই আমার মত পরিবর্তনের কারণ। দেখিলাম যে ঠাকুরের দেহত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই নানা জনে নানা কথা বলিতে সুরু করিয়াছে এবং সত্যে মিথ্যায় জোট বাঁধিয়া ঠাকুরকে লইয়া একটা জগাখিচুড়ি পাকাইয়া উঠিতেছে। দীর্ঘকাল নানাভাবে ঠাকুরের সঙ্গ করিয়াছি এবং বরাবরই তাঁহার কথা বলার ভঙ্গী, তাঁহার চাল-চলন প্রভৃতি বিশেষ অনুধাবনের সহিত লক্ষ্য করিয়া আসিয়াছি। ফল দাঁড়াইয়াছে এই যে, সুরসাধক যেমন কোন তার বেসুরা হইলে তৎক্ষণাৎ ধরিয়া ফেলিতে পারে, সেইরূপ ঠাকুরের সম্বন্ধে কোন বিসদৃশ কথা হইলেই খট করিয়া আমার কানে লাগে, সহজে প্রতারিত হই না। একটা দৃষ্টান্তের উল্লেখ করিয়া কথাটা পরিস্ফুট করিতে চেষ্টা করিব। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি ঢাকাতে ছিলাম, সেই সময় এক ভদ্রলোক সেখানে সস্ত্রীক তাহার শ্বশুরবাড়ীতে বেড়াইতে আসিয়াছিলেন। পূর্ব্বেই ইহার সহিত আমার পরিচয় ছিল, আমি ঢাকায় আছি শুনিয়া আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন। তাহার সঙ্গে ঠাকুরের আশ্রিত আরও দুইজন ভদ্রলোক আসিয়াছিলেন স্মরণ আছে। সেই নবাগত ভদ্রলোক আমাকে প্রণাম করিয়া সম্মিতমুখে বলিলেনঃ “দাদা, এতদিনে আমিও আপনাদের একজন হইয়াছি।” কোথায়, কি ভাবে তিনি আশ্রয় পাইলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলিলেন যে, বিষয়কৰ্ম্ম উপলক্ষে তিনি এখন আসামের কোনও এক স্থানে বসবাস করেন। একদিন তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ঠাকুরকে লইয়া তাহার বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাহার দাদা তাহাকে নিভৃতে বলিলেন যে, মহাসুযোগ উপস্থিত, ইহা যেন কোন মতেই নষ্ট না হয়, ঠাকুরকে ধরিয়া একটা গতি করিয়া লইতেই হইবে। কিন্তু তিনি বাঁকিয়া বসিলেন, গুরুর প্রয়োজনীয়তা কি, তাহা না বুঝিলে “নাম” লইতে তিনি অস্বীকার করিলেন। দাদা তাহাকে ঠাকুরের নিকট লইয়া গেলেন এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ধরিয়া বাদানুবাদ চলিবার পর ঠাকুর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন: “এইবার বুলি গুরুর প্রয়োজনীয়তা কি?” তিনি বলিলেনঃ “বুঝিয়াছি।” ঠাকুর আবার বলিলেনঃ “সত্য?” তিনি বলিলেন “সত্য”, এইভাবে “ত্রি সত্য” করাইয়া লইয়া ঠাকুর তাহাকে “নাম” দিয়া কৃতকৃতার্থ করিয়াছেন। কথাগুলি যে আগাগোড়া মিথ্যা ইহা বুঝিতে আমার বিন্দুমাত্রও বিলম্ব হইল না এবং তৎক্ষণাৎ ঐ ভদ্রলোককে চাপিয়া ধরিলাম। কিছুক্ষণ ধানাই পানাই করিয়া তিনি স্বীকার করিতে বাধ্য হইলেন যে, আসর জমাইবার মতলবে ঘটনাটার উপর অনেকটা রঙ ফলাইয়াছেন। এইরূপ ঘটনা আমার জীবনে বহুবার ঘটিয়াছে এবং কত লোককে যে মর্মান্তিক আঘাত হানিয়াছি, তাহা ভাবিলেও এখন দুঃখ হয়। ইদানীং আর কাহাকেও কিছু বলি না, শুধু শুনিয়াই যাই।
