যে মহা পবিত্র স্থানে শ্রীশ্রীঠাকুর জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন সেই বাড়ীরই পূর্ব্বাংশে বহির্ব্বাটীতে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। প্রথমতঃ একখানা টালির ছাউনির ঘরে শ্রীশ্রীঠাকুরের অনুমতি লইয়া এই আশ্রম ১৩৪৯ সনের আষার মাসে গুরুপূর্নিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ভক্তেরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে নির্মাণ করেন, উঁচু, সুন্দর একটা মন্দির আর সেই সঙ্গে আরো কয়েকটা বাড়ি। এই মন্দিরের পশ্চিমদিকে নতুন একটা বাড়ি নির্মাণ করে, তার একটা ঘরে ঠাকুরের যমজ ভাই শ্রীশ্রী লক্ষণের আলোকচিত্র রেখে তার পূজার ব্যবস্থা করা হয়। শ্রীশ্রী লক্ষণ ঠাকুরও ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী এক আধ্যাত্মিক ও মরমী সাধক। আটান্ন বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।
শ্রীশ্রীঠাকুরের সেবা মন্দিরের ঠিক উত্তর দিকে একটি প্রকান্ড জলাশয় আছে। জলাশয়ের পশ্চিম পাড়ে অত্যন্ত পুরানো একটা দোতলা বাড়ি। এই বাড়ির ছাদের ওপরের একটা ঘরে শ্রীশ্রীলক্ষ্মীনারায়ণের বিগ্রহ পূজো করা হোত। শ্রীশ্রীঠাকুর এই শ্রীশ্রীলক্ষ্মীনারায়ণের মন্দিরে বসে ধ্যান করিতেন। ঐ শ্রীশ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহ তাঁহাদের ভিতর বাড়ীর বড় ঘরের পুর্ব্বাংশে নিয়মিতভাবে পূজিত হইতেছে। উক্ত বহির্ব্বাটীর প্রাঙ্গনের উত্তরের ভিটাতে দুর্গামন্ডপ ও দক্ষিনের ভিটাতে বৈঠকখানা অবস্থিত। ঐ দুর্গামন্ডপের পূর্ব্ব দিকে লক্ষণ ঠাকুরের রোপিত একটি সুন্দর তমাল বৃক্ষ এখনও বর্তমান আছে। ঐ বৃক্ষের তলাতেই প্রতি বত্সর শারদীয়া দুর্গোত্সবের বোধন হইয়া থাকে, ঐ বাড়ীর উত্তর অংশে নানা ফলের বাগান বহির্ব্বাটীর প্রকান্ড জলাশয়ের উত্তর পাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ আছে। ঐ জলাশয়ের দক্ষিন পাড় দিয়া প্রশস্ত রাস্তা পূর্ব্বদিকের বিস্তীর্ণ মাঠ পর্য্যন্ত চলিয়া গিয়াছে। যেখানে বাড়ীর দরজার রাস্তা শেষ হইয়াছে তাহার উত্তর পার্শ্বে সামান্য উঁচু জায়গায় একটি বহু শাখা বিশিষ্ট প্রকান্ড অতি সুন্দর অশোক বৃক্ষ ঐ স্থানটিকে ঢাকিয়া অতি মনোরম নিভৃত ধ্যানের স্থানে পরিণত করিয়াছে। ঐ স্থানে গেলেই আপনা হইতে মন ধীর স্থির ভাবাপন্ন হইতে থাকে। ঐ স্থানেই বসেই শ্রীশ্রীঠাকুরের পিতা ঁরাধামাধব বিদ্যালঙ্কার মহাশয় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ঐ স্থানে প্রতি বত্সর শ্মশান কালীর পূজা হইতো। বর্তমানে সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির প্রতিষ্ঠার উত্সবের দিন ঐ শ্মশান কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই মন্দিরের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। তাঁরা এখানে প্রসাদও গ্রহণ করেন। চেরাগ আলি নামে একজন মুসলিম ভক্ত ছিলেন ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্তদের মধ্যে অন্যতম। সেই গ্রামে তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে একটা ঘরে ঠাকুরের পট বসিয়ে নিত্য পূজা করেছিলেন। তাঁর ছেলে ও ছোট ভাইও শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ভক্ত ছিলেন। আজও তাঁর পরিবারবর্গ ঘরটি রক্ষা করে চলেছেন।
ডিঙ্গামানিক, শরীয়তপুর শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ এর সেবা মন্দির মানচিত্র নিম্নে দেওয়া হলো –