প্রত্যূষেই ট্রেন, সুতরাং তাড়াতাড়ি শয্যাত্যাগ করিয়া, কোন প্রকারে একটু মুখ হাত ধুইয়া ঠাকুরের নিকটে আসিয়া দেখিলাম যে, তিনি ইতিমধ্যে প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া রহিয়াছেন। আমার স্ত্রীও আসিয়া ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া গেলেন।ঠাকুর উঠিয়া দাঁড়াইলেন এবং আমিও তাঁহাকে প্রণাম করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলাম।প্রায় দুই মিনিট তিনি এক অপূর্ব্ব স্নেহ-দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাইয়া রহিলেন, পরে হঠাৎ, “সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে রথং স্থাপয় মে অচ্যুত’ গীতার এই পঙক্তিটি উদ্ধৃত করিয়া ইহার তাৎপর্য্য ব্যাখ্যা করিতে লাগিলেন। অতি সহজ কথা, অর্জ্জুন বলিলেনঃ ‘হে অচ্যুত, উভয় পক্ষের সেনাদলের মধ্যস্থলে আমার রথ স্থাপন কর।” আপাতদৃষ্টিতে এই কথাটির অন্তরালে যে বাস্তবিকই তাৎপর্য্যমূলক কিছু আছে, এরূপ মনে হয় না। ঠাকুর কিন্তু বলিলেন যে, গীতার একটা প্রধান কথাই এই পঙক্তিটির মধ্যে লুক্কায়িত রহিয়াছে। তাঁহার সকল কথা আমার স্মরণ নাই কিন্তু মূল কথাটি বেশ স্পষ্টই মনে আছে।ঠাকুর বলিয়াছিলেন যে, মধ্যস্থ বা নিরপেক্ষ ক্ষেত্র হইতেই গীতার উৎপত্তি এবং নিরপেক্ষ হইতে না পারিলে গীতার মর্ম্মার্থ বুঝিতে পারা যায় না। এই জন্যই বক্তা এবং শ্রোতা উভয় পক্ষের মধ্যস্থলে, অর্থাৎ নিরপেক্ষ ক্ষেত্রে নিজেদের স্থাপনা করিলেন।
রামার্পণমস্তু