তাই বলিতেছিলাম যে, ঠাকুরের দেহত্যাগের পর তাঁহার সম্বন্ধে যে অনেক মিথ্যা ও অর্দ্ধসত্য প্রচারিত হইতেছে তাহা সহজেই বুঝিতে পারিলাম এবং ইহাও বুঝিলাম যে, এ বিষয়ে কোন একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করা নিতান্তই প্রয়োজন। হঠাৎ মনে হইল যে, একটা অমোঘ ব্যবস্থা তো আমার হাতেই রহিয়াছে। সাধারণতঃ, আমরা মহাজনদের বক্তব্য সাক্ষাৎ সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই পাই না, যাহা পাই তাহা শিষ্যবর্গের বরাবরেই পাই, কিন্তু ঠাকুর তো তাঁহার কথা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট লিখিত অসংখ্য পত্রের মধ্য দিয়া নিজ হস্তেই লিখিয়া রাখিয়া গিয়াছেন এবং তাহার কিছুটা তো সংগৃহীত হইয়াই আছে। বহু বৎসর যাবৎ আমি ঠাকুরের আশ্রিতবর্গের নিকট হইতে তাঁহার চিঠিগুলি চাহিয়া লইয়া সারাংশ একখানা খাতাতে টুকিয়া রাখিতেছিলাম এবং এই সংগ্রহ অনেকটা অগ্রসর হইয়াছিল। মনে হইল যে, এই চিঠিগুলির প্রামাণ্য কেহই অস্বীকার করিতে পারিবে না এবং যে যাহাই বলুক না কেন, সকল ক্ষেত্রেই একটা অব্যর্থ কষ্টিপাথরের কাজ করিবে। চিঠিগুলি স্থায়িভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নূতন করিয়া উপলব্ধি করিলাম এবং ঐকান্তিক উদ্যমে কাজে লাগিয়া গেলাম। ঠাকুরের চিঠিগুলির সারাংশ “বেদবাণী” নামে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হইয়া গেল এবং আমি ভরসা করি যে, তৃতীয় খণ্ডও শীঘ্রই যন্ত্রস্থ হইবে। ইহাতে কিছুটা কাজ যে না হইয়াছে তাহা নহে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অপর এক সমস্যার উদ্ভব হইয়াছে। ইতিমধ্যেই ঠাকুরের সম্বন্ধে একখানা পুস্তক বাহির হইয়াছে এবং শুনিতেছি যে, শীঘ্রই আরও দুই তিনখানা বাহির হইবে। এখানে সেখানে নানারকমের প্রবন্ধাদিও ছাপা হইতেছে। ইহাতে আমার বলিবার কিছুই নাই। পুস্তক ও প্রবন্ধাদি লিখিবার ও তাহা ছাপাইবার অধিকার সকলেরই আছে। এই সকল লেখার কোনটার মধ্যেই যে চিত্তাকর্ষক কিছুই নাই, এমন কথাও বলিতে পারি না। বিশেষতঃ, মহামহোপাধ্যায় ডক্টর গোপীনাথ কবিরাজ মহাশয় “হিমাদ্রি” নামক সাপ্তাহিকে ঠাকুরের সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ ছাপাইয়া আমাদের সকলকেই কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করিয়াছেন। তাহার এই প্রবন্ধে ঠাকুরের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী সম্বন্ধে যে আভাসটুকু পাওয়া গিয়াছে, তিনি ঠাকুরের কথাগুলি নোট করিয়া না রাখিলে এবং প্রবন্ধাকারে তাহা রূপান্তরিত না করিলে ঠাকুরের এই দিকটা হয়তো চিরতরেই লুপ্ত হইয়া যাইত। ঠাকুরের চরণাশ্রিত আমার বিশিষ্ট বন্ধু শ্রীবামাচরণ দে (ইনি কটকে কন্ট্রাকটারী করিতেন, বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করিতেছেন) এই প্রবন্ধটি পড়িয়া মন্তব্য করিয়াছিলেন যে, ঠাকুরের যে কথাগুলি শুনিলে সকলের ঘুম পাইত, সেইগুলি লইয়াই গোপীবাবু ইহা রচনা করিয়াছেন। বস্তুতঃ, আমরা অনেকেই এই কথাগুলি বহুবার শুনিয়াছি কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভুলিয়া গিয়াছি, ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা বড় একটা করি নাই। সেইজন্যই আমার মনে হয় যে, গোপীবাবুর মত একজন সুবিখ্যাত দার্শনিক পণ্ডিত ও শ্রদ্ধাবান ভক্তকে দিয়া ঠাকুরই এই কাজটি সম্পন্ন করাইয়া লইয়াছেন। সে যাহাই হউক, আমার কথা হইল এই যে, এই নূতন পরিস্থিতিতে আর নীরবে বসিয়া থাকিতে পারিতেছি না। আমার সংস্কার-মলিন চিত্তমুকুরে ঠাকুর যতটুকু প্রতিভাত হইয়াছেন এবং দীর্ঘকাল তাঁহার সাহচর্য্য করিয়া আমি যাহা শুনিয়াছি, দেখিয়াছি ও পাইয়াছি, তাহার একটা বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখাই সমীচীন মনে হইতেছে। কষ্টিপাথর তো রহিলই, ইহার সাহায্যে বর্তমান পাঠক-পাঠিকারা ও পরবর্তীরা আলেখ্যগুলির ভালমন্দ একটু চেষ্টা করিলেই যাচাই করিয়া লইতে পারিবেন।
দ্বিতীয় কথা হইল এই গ্রন্থের উপকরণ লইয়া। আমি নিজে যাহা – শুনিয়াছি ও দেখিয়াছি এবং ঠাকুরের মুখে যাহা শুনিয়াছি, মূলতঃ তাহাই এই গ্রন্থে উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হইয়াছে। কখন কখন অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্রে জানা কোন কোন ঘটনা আমার কথার পরিপোষক হিসাবে উল্লিখিত হইয়াছে সত্য, কিন্তু আমার বিশ্বাস যে এগুলিকে ছাঁটিয়া দিলেও আমার মূল বক্তব্যের বিশেষ কোন অঙ্গহানি হইবে না। কেহ কেহ আমাকে বলিয়াছিলেন যে, ঠাকুরের আশ্রিতবর্গের নিকট হইতে আরও কিছু উপকরণ সংগ্রহ করিয়া লইলে হয়তো ঠাকুরের ছবিটি আরও পূর্ণতর হইত, কিন্তু প্রধানতঃ দুইটি কারণে আমি সে রাস্তায় যাইতে সম্মত হই নাই। আমি আজীবন ইতিহাসের ছাত্র এবং এই উপকরণ সম্বন্ধে আমাদের একটা শুচিবাই আছে। নিশ্চিত হইতে না পারিলে আমরা কোন উপকরণ সাধারণতঃ ব্যবহার করিতে চাহি না। আমার এই কথা হইতে কেহ যেন সিদ্ধান্ত করিয়া না বসেন যে, ঠাকুরের সম্বন্ধে তাঁহার আশ্রিতেরা যাহা কিছু জানেন বা বলেন, তাহার কিছুই আমি বিশ্বাস করি না। কথাটা কিন্তু মোটেই তাহা নহে। আমি বলিতে চাহিতেছি এই যে, প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী থাকে এবং কোন ঘটনা বিবৃত করিবার সময় এই দৃষ্টিভঙ্গী অগোচরে তাহার কাজ করিয়া যায়। ফল দাঁড়ায় এই যে, বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণেও নানা প্রকারের গরমিল আসিয়া পড়ে, একটা স্থির সিদ্ধান্তে আসিতে অনেক সময়েই কিছুটা বেগ পাইতে হয়। অন্যের মুখে শোনা ঠাকুরের কথার উপরেও নিশ্চিন্ত মনে নির্ভর করা যায় না। দু’একটা দৃষ্টান্ত দিতেছি। পোষ্টমাষ্টার শ্রীমাধবচন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের সেবক বৈদ্য লেনের বাসায় একবার ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে গিয়াছিলাম, সঙ্গে বরদাবাবু ছিলেন। সেখানে যাইয়া এক ভদ্রলোকের মুখে শুনিলাম যে, তাহাদের ওখানেও ঠাকুর নাকি এক উৎসব অনুষ্ঠানের আদেশ করিয়াছেন। তিনি ষ্টীমারে ঠাকুরের সঙ্গে আসিতেছিলেন, সেই সময়েই ঠাকুর তাহাকে এই আদেশ করেন এবং সকলকে জানাইয়া দিতে বলেন। বরদাবাবু ভদ্রলোককে জনান্তিকে বলিলেনঃ “আচ্ছা বলুন তো কথাটা ঠিক কি ভাবে উঠিয়াছিল? আপনিই বোধ হয় ঠাকুরকে বলিয়াছিলেন যে, নানা জায়গায় উৎসব হইতেছে, এমতাবস্থায় আপনাদের ওখানেও একটা উৎসব না হইলে ভাল দেখাইতেছে না।” ভদ্রলোক বলিলেন যে, ঠিক তাই, তিনিই কথাটা তুলিয়াছিলেন এবং সামনেই একটি পরব আসিতেছে স্মরণ হওয়ায় সেই তিথিটির কথাও ঠাকুরকে জানাইয়াছিলেন। ঠাকুর বলিয়াছিলেনঃ “বেশ ঐ তিথিতেই আপনারা উৎসব করিবেন।” অমনি চারিদিকে প্রচারিত হইয়া গেল যে, ঠাকুরের আদেশে অমুক তিথিতে অমুক স্থানে উৎসব হইবে। একটু বিচার করিলেই বুঝা যাইবে যে, প্রকৃত প্রস্তাবে ইহা ঠাকুরের আদেশ নহে, ইহা ঐ ভদ্রলোকেরই আদেশ। আরও একটা অপেক্ষাকৃত সহজবোধ্য দৃষ্টান্তের উল্লেখ করিব। এক গুরুদেব তাঁহার এক শিষ্যের বাড়ীতে উপস্থিত হইলে ঐ শিষ্যের এক পুত্রকে রুগ্ন অবস্থায় দেখিতে পাইলেন। গুরুদেব তাহাকে কিছুক্ষণ দেখিয়া বলিলেন যে, “গোক্ষুর ভিজানো জল খাওয়াইলেই সন্তানটির রোগ সারিয়া যাইবে।” কয়েক মাস পরে ঐ গুরুদেব অন্য গ্রামে আর এক শিষ্যবাড়ী আসিয়াছেন খবর পাইয়া ঐ শিষ্য গুরুদেবের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য সেখানে উপস্থিত হইলেন। তিনি গুরুদেবকে প্রণাম করিলে পর গুরুদেব তাহার পুত্রের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। শিষ্য বলিলেন যে, “গরুর মূল্য অনেক, সেইজন্য সাতটি বাছুর হত্যা করিয়া ঐ বাছুরের ক্ষুর ভিজানো জল খাওয়ানো হইয়াছে কিন্তু রুগীর উপকার হয় নাই।” গুরুদেব বুঝিতে পারিলেন যে, শিষ্যের গোক্ষুরের অর্থ বোধগম্য না হওয়ায় এই বিভ্রাট ঘটিয়াছে। তখন গুরুদেব বলিলেন যে, বেনেতী মসলার দোকানে গোক্ষুর পাওয়া যায়, উহা চার পয়সার কিনিয়া ভিজানো জল খাওয়াইলেই রোগ সারিয়া যাইবে। গোবধ নিষ্প্রয়োজন। সকল কথা যাচাই করিবার সময়ও নাই, সুযোগও হয় না। সুতরাং আমি সোজা রাস্তাই অবলম্বন করিয়াছি, আমার নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই মূলতঃ আমার বক্তব্যকে দাঁড় করাইতে চেষ্টা করিয়াছি। দ্বিতীয়তঃ, আমার নিজের অভিজ্ঞতার সহিত অপরের অভিজ্ঞতা মিশাইলে সকল সময়ে হয়তো সামঞ্জস্য রক্ষা করা সম্ভব হইত না এবং ফলে আমার বক্তব্যটাও একটু ঘোলাটে আকার ধারণ করিত। সুতরাং নিজে যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি শুধু তাহাই বলিতে চেষ্টা করিয়াছি, দোষত্রুটি সমস্তই আমার; আর কাহারও কোন দায়িত্ব ইহাতে নাই।
এইবার আমার বিরুদ্ধে একটা গুরুতর অভিযোগের কৈফিয়ৎ দিতে হইবে। আমি সাধারণতঃ শুধু “ঠাকুর” বলিয়াই তাঁহার উল্লেখ করি, পূর্ব্ব “শ্রীশ্রী” বা শ্রদ্ধাসূচক আর কিছু জুড়িয়া দেই না, এজন্য
অনেকে আমাকে অনুযোগ দিয়াছেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বক্তব্য আছে কিনা, তাহা বড় একটা কেহই শুনিতে চাহেন নাই, শুধু বলিয়াছেন যে, এই ত্রুটির দরুন আমি ঠাকুরের প্রতি অত্যন্ত অশ্রদ্ধা প্রকাশ করিয়াছি। সুতরাং আমার যাহা বক্তব্য, এই স্থানেই তাহা স্পষ্টভাবে লিখিয়া রাখা প্রয়োজন মনে হইতেছে। যাহারা এই পুস্তক পড়িবেন তাহারা অনায়াসেই বুঝিতে পারিবেন যে, ঠাকুরের সহিত আমার কোন দিনই গুরু-শিষ্য সম্বন্ধ গড়িয়া উঠে নাই। তিনি বরাবরই আমার সঙ্গে নিতান্ত আপনার জনের মতই ব্যবহার করিয়াছেন এবং ঠাকুরকেও আমার সর্ব্বদাই ঠিক তাহাই মনে হইয়াছে। সম্বন্ধটা মুখ্যতঃ প্রীতির, ভক্তি, শ্রদ্ধা ইত্যাদি সমস্তই গৌণ। সুতরাং ঠাকুরের নামের পূর্ব্বে “শ্রীশ্রী” বা ঐ জাতীয় অন্য কিছু জুড়িয়া দিলেই আমার মনে হয় যে তাঁহাকে দূরে সরাইয়া দিলাম, একটা আবরণ যেন তাঁহার ও আমার মধ্যে আসিয়া দাঁড়াইল। ইহা আমার অত্যন্ত ব্যক্তিগত কথা, অপরকে সহজে বুঝান যাইবে না। জনসমাজে তিনি “রাম ঠাকুর” নামেই পরিচিত হইয়াছিলেন, পুস্তকের নামকরণেও আমি তাহাই রাখিয়াছি, “শ্রীশ্রী” জুড়িয়া দেই নাই। ইহাতে যদি কেহ অসন্তুষ্ট হন, আমি শুধু তাহার মার্জনা ভিক্ষাই করিতে পারি, আর কিছু করিবার উপায় আমার নাই। নিজের বাবাকে “শ্রীশ্রীবাবা” বলিয়া ডাকা নিতান্তই অশোভন এবং হাস্যকর।
পরিশেষে এই পুস্তক প্রণয়নে যে পদ্ধতি অবলম্বন করিয়াছি, সে সম্বন্ধেও কিছু বলিয়া রাখা সঙ্গত মনে হইতেছে। পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, এই জাতীয় একখানা পুস্তক লিখিবার ইচ্ছা আমার কোন কালেই ছিল না, সুতরাং আমি কিছুই লিখিয়া রাখি নাই। কাজেই আমাকে আমার স্মৃতিশক্তির উপরেই নির্ভর করিতে হইয়াছে। যাহাদের সঙ্গে অধিকাংশ সময় ঠাকুর-সঙ্গ করিয়াছি তাহাদের অনেকেই আর ইহজগতে নাই এবং যাহারা আছেন তাহাদের মধ্যেও সকলের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাইয়া উঠিতে পারি নাই। এদিক হইতে সামান্য কিছু সাহায্য যে না পাইয়াছি, তাহা নয়, কিন্তু প্রধানতঃ আমাকে আমার স্মৃতিশক্তি অবলম্বন করিয়াই অগ্রসর হইতে হইয়াছে। ঠাকুরের সহিত পরিচিত হইবার সময় হইতে পর পর যে সকল স্থানে বাস করিয়াছি, সেই বাসস্থানগুলিকে কেন্দ্র করিয়া আমি ঘটনাগুলি সাজাইবার চেষ্টা করিয়াছি। সকল ক্ষেত্রেই যে সময়ক্রম রক্ষা করিতে পারিয়াছি এমন কথা হলফ করিয়া বলিতে পারি না, কিন্তু দৃঢ়তার সহিত বলিতে পারি যে, যে-সকল ঘটনা সম্যকরূপে মনে আসে নাই, সেগুলি বর্জ্জনই করিয়াছি, এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত করি নাই। যথাসাধ্য সত্যতা রক্ষার চেষ্টা করিয়াছি, কতদূর সফলকাম হইয়াছি তাহা ঠাকুরই বলিতে পারেন। ঠাকুরের ছোট ছোট যে সকল কথা আমার হৃদয়ে দাগ কাটিয়া রহিয়াছে, সেগুলি হুবহু ঠাকুরের নিজ ভাষাতেই লিপিবদ্ধ করিয়াছি কিন্ত অন্যত্র তাহা সম্ভব হয় নাই। ঠাকুরের কথার তাৎপর্য্য আমার নিজ ভাষাতেই বিবৃত করিয়াছি।
ভবিষ্যতে অন্য একটা কৈফিয়তের দায়ে পড়িতে পারি, এই আশঙ্কায় উপসংহারে আরও কিছু বলিয়া রাখিতে হইতেছে। এই পুস্তক হয়তো এমন লোকের হাতে পড়িতে পারে যাহারা ঠাকুর সম্বন্ধে কিছুই জানেন না, কেহ বা তাঁহার নামটাও শোনেন নাই। সুতরাং স্বভাবতঃই একটা নালিশ উঠিতে পারে যে, আমি মাঝখান হইতে ঠাকুরের কথা সুরু করিয়া বিষয়টাকে দুর্বোধ্য করিয়া তুলিয়াছি। সুতরাং ঠাকুরের একটু পরিচয় সংক্ষেপে লিখিয়া দেওয়া প্রয়োজন মনে হইতেছে। পূর্ব্বে এ বিষয়ে সামান্য যাহা লিখিয়াছিলাম তাহাই জোড়াতাড়া দিয়ে ছোট একটি নিবন্ধ এইস্থানে জুড়িয়া দিলাম। কী নিজ মামলার
বাঃ ১২৬৬ সনে মাঘী শুক্লা দশমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে ফরিদপুর জেলার ডিঙ্গামানিক নামক গ্রামে রামঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৩৫৬ সনের ১৮ই বৈশাখ পুণ্য অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে চৌমুহনীতে (নোয়াখালী) তাঁহার প্রকটলীলার অবসান হয়। এই সুদীর্ঘ ৯০ বৎসর তিনি একপ্রকার আত্মগোপন করিয়াই কাটাইয়া গিয়াছেন। তাঁহার জীবনের প্রায় অর্দ্ধাংশ তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে নানা স্থানে পরিভ্রমণ করিয়া এবং হিমালয়ের অনেক দুর্গম স্থানে বিচরণ করিয়া কাটাইয়াছেন। কখন বা আসনস্থ হইয়াও কোন কোন স্থানে কিছুকাল যাপন করিয়াছেন। কথাপ্রসঙ্গে খণ্ড খণ্ড ভাবে এই সময়ের নানা ঘটনা তিনি তাঁহার আশ্রিতবর্গের কাহারও কাহারও কাছে প্রকাশ করিয়াছেন এবং তাঁহার কথায় তাঁহার গুরুগোষ্ঠী ও নানাপ্রকার অলৌকিক অভিজ্ঞতা সম্বন্ধেও বিস্তর আভাস পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু এ সময়ের ধারাবাহিক বিবরণ কাহারও জানা নাই।
১০।১২ বৎসর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করিয়া যান, এবং আনুমানিক ৪৬।৪৭ বৎসর বয়সে স্থায়িভাবে লোকালয়ে ফিরিয়া আসেন। মধ্যে একবার ৩।৪ বৎসরের জন্য তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করিয়াছিলেন এবং এই সময়েই তিনি নোয়াখালী ও ফেণীতে অবস্থান করিয়াছিলেন। নোয়াখালীতে তাঁহার নানা প্রকার বিভূতি প্রকাশ হইয়া পড়ে এবং ফেণীতে কবিবর নবীনচন্দ্র সেনের সহিত তাঁহার পরিচয় হয়। কবিবর তখন ফেণীতে মহকুমা হাকিমের কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন এবং ঠাকুরও সেই সময়ে এক ওভারসিয়ারের সরকাররূপে সেখানে আগমন করেন। “আমার জীবন” চতুর্থ ভাগে নবীনচন্দ্র লিখিয়াছেন: “ফেণীতে যে জেলখানা প্রস্তুত হইতেছিল, রাম ঠাকুর তাহার সরকার হইয়া আসিল। লোকে বলিতে লাগিল যে, কখনও তাহাকে গৃহে আহ্নিকে দেখিয়াছে এবং পরের মুহূর্তে রাম ঠাকুর অদৃশ্য হইয়াছে। কেহ তাহাকে রাত্রিশেষে রক্তচন্দন-চর্চ্চিত অবস্থায় কোনও বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিতে দেখিয়াছে। সর্প দংশন করিতে, গরু মহিষ মারিতে আসিতেছে, আর রাম ঠাকুর বারণ করা মাত্র চলিয়া গিয়াছে। নিজে কিছুই আহার করে না। কদাচিৎ দুগ্ধ বা ফল আহার করে। অথচ তাহার সবল সুস্থ শরীর। পরসেবায় তাহার পরমানন্দ। জেলখানার ইটখোলার গৃহে পাব্লিক ওয়ার্ক-প্রভুদের বারাঙ্গনাগণ কখন পালে পালে উপস্থিত হয়। কিন্তু রাম ঠাকুর তাহাদের ঘৃণা করা দূরে থাকুক, বরং সন্তোষের সহিত নিজে রাঁধিয়া তাহাদের অতি যত্নে আহার করায় এবং মাতাল হইয়া পড়িলে তাহাদের আপন মাতা বা ভগিনীর মত শুশ্রূষা করে।” কবিবর আরও বলিয়াছেনঃ “রাম ঠাকুর দেখিতে ক্ষীণাঙ্গ, সুন্দর, শান্তমূর্তি। নিতান্ত পীড়াপীড়ি না করিলে কাহারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করে না, কোনও কথা কহে না। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, তাহার ৮ হইতে ১২ বৎসর পর্যন্ত সামান্য বাঙ্গালা শিক্ষা মাত্র হইয়াছিল। কিন্তু ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব, এমন কি প্রণবের অর্থ পর্য্যন্ত সে জলের মত বুঝাইয়া দিত।
আমি তাহাকে বড় শ্রদ্ধা করিতাম। মধ্যে মধ্যে আমি তাহাকে পীড়াপীড়ি করিয়া আমার গৃহে আনাইতাম এবং পতি-পত্নী মুগ্ধ চিত্তে তাহার অদ্ভুত ব্যাখ্যা সকল শুনিতাম। বলা বাহুল্য, সে পেশাদারী হিন্দু প্রচারকের ব্যাখ্যা নহে।” একটু প্রণিধান করিয়া পড়িলে এই দুইটি উদ্ধৃতি হইতেই ঠাকুরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে মোটামুটি একটা আভাস পাওয়া যায়।
এই সময়েই ঠাকুর দ্বিতীয়বার নিরুদ্দেশ হইয়া যান এবং প্রায় ১৭।১৮ বৎসর তাঁহার কোনও সংবাদ পাওয়া যায় নাই। আনুমানিক ১৯০২-০৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা অঞ্চলে ফিরিয়া আসেন। এই দ্বিতীয়বার লোকালয়ে ফিরিয়া আসিবার অব্যবহিত পূর্বের দুইটি ঘটনা ঠাকুর আমাকে বলিয়াছিলেন। এই কয় বৎসরে ঠাকুরের দেহের এমন একটা অপূর্ব্ব পরিবর্তন সংঘটিত হইয়াছিল যে, সেই চেহারায় গুরু তাঁহাকে পাঠাইতে ভরসা পাইলেন না। একটা অলৌকিক উপায়ে প্রভৃত রক্তক্ষরণ করাইয়া এবং পরিমাপ কমাইয়া দেহটিকে লোকালয়ে বিচরণের উপযোগী করিয়া গুরু তাঁহাকে পাঠাইয়াছিলেন। আমার মনে হয় যে, ঠাকুরের সেই অপূর্ব্ব মূর্তির একটা ক্ষীণ আভাস একদিন আমি পাইয়াছিলাম, যথাস্থানে তাহা বিবৃত করিব। দ্বিতীয়তঃ ঠাকুর বলিয়াছিলেন যে, গুরুর নিৰ্দ্দেশে বৃন্দাবনে যদু ভট্টাচার্য্য নামক কোনও এক ভক্তের গৃহে তিনি কিছুকাল অবস্থান করিয়াছিলেন। ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের কয়েকটি বিগ্রহ ছিল এবং ইহাদের সেবা লইয়াই তিনি কাটাইতেন। এই বিগ্রহ-সেবা সম্বন্ধে ঠাকুর আমাকে অনেক কিছুই বলিয়াছিলেন কিন্তু “অসম্ভবম্ ন বক্তব্যম্” এই নিষেধবাণী আমাকে নিরস্ত করিতেছে। আমি বিশেষ কিছুই বলিব না, শুধু এইটুকুই বলিব যে, বিগ্রহ-সেবা যে পুতুল-সেবা নয়, ঠাকুরের কথায় আমি তাহা নিঃসন্দেহে বুঝিতে পারিয়াছিলাম।
পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, আনুমানিক ১৯০২-০৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা অঞ্চলে ফিরিয়া আসেন। ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে তাঁহার মাতৃবিয়োগ হয়, সেই সময়ে তিনি কালীঘাটে ছিলেন, দেশে যান নাই। ইহার পর তিনি উত্তরপাড়া ও নিকটবর্তী, আরও ২।১টি স্থানে কিছুকাল অবস্থান করেন। হঠাৎ একদিন একবস্ত্রে বাহির হইয়া যান এবং বৎসরাধিক কাল দাক্ষিণাত্যের নানা স্থানে পদব্রজে ভ্রমণ করিয়া ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দের শেষ ভাগে, অথবা ১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম ভাগে দেশে ফিরিয়া আসেন। এই সময় হইতে তাঁহার তিরোভাব পর্য্যন্ত তিনি লোকালয়েই কাটাইয়া গিয়াছেন এবং অযাচিত ভাবে লোকের ঘরে ঘরে যাইয়া তাহাদিগকে ধন্য করিয়াছেন। “অহৈতুকী কৃপাসিন্ধু” কথাটির তাৎপর্য্য তাঁহাকে দেখিয়াই সম্যক্ উপলব্ধি করিতে পারিয়াছি। কত লোক যে তাঁহার শ্রীচরণাশ্রয় পাইয়া কৃতার্থ হইয়াছেন তাহার সঠিক সংখ্যা কাহারও জানা নাই; কিন্তু এই সংখ্যা যে অন্ততঃ লক্ষাধিক হইবেই এরূপ মনে করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। চট্টগ্রাম, ফেণী, নোয়াখালী, কুমিল্লা প্রভৃতি অঞ্চলে তিনি সর্ব্বজনবিদিত ছিলেন বলিলেও বোধ হয় অত্যুক্তি হইবে না। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে তিনি সকলেরই ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। জীবনের শেষের কয়েক বৎসর তিনি চৌমুহনীতেই কাটাইয়াছিলেন। তাঁহার দেহত্যাগের পর সেখানেই তাঁহাকে সমাধিস্থ করা হয়। বর্তমানে সেখানে একটি সমাধি-মন্দির নির্মিত হইয়াছে এবং ঐ মন্দিরকে কেন্দ্র করিয়া একটি আশ্রমও প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে, তাঁহার পূত জন্মস্থান ডিঙ্গামানিকে এবং কলিকাতার উপকণ্ঠে যাদবপুরে আরও তিনটি আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়।*
সঙ্ঘবদ্ধ প্রচার দূরের কথা, নিজের সম্বন্ধে সাধারণভাবে কোন প্রচারও তিনি পছন্দ করিতেন না। তিনি বলিতেন যে, আচরণই প্রকৃষ্ট প্রচার, এতদ্ভিন্ন অন্য উপায়ে প্রচারের চেষ্টা করিলেই, জ্ঞাতসারেই হউক বা অজ্ঞাতসারেই হউক, সত্যের সঙ্গে কিছু কিছু মিথ্যা আসিয়া জোটে এবং প্রচারের নামে অপপ্রচারই হইয়া থাকে। আমার বিডন স্ট্রীটের বাসায় একদিন রাত্রিতে ঠাকুরের নিকট আমি ও প্রভাতবাবু (ঠাকুরের একনিষ্ঠ সেবক; ইনি আমার আবাল্য সুহৃদ, সহাধ্যায়ী ও সহকর্মী ছিলেন; অকালমৃত্যুর কিঞ্চিদধিক এক বৎসর পূর্ব্বে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের আশুতোষ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন) বসিয়াছিলেন, আর কেহই ছিল না। প্রভাতবাবু একখানা খাতা ও একটি পেনসিল হাতে লইয়া ঠাকুরকে বলিলেনঃ “আপনি আপনার জীবনের ঘটনাগুলি পর পর বলিয়া যান, আমি লিখিয়া লই। পরে লেখাগুলির ভিত্তিতে আপনার একখানা পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচনা করা আর কষ্টসাধ্য হইবে না।” কিন্তু ঠাকুর সম্মত হইলেন না, ঐ এক কথাই বলিলেন, লিখিতে গেলেই সত্যে মিথ্যায় জোট বাঁধিয়া যাইবে। তথাপি কেন যে আজ তাঁহার কথা লিখিতে যাইতেছি, তাহার একটা কৈফিয়ৎ পূর্ব্বেই দিয়াছি, কিন্তু ঠাকুরের কাছে কি জবাব দিব জানি না।
* পাহাড়তলী ও যাদবপুরে শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম এবং ডিঙামানিকে শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণ সেবা মন্দির।