(১) লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যবশে প্রকৃতির তারতম্য অনুসারে এই মরুভূমে অস্থায়ী বস্তুর প্রলোভনে আকৃষ্ট হইয়া দেহ গেহ সমাজের দ্বারা সুখী দু:খী ইত্যাদি বিদ্যা বুদ্ধি লাভ করিয়া ঐ প্রকৃতির গুণের দ্বারা পরিচালিত হইয়া থাকে। একেই কর্ম্মভোগ বলিয়া জানিবেন। এই ভোগই ভাগ্য অনুসারে হয়। এই ভোগদান করিলেই শান্তি পদ উপভোগের অধিকারী হয়…..মন হইতেই সুখ দুঃখ ভোগ হয়। এই জন্যই পতিসেবার মহত্ত্ব নিয়োগ বিধান করিয়া স্বভাবেই দাসত্ব সেবা হইয়া থাকে। মনের দরকার হয় না। সকর প্রাণীর সত্যরুপ আত্মা একই হয়,ভিন্ন কেহই নয়,দেহই অবয়বই পৃথক পৃথক দেখা যায়।
(২) ভগবানের নামই সত্য,নামই শান্তি,নামই আনন্দ,নামেই আশ্রয় লইলে অপ্রাপ্ত কিছুই থাকে না,কোথাও তীর্থে যাইতে হয় না। বেদপুরাণগত সুখ-দুঃখও থাকে না। সর্ব্বদা আনন্দ প্রকাশ করিয়া অহেতু ভক্তি নামের রুচি প্রদান করিয়া থাকেন। কর্ত্তাভিমানীর কর্ম্মাদির দ্বারা যাহা কিছু সুখ দু:খাদি লাভ হয তাহা সকলি অস্থায়ী,ভগবৎ পদ দিতে পারে না। অতএব সর্ব্বদা নাম করিবেন,মনের শান্তি অশান্তির দিকে লোভ রাখিবেন না,নামেই আপনাকে এই সুখ দুঃখ সংসারের তরঙ্গ হইতে উদ্ধার করিবেন।
(৩) এই সংসার মায়ামুগ্ধ বশত: বাসনা জালে চরাচর ঘুরিয়া বেড়াইতে হয়। প্রয়োজন বিষয় জানিতে না দিয়া কেবল অনিত্য অভাবেরই সৃষ্টি করিয়া ফেলে। মনে যাহা ভাল বোধ করে তাহাই করিয়া থাকে। তজ্জন্য হিতাহিত বর্জ্জিত হইয়া কেবল বাসনায় বদ্ধ হয়,সংসার ক্ষয় যায় না। কেবল জন্ম মৃত্যুর দন্ড লাভ করে।
(৪) ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্রং। ভাগ্যই ফল দেয়,ফল দিবার অধিকার ত্রিজগতে [আর] কাহারো নাই। ভাগ্যবশে যাহার যাহা পাওনা দেনা রহিয়াছে তাহা যথাসময় ঘটিবেই। দৃঢ় বিশ্বাস থাকিলে জীবের দুরবস্থা ঘটে না। …জগতই চিত্রপট ছায়াস্বরুপ। হৃদয়ে যদি চিত্রপট থাকে তবে তাহা নষ্ট হয় কি? সত্যকে কেহই ছেদন ভেদন অবকুন্ঠন করিতে পারে না। তিনি- ”অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ। নিত্য: সর্ব্বগত: স্থাণুরচলোহয়ং সনাতন:। । ” ….চিত্রপট সঙ্গেই থাকে, বিচ্ছেদ হয় না জানিবেন।
(৫) ভগবানের দাসত্ব লাভের জন্য নামে শরণ নিয়া পড়িয়া থাকুন,মনের দাস হইতে নাই। যেহেতু মন বুদ্ধি,প্রকৃতির গুণের জাত,এই মন বুদ্ধি হইতে সুখ দুঃখময় অনিত্য অস্থায়ী ক্ষোভকর শক্তি সঞ্চারিত থাকে। প্রারব্ধ দন্ড ক্ষয় করিতে পারে না বলিয়াই রুচি অরুচি দ্বারায় নানান বিশৃঙখলা ঘটাইয়া নানান উপাধীগ্রস্ত লাভ করিয়া ব্যাধিময় হয়। অতএব সর্ব্বদা নাম নিয়া নামের দাস হইয়া থাকিবেন,নামেই আপনাকে কালে উদ্ধার করিয়া,যেমন কুরুকুলের তরঙ্গ হইতে পাণ্ডবগণ এবং হিরণ্যকশিপুর তরঙ্গ হইতে প্রহলাদকে উদ্ধার করিয়াছিল,যেরুপ সীতাদেবীকে মায়ামৃগ হইতে রাবণের শাসন হইয়া উদ্ধার করিয়াছিল সেইরুপ নামে আপনাকে উদ্ধার [করিয়া] লইবে। যেই নাম সেই ভগবান। ভগবৎ সমীপে প্রকৃতির প্রারব্ধ কোন প্রকাশের শক্তি নাই। প্রাক্তন শক্তি কেবল গুণের জাত বুদ্ধি মনের উপরই দেহেতে সম্বন্ধ করিয়া চালিত করিয়া থাকে,নামের নিকট যাইতে পারে না। ……এ জগতে যত কিছু আয়-ব্যয় এবং লাভ লোকসান,পাওয়া না পাওয়া সকলি প্রাক্তন (ভাগ্যফল) জানিবেন। সর্ব্বদা নাম করিয়া নামের কার্য্য করিয়া যাইবেন। প্রাক্তণে (ভাগ্যে) যাহা ঘটিবে সহ্য করিয়া লইতে চেষ্টা করিবেন।
(৬) ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্রং। ভাগ্যানুসারে জীবের গতাগতি হয় বলিয়াই ত্রিলোকের সুখ দুঃখ দ্বারা দন্ডিত হয়। তার জন্য হর্ষ মর্ষ না করিয়া ভোগ ত্যাগের জন্য ধৈর্য্যের বরণ করিয়া সত্যনারায়ণের সেবা করিতে হয়। অতএব সর্ব্ব অবস্থায় সত্যের অধীনে থাকিতে চেষ্টা করিবেন। সিন্নি দিয়া সত্যনারায়ণের সেবা করে। সিন্নিকে ভাগ করা বলে। ভালমন্দ,সুখদুঃখ,জন্মমৃত্যু,হাসিকান্না এই যে দ্বন্দ্ব বিভাগ,অভিমানের অহঙ্কার হইতে উৎপন্ন হয়। ইহার ভাগ ত্যাগ করিলে সিন্নি দিয়া সত্যের পূজা হয়। তাহার সাক্ষী সতী হরগৌরী,অবিচ্ছেদ সত্যবানকে উদ্ধার;কালদন্ডের হাত হইতে অবিযোগ সত্যবানকে প্রাপ্ত হইয়া পিতৃকুল (ধর্ম্ম) পতিকুল (কর্ম্ম,সেবা) পুত্রকুল (পবিত্র,শুচি) উদ্ধার করিয়াছিলেন। জগতে যাহা কিছু ব্যবহার করি সকলি গতাসু,অস্থায়ী,সুখদুঃখপ্রদ। যমদন্ড,কালদন্ড,ব্রহ্মদন্ডের ধর তাহার দ্বারায় দন্ডিত হইয়া থাকে। হাসিকান্নার উপাধি ধারণ করি,ত্রিলোকের ঋণ-পাশে বন্দী হইয়া সত্যকে ভুলিয়া যাই। এই দন্ড মুক্তের জন্যই শুদ্ধভক্তি অর্থ্যাৎ অনুগত সত্যের (খাঁটি বস্তুর) অধীন হইয়া থাকিতে চেষ্টা করার নামই সাধন সাধ্য বলিয়া দেবজ্ঞগণ জানাইয়াছেন। অতএব সত্যনারায়ণের ব্রত করিয়া সর্ব্ব বন্ধন মুক্ত করুন।
(৭) ভগবানের নাম আর তার রুপ একই বস্তু জানিয়া কেবল নাম নিয়া পড়িয়া থাকিবেন। ভগবান উদ্ধার করিয়া নিবেন। ……….সর্ব্বদা নাম করিবেন,নামেতে সকলি আছে জানিবেন। কর্ত্তৃত্ব দ্বারা যাহা কিছু সুখ দুঃখ হয় তাহা নিত্য নয়,কেবল পরিবর্ত্তনশীল,ঐ সকল সুখের দু:খের জন্য প্রলোভিত না হইয়া সর্ব্বদা নাম মুগ্ধার প্রলোভন রাখিতে চেষ্টা করিবেন। নামই সত্য,দেহ যতদিন থাকিবে ততদিনই প্রাক্তনের আধিপত্য,তারপর ভগবানের নিকট প্রারব্ধের কোন ক্ষমতা থাকে না।
(৮) প্রারব্ধের বন্ধনেই দেহে থাকিয়া দেহী সুখ দু:খাদি উপভোগ করিয়া থাকে। দেহমুক্ত হইলেই প্রাক্তন ভোগ মুক্ত হইয়া যায়। চিন্তা ভাবনা সকল মনের চঞ্চলতা মাত্র। নাম করিতে করিতে দেহমুক্ত হইতে পারে,তখন মন থাকে না। মনস্থির অভ্যাসের দ্বারা হইয়া থাকে। ঐ নামের অভ্যাস অর্থ্যাৎ সর্ব্বদা সকল অবস্থায়ই নামকে উচ্চারণ করিতে করিতে এবং নাম বৈ আর বেশী এই জগতে কিছুই পবিত্র এবং শান্তি নাই ইহা ভাবিতে ভাবিতে নামে অনুরাগ জন্মে। এই অনুরাগের দ্বারা অবিচ্ছেদ নাম যোগে [স্থিতিলাভ হয়]।
(৯) যেখানে নাম সর্ব্বদা থাকে সেখানে ভগবান বাস করেন,যেখানে ভগবান থাকেন সেখানেই ব্রজভূম,আবরণ শূন্য বৃন্ধাবন মহারাসের স্থল,কর্ত্তৃত্ব অভিমানে জানিবার ক্ষমতা থাকে না। অতএব নামের শরণ নিয়া থাকিলেই ভগবানের নিকট থাকা হয়,ভগবানের নিকট থাকিলে বিচ্ছেদ হয় না। বাসনাজালই মায়ামৃগ। কামনা ছাড়িয়া সর্ব্বদা নাম করিবেন। নাম বৈ আর কিছুই নাই জানিয়া অবিচ্ছেদ ভগবানের ভগবানের নিকট লাভ হয়।
(১০) অদৃষ্ট চক্রের দ্বারায় জীবের গতাগিততে লাভ এবং লোকসান হইতে সুখের দু:খের তরঙ্গে নানাবিধভাবে আনন্দ লাভের জন্য নানান উপায় অবলম্বন করিতে যায়। যায় বটে কিন্তু ভাগ্যের ফল যাহা নির্দ্দেশ আছে তাহার অতিরিক্ত কিছু দিতে পারে না। অতএব সর্ব্বদাই অদৃষ্টে যাহা থাকে তাহার ভোগের জন্য ব্যস্ততা না রাখিয়া কেবল নাম করিতে থাকিবে। নাম আর ভগবান একই নাম আর ভগবান যদি এক হয় তবে নামকে ধরিয়া থাকিলেই তদ্বারা আনন্দ লাভ করিতে পারে। …ভাগ্যফলে যাহা করিবে তাহাই লাভ মানিয়া সংসারে যাবতীয় কর্ম্ম করিতে চেষ্টা রাখা উচিত। ভগবান যাহা করিবেন তাহাতে আর কোন প্রয়োজন না করিয়া সর্ব্বদা নাম করিয়া যাইবেন,নামেই সকল অবস্থার আবরণ হইতে উদ্ধার করিবেন,সন্দেহ নাই। মনের দ্বারা যাহা নির্দ্দেশ করা যায় তাহা কেবল ক্ষণভঙ্গুর সীমাবদ্ধ মাত্র,অস্থায়ী পদার্থ কিন্তু ভগবানের নাম নিত্য স্থায়ী পদার্থ,অতএব নামের সঙ্গে থাকিতে সুখ দুঃখ যাহা হউক না,নাম নিয়া পড়িয়া থাকাই উচিত। নাম বৈ আর কিছুই নাই। সংসারের উপায় অনুপায় ভাগ্যই,তার শান্তি চেষ্টা করিবেন। চেষ্টা করিতে করিতে নিত্য পদার্থ গোচরে পড়িয়া যাইবে। ভাগ্যানুসারে জীবের আয় ব্যয় শক্তি প্রাপ্ত হইয়া যায়,ভাগ্যের অতিরিক্ত কিছুই পায় না। নাম বলিতে গেলেই সত্য অর্থ্যাৎ খাটী বস্তুকে বুঝায়। নামই সত্য,নামকে ধরিয়া থাকিলে স্বধর্ম্ম হইয়া থাকে।
(১১) (ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র) ভাগ্যকে মান্য [?] করিলে সর্ব্বশক্তিমান ভগবৎপদ ছাড়া হয় না। কারন প্রানরুপে সকল জীবের নিকটেই আছে,দূরে থাকে না। তাঁকে ভুলিয়া মনের অধীনে হইয়া পাশ বন্ধনে ঘুরিতে থাকে। সত্যকে না পাইয়া অস্থায়ী অসত্যরুপে আটকাইয়া পড়ে,সত্য যে সঙ্গে সঙ্গেই আছে তাহা জানিতে পারে না। অতএব প্রাণের অধীনে থাকিতে চেষ্টা করুন। প্রাণই শান্তিভবন,মনই অশান্তির আলয় জানিবেন।
(১২) এই ত্রিলোকের মধ্যে [?] এমন কোন জীব নাই যে স্ব স্ব ভাগ্যফল ছাড়িতে পারে। ভাগ্যই ফলদাতা। ভাগ্যেই শরীর;গৃহ,সমাজ,দেশ,শত্রু,মিত্র,রোগ-শোকাদি ভাগ্যফলের ফল জানিবেন। অতএব ভাগ্যে যাহা যখন ঘটে তাহার বেগ সহ্য করিয়া সত্যেরই আশ্রয়ে থাকিতে চেষ্টা করিবেন। সত্যনারায়নই এ ভবদেহ বন্ধন মুক্ত করিয়া বিদেহ করে [?] যাহাকে গৌরী অর্থ্যাৎ পবিত্র বলিয়া থাকে তাহাই পায়। এখানে সকলি আনন্দময় বলিয়া আনন্দকানন বলে। মনের,কি কোন দেহের ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা কেহই সত্যের গোচর হইতে পারে না।
(১৩) ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বদা। অতএব ভাগ্যকে মানিয়া ভাগ্যের অধীন হইয়া চলিলে সকলই সৌভাগ্যশালী হইতে পারে।
(১৪) কর্ত্তা হইয়া সত্যকে ছাড়িয়া অসত্য অর্থ্যাৎ অস্থায়ী প্রকৃতির তারতম্য দ্বারা দেহ গেহ (সংকরের) [?] অংশে পড়িয়া বিদ্যাবুদ্ধি ধনজন বৈভবাদি স্ব স্ব ভাগ্য ভোগ করিয়া থাকে। সেই প্রকৃতির গুণের দ্বারা পরিবর্ত্তনশীল বুদ্ধিতে শান্তি অশান্তি লাভ করিয়া জন্ম- মৃত্যু এড়াইতে পারে না। এই জন্যই নাম করিতে হয়। অর্থ্যাৎ নামের দাস অভিমান যখন হয় তখন নাম পায়। কারণ কর্ত্তাভিমান অহংকারের অধীন হইয়া নামকে ভুলিয়া যায়। অস্থায়ী অসত্যের বন্ধন হইয়া পড়ে,সত্যকে জানিতে পারে না।
(১৫) ভাগ্য হইতেই সকল ভোগ মুক্ত করিয়া পরমানন্দময় অভাবশূন্য সত্যপীরের স্থানে প্রাপ্ত দিবেন। …… ভবিতব্যই সকল বিবাহের কর্ত্তা। তাহা ছাড়া আর কাহারও কোন কর্ত্তত্ব নাই জানিবেন।
(১৬) কর্ত্তৃত্বাভিমানীয় ভোগ আয়তনী দেহ,প্রকৃতির তারতম্য গঠিত।
(১৭) নাম প্রাণে করে। ঘুমাইলে জীবের নাম হয়,সেই নাম জাগরণে বিলুপ্ত হইয়া বহু অংশে নানা আখ্যা ধারণ করিয়া নানান রুপ রসে আকৃষ্ট থাকায় নাম যে সর্ব্বদা হয় তাহা জানিতে না পারিয়া প্রকৃতির গুণের দ্বারায় মন বুদ্ধির বৈগুণ্যতা দ্বারা নানান বাসনা করিয়া বন্দী হইয়া পড়ে। তাতেই নানান উপাধি মন্ডিত হইয়া ভাগ্যবশে সুখদূ:খ জন্মমৃত্যু এড়াইতে পারে না। অতএব ধৈর্য্য ধরিয়া প্রাণের নিকট থাকিবেন,তবেই নাম শুনিতে পারিবেন।
(১৮) নামকে সংকীর্ত্তন বলে। অষ্টপ্রহরকে অষ্টকাল,অষ্টযাম,অষ্টপাশ বলিয়া জানিবেন। নামে অষ্টাপাশাদি সকল মুক্তহয়। মানুষ সকলি মানুষ,মানুষের কোন দোষ নাই। মানুষ শব্দই জ্ঞানী বুঝায়। ভাগ্যানুসারে প্রকৃতির গুণের বিকাশ হয়,তাহাতেই ভালমন্দ সৎ অসৎ উপলব্ধি হয়। অতএব অষ্টপ্রহর নাম করিতে কাপড়াদি উপকরণ কিছুই লাগে না। কেবল নামের অধীনস্থ জ্ঞান জন্মিলেই নামের সেবক হয়। নামই সত্য,নামের দাস সেই সত্যই লাভ করিয়া থাকে। নামেই উদ্ধার করে। মনেরও কোন দরকার হয় না। মন প্রকৃতির গুণের দ্বারায় প্রকাশ হয়,মনেই শান্তি অশান্তি বোধ হয়। ঘুমাইলে কেহই থাকে না।
(১৯) সদানন্দময় শ্বাস প্রশ্বাসের দ্বারা অবিচ্ছেদ নাম হইতেছে। তাঁহার সহচরী হইয়া নামামৃত পান করুন। কর্ত্তৃত্ব করিয়া যে যাহা করিয়া থাকে তাহাকে দক্ষযজ্ঞ বলিয়া জানিবেন। প্রাণই ঈশ্বর (সত্য), তিনিহি শক্তি জানিবেন। ইহার ক্ষয় হয় না (অক্ষয়) জানিবেন। প্রকৃতির গুণের তরঙ্গযোগে লোকে ইহাকে না জানিয়া স্বয়ং অনিত্য অভাবের কর্ত্তা হইয়া লাভ -লোকসানের দ্বারা সুখ দু:খাদি নানান অবস্থার উপভোগ করিয়াথাকে। জন্ম -মৃত্যু এড়াইতে পারে না।
(২০) ভাগ্যই ফলদাতা,অতএব ভাগ্যকে মানিতে না পারিলেই জন্ম-মৃত্যু জরার কবলকে ছাড়িতে পারে না। সত্যনারায়ণের ভাগ নাই,তার সেবকের কোন অভাব নাই জানিবেন। লোক সকল অহংকারের সেবা করিয়া বন্দী হয়। সত্যকে জানিতে দেয় না। মনের দ্বারা শাসিত হইয়া থাকে। অতএব সর্ব্বদা সত্যের অধীন হইতে চেষ্টা করিবেন। কর্ত্তা অভিমান ত্যাগ হইলে ত্রিজগতের ঋণমুক্ত হইয়া থাকে। কাহারো কোন দোষ নাই জানিবেন,সকলই ভাগ্য হইতে হয়।
(২১) ভাগ্য অনুসারে জীবের সঙ্করে ফলাফল ভোগ করে। অতএব সত্যকে স্মরণ করিয়া সত্য নিয়া থাকিতে বিশেষরুপে চেষ্টা করিবা।
(২২) স্ব স্ব ভাগ্যবশে প্রকৃতির তারতম্য যোগে কাল অকাল গতির দ্বারা ত্রিলোকের জীবগণ সকলকেই ভোগ করিয়া থাকেন। ইহার ফলদাতা একমাত্র ভগবান অধিকারী,অন্য কাহারও কোন অধিকার নাই জানিবেন। অএব কাল বশেই সকল জগতের বিষমত্ব হইয়া থাকে,কাহারো কোন দোষ নাই। এই ভাগ (বন্টন) হইতে মুক্ত করিতে একমাত্র সত্যই শক্তিমান। অতএব সত্যের আশ্রয়ে থাকিতে সর্ব্বদা চেষ্টা করিবেন।
(২৩) ভগবৎ ভক্ত ”বিদুর” সর্ব্বদাই নিকটে থাকে,দূরে যায় না। লগ্নপতির প্রাপ্ত ভাগ বহন করিয়া কুল সঞ্চয় করে,কোন বিভেদ দরিদ্রতা তাহাকে আক্রমণ করিতে সমর্থ হয় না। পুরুষার্থপতিও ঐ লগ্নপতির ফলাফল সুখদুঃখময় ভবসাগরের তরঙ্গ ভেদের শক্তি পায় না। তাহার কারণ স্ব স্ব ক্ষেত্রভাগের ভোগই বহন করিতে হয়। ভগবানের সুধা সমূদ্র পাঠ করিয়া জ্ঞানীগণ বুঝিতে পারেন না,তাঁহারাও মায়া -মোহের অধীন অতিক্রম করিতে পারেন না,তাহার কারণও লগ্নপতির ভাগ্য। …. বিদুরের ঘরেও ক্ষুদ্রকুড়া গ্রহন করেন,পুরুষার্থ পতির ঘরে অমৃতন্নকে তুচ্ছ করেন। ….অনন্যমনা শব্দ বুঝিতে [?] দ্বিরুপ জ্ঞানের অভাবকেই বুঝায়,যোগকেও অবিচ্ছেদ বুঝায়,যদি বিয়োগ না হয় তবে বোধশক্তি কি করিয়া হয়। জ্ঞানী বলে কাকে,যে জ্ঞানের অধীনে থাকে। জ্ঞানী ও তাঁহার অবিচ্ছেদের কারণ দ্বিপ্রকার অনুভূতি থাকে না। এ ছাড়া যাহা কিচু [সবই] বিয়োগ। জ্ঞানীই কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া থাকে। যজ্ঞ শেষ করে,দেনা-পাওনা হইতে নিস্কৃতি পায়,কারণ দ্বিতীয় বোধ থাকে না। “যো মাং পশ্যতি সর্ব্বত্র সর্ব্বং চ ময়ি পশ্যতি। ” বিচ্ছেদ হয় না,সুতরাং সুখ- দুঃখও থাকিতে পারে না। ইহাই জ্ঞানী “যোগীনামপি সর্ব্বেষাং মদগতেনাস্তরাত্মনা”। বিচ্ছেদও নাই,অনুভূতিও নাই। ভোগীগণই অনুভতির খন্ড ভোক্তা হয়। ভিন্ন ভিন্ন ভাবের তরঙ্গ উপলব্ধি করিয়া থাকেন। কাম শব্দটা – কামনা সীমাবদ্ধ,যারে বাসনা বলে,জ্ঞানীর সেই ব্যসন থাকে না। কারণ সত্য আর কিছুই বুঝে না। “অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনা: পর্য্যুপাসতে। তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহং। ” সত্যনারায়ণ সর্ব্বত্র সমভাবে পূর্ণরুপে অক্ষর স্বরুপ বিরাজ করিতেছেন। তাঁহাকে ভুলিয়া জীব সকল কর্ত্তাভিমানে পড়িয়া হাবুডুবু খায়। বিচার করিতে করিতে,বাদ দিতে দিতে ইহার দর্শন হয়। তাকেই কর্ম্মক্ষেত্রের কর্ম্ম বলে। ইহা ছাড়া যে সকল কর্ম্ম,তাহাই আকাম। আকামের দ্বারা যাহা বোধ হয় তাহাই অদৃষ্ট (ভাগ্য) বলিয়া থাকে। জ্ঞান অর্থ্যাৎ বেদ,ইহা উদ্ধার হইলেই এই জগতের দেনাপাওয়া সকল ঋণমুক্ত হইয়া যমদ্ধার ভেদ করিয়া সত্যলোক প্রাপ্ত হয়। সত্যকেই নিত্য বলে। “যদগত্বা ন নিবর্ত্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম “…. নাম শব্দটি চিন্তামণি,ধ্যানের শ্রেষ্ট,যাহা লাভ হইলে বিচ্ছেদ হয় না।
(২৪) বলং বলং বাহুবলম সত্যং ধর্ম্মং পরম বলম। ………..কর্ম্মপাশ প্রবেশের শক্তি জীবের আছে কিন্তু বহির্গমনের শক্তি নাই। ভাগ্য আশ্রয় করিয়া থাকিলে ভগীরথের ন্যায় গঙ্গা অবতরণ করিয়া সগর বংশ উদ্ধার করিতে পারে।
(২৫) লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যানুসারে মনের দ্বারা প্রকৃতিতে আকৃষ্ট হইয়া ভাগ্যফল ভোগ করিয়া থাকে। এই ভাগ্যের ফলদাতা একমাত্র ভগবানই হন,অন্য কাহারও কোন অধিকার নাই। অতএব কর্ত্তৃত্ব ত্যাগ করিয়া প্রহলাদের ন্যায় অদ্বৈত ভাবে সত্যনারায়ণের সেবা করুন। সাবিত্রী যেমন সত্যবানকে কাল হইতে মুক্ত করিয়াছিল সেইরুপে আপনিও মনের দাসত্ব শৃঙখলা কাটিয়া নিত্যরুপ সত্যকে পাইবেন।
(২৬) সত্য= স্থায়ী (অক্ষর), অসত্য=অস্থায়ী (ক্ষর) উপাধিতে আকৃষ্ট হইয়া লোক সমস্ত প্রকৃতিগত মন হইতে এই দ্বন্দ্ববিভাগের দাস হইয়া,জন্ম-মৃত্যু-জরার দ্বারা বন্দী হইয়া সত্যপদ যিনি গুণাতীত পরম ব্রহ্ম,যাঁহার জন্ম-মৃত্যু-জরা নাই,তাঁহাকে ভুলিয়া যায়। অতএব সর্ব্বদা সত্যের ব্রত করিবেন। তিনি সর্ব্বকলুষময় ঋণদায় হইতে উদ্ধার করিয়া নিবেন। যাহা হউক স্ব স্ব অধিকারের দাবী দাওয়া না করিয়া সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য পালনে যত্নশীল হউন।
(২৭) স্ব স্ব ভাগ্যের অংশের অধীন হইয়া থাকিতে থাকিতে নিশ্চল অখন্ড লাভ করিতে পারে। তখন মন বুদ্ধি অহংকারাদির উৎপাত সকলি দূর হইয়া যায়,বিচ্ছেদ হয় না। অতএব নিজ নিজ দাবী না করিয়া কর্ত্তব্য সম্বন্ধে সচেতন হইলেই সত্যের সেবা অধিকার জন্মে। সংকর রাজ্য মনের দ্বারাই পাইয়া থাকে,সেই মনেই নানা ভাবে প্রকৃতিগুণের বশবর্ত্তী হইয়া নানাবিধরুপ ক্রোধ লোভের দ্বারা বহু… অর্থ্যাৎ বন্ধন উৎপন্ন করিয়া এই সুখ-দুঃখময় সংকরে গতাগতি করাইয়া দেহীকে হয়রাণ করাইয়া রাখে,স্থির বুদ্ধির অভাব জন্মায়। দেহের মধ্যে যে অংশে দেহী থাকে সেই অংশটি অখন্ড। মন যাহাতে থাকে তাহা খন্ড খন্ড বহু খন্ড জানিবেন। “ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। ”
(২৮) সত্যনারায়ণের সেবায় ত্রিলোকের সমস্ত ঋণ পরিশোধন হইয়া থাকে। অঋণস্থ হইলে পরিগ্রহশূণ্য হয়,অপ্রবাসী হইয়া অবিয়োগ সত্যকে লাভ করিয়া থাকে। শুদ্ধ ভক্তিই সত্যনারায়ন,সংশয়নাই।
(২৯) স্কুল-কলেজে পাস-ফেল হয় তাহা ভাগ্যানুগত,এই সকল পাস-ফেলে সত্যের সহচর হইতে পারে না। চৈত্র মাস পাস করিতে পারিলে জন্মমৃত্যুরুপ কালের অধিকার তাকে না। ভাগ্যানুসারে লোকে দেহ,দেশ,বিদ্যা,জ্ঞান,ধর্ম্ম,অধর্ম্ম পাইয়া থাকে,তাহা কেবল সমুদ্রের তরঙ্গের ন্যায় উর্দ্ধ অধগতি,কূল পায় না। ভাগ্যগতিকেই কেহ সুখী [কেহ] দু:খী হয়। সত্যদেবের ভাগ নাই,সুখ-দুঃখও থাকে না।
(৩০) ভাগ্যই ফল প্রসব করিয়া থাকেন। সত্যনারায়নের ভাগ নাই,তাঁহান লয়ক্ষয়হীন ঐশ্বর্য্যে পূর্ণ,লোকের কর্ত্তাভিমান পরিহারের দ্বারাই সত্যের সেবা সম্ভব হয়। সত্যং পরম্ ধীমহি (শ্রুতি-বাক্য)……..সত্যের দাসকে যমের কোন অধিকার নাই।
(৩১) ভাগ্যই সকল ফলদাতা,কেবল মাত্র কর্ম্মই জীবের অধিকার। ভাগ্যকে ছাড়িয়া ভুলবশত: প্রার্থনার সঞ্চার হইয়া থাকে। সত্যনারায়ণই জীবের জন্ম-মৃত্যু জরাবদ্ধ হইতে মুক্তি করিতে সমর্থ। সত্যনারায়ণের সেবা করিবেন।
(৩২) অন্নপূর্ণা কুটীরে কোনরুপ অভাব থাকিতে পারে না। ব্যাস কোটে সকলি অভাব জানিবেন।
(৩৩) কালচক্রের ভ্রমণ ছাড়া স্থিরতা ণাই। সত্যের কোনও কম্প নাই,সর্ব্বদাই স্থির। অসত্যের পূরণ হয় না,অযোগ অভাব নানান উপসর্গ উৎপাদন করিয়া থাকে। অতএব সত্যের আশ্রয়ে থাকিতে সর্ব্বদা চেষ্টার অভ্যাস করিবেন।
(৩৪) স্ব স্ব ভাগ্যফল সকলকেই ভোগ করিতে হয়। অতএব ভাগ্যকে মানিতে হয়। স্ব স্ব ভাগ্য হইতে লোকে ফললাভ করিয়া থাকে জানিবেন।
(৩৫) এই জগতে পর কেহ নাই। অহঙ্কার বশেই আপন-পর বলিয়া মনে হয়।
(৩৬) এই ভঙ্গিল সংকরে পড়িয়া,সত্যের সেবা ভুলিয়া গিয়া,অস্থায়ী ভাগ্যের কর্ত্তা হইয়া,কালদন্ডে দন্ডিত হইয়া বাসনাজালে আকৃষ্ট হয় কিন্তু ভাগ্যের ফল যাহা তাহার অতিরিক্ত কিছুই পায় না,অতএব ভাগ্যই ফলদাতা জানিবেন। ) (সত্যং পরম ধীমহি), শ্রুতিবাক্য। সত্যের সেবকের জন্ম-মৃত্যু-জরাব্যাধি বন্ধন থাকে না। ভাগ্যের চিন্তা না করিয়া সত্যের অধীন [হইয়া] তাহারই চিন্তা ব্যস্ত হউন।
(৩৭) (ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র) এই ভাগ্য হইতেই ভোগ উৎপন্ন হয়,ভোগ হইতে ফল হইয়া থাকে। এই ভোগ অনুসারে লোকের দেহগেহ,জাতিমান,বিদ্যাবুদ্ধি,ধনজন বৈভবাদি লাভ করিয়া তাকে। অতএব ভোগদানই সর্ব্বতোভাবে বীরের কর্ত্তব্য জানিবেন।
(৩৮) (ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বদা) এই ভাগ্যযুক্ত হইতে সত্যের কোলে সাবিত্রীর ন্যায় ত্রিলোক পবিত্র হইয়া থাকে। একেই সাবিত্রীত্রিসন্ধ্যাবলে। এই ত্রিসন্ধ্যাই ব্রাহ্মণ উপাধিলাভ সত্যব্রত সাধনসাধ্য প্রাপ্ত হয় জানিবেন। শান্তিপদ সত্যময়ের নিকটেই থাকে। ভগবান ঐশ্বর্য্যপুর্ণ। তিনিই সত্যময় অর্থ্যাৎ অখন্ডভাবে থাকেন;তিনিই সাবিত্রী,অন্নপূর্ণা পূর্ণমাসী উপাধি লোকের দ্বারা পরিব্যাপ্ত।
(৩৯) অন্নপূর্ণাকে কিছুতেই কেহ ক্ষয় করিতে পারেনা। কর্ত্তৃত্ববুদ্ধির কোনরুপ জয় হইতে পারে না। অতএব সর্ব্বদা অন্নপূর্ণার দাস হইয়া থাকুন। লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যানুসারে সুখ দু:খাদির উপভোগ করিয়া এই জগতে শত্রু-মিত্রাদি শুভ-অশুভ কারণ জালে আটক পড়িয়া লাঞ্চনা পাইয়া থাকে। অতএব সর্ব্বদা ভাগ্য অন্নপূর্ণার নিকট রাখিয়া নিষ্কন্টক পদ সতোর আশ্রয় লাভ করুন,যাহার আশ্রয় ভুলিয়া লোকে নানারুপ সুখদুঃখ,শুভাশুভ বন্ধনে পড়িয়া উর্দ্ধ অধোগতিতে ভ্রমণচক্রে ঘুরিয়া পড়ে। এই চক্র হইতে এক মুক্তির উপয় হইতেছে সত্যব্রতের দাস অভিমান অর্থ্যাৎ অন্নপূর্ণার স্থান,যেখানে বিশ্বনাথ থাকেন।
(৪০) বাসনাই বন্ধনের হেতু। বাসনা হইতেই সত্য শক্তি ভুলিয়া কত্তৃত্বাভিযোগে অস্থায়ীর দ্বারা প্রকৃতির গুনের বিবৃতি হইয়া সত্য বস্তুকে স্মরন করিতে পারেনা। অতএব সর্ব্বদা অন্নপূর্ণার সেবক হইয়া সকল বাসনা জঞ্জাল হইতে উন্মুক্ত হউন।
(৪১) ভাগ্যরুপে ভগবান। তাঁহার বিধানে চলিতে পারিলে সগরবংশ উদ্ধার হইয়া থাকে,অতএব ভাগ্যকে মানিতে হয়। পূর্ব্বপারে ব্যাস কাশী,পশ্চিমপার অন্নপূর্ণার স্থান জানিবেন পশ্চিম পারেই পান্ডব বসতি করিয়া থাকে,পূর্ব্ব পার পান্ডব বর্জ্জন করিয়া থাকেন জানিবেন। সত্য আশ্রয়কেই অন্নপূর্ণা জানিবেন। কত্তৃত্বাভিমানেই পূর্ব্ব পারে আটকাইয়া পড়ে জানিবেন।
(৪২) সত্যনারায়ন ভুলিয়া,এই সংকরের কালের গারদে আটক পড়িয়া,কর্ত্তাভিমানে অভিভূত হইয়া সত্যকে ভুলিয়া যায়। প্রকৃতির তারতম্যযোগে গুনের দ্বারায় চঞ্চল হইয়া,কিংকর্ত্তব্যবিমুঢ় হইয়া,আটক পড়িয়া লোক সকল পাশবদ্ধ হইয়া পড়ে। এই বদ্ধদেহ ভোগ আয়তনীর সহচর ঘুচাইতে না পারিয়া দিবা রাত্র জন্ম মৃত্যুর সহচর হইয়া বন্দী হইয়া শান্তি অশান্তির ভোগে মুগ্ধা হয়। দেহ ত্যাগ করিতে পারে না। …..ভাগ্যানুসারে লোকের দেহ,গেহ,সমাজাদি লাভ করিয়া থাকে। তা ছাড়া আর কাহারো ভোগমুক্তের অধিকার নাই।
(৪৩) অন্নপূর্ণা জননীরুপে গণেশচ্ছত্র প্রচারে এই জগৎকে আনন্দ ও অন্নদান করিতেছে। কর্ত্তৃত্বাভিমান দ্বারা বিভক্ত হইয়া সত্যরুপা যিনি অমৃতময়ী তাঁহাকে দেখিতে পায়না। তিনি কল্যানময়ী,মঙ্গলমযী,আনন্দময়ী বলিয়া জানিবেন। সংকরের রাজ্যে যাহা কিছু কর্ত্তৃত্ব উপভোগ করিয়া থাকে তাহা সকলি অভাব অযোগ অক্ষম বলিয়া জানিবেন।
(৪৪) সতং পরম ধীমহি,সত্যই পরম পদার্থ বলিয়া জানিবেন।
(৪৫) ভাগ্য ফলদাতা,ভাগ্যকে মানিয়া চলিতে চলিতে সকল দায় মুক্ত হইয়া পরমানন্দ লাভ করিয়া থাকে ভাগ্যের বেশী প্রয়োজনে বন্ধ হইয়া অন্নপূর্ণা বিশ্বনাথকে আটকাইয়া রাখে। অতএব ভাগ্যের রথে চলিলে ভগীরথ উপাধি হইয়া সগরবংশ উদ্ধার করিতে সক্ষম হইতে পারে।
(৪৬) সত্যং পরম ধীমহি;সত্যই স্থায়ী,অসত্য অস্থায়ী জানিবেন।
(৪৭) মাতৃকোল অন্নপূর্ণা রুপে ত্রিলোকের অন্নবিধান করিতেছেন। তাঁহান সেবক কখনো কোন অভাবে পড়িতে পারেনা জানিবেন। ঘুমাইলে কর্ত্তত্ব থাকেনা,কোনও অভাবও থাকেনা। সেই রুপ সত্য পদের দাসের কোন অভাবই থাকিতে পারেনা জানিবেন। কত্তৃত্ব হয় যখন,তখন মন হয়,বুদ্ধি প্রভতি সকলেই কর্ত্তাকে নানান ভাগে ভাগ করিয়া,লাঞ্চনা করিয়া শান্তি অশান্তি রুপের সৃষ্টি করিয়া তোলে।
(৪৮) ভাগ্য হইতেই লোকের ভোগ জুটিয়া থাকে। ভাগ্য রুপে অন্নপূর্ণা বিরাজমান জানিবেন। সত্যং পরম ধীমহি। তাঁহান কোন অংশ না থাকাতেই বেদে পুরানে অন্নপূর্ণা মাসী বলিয়া আশির্বাদ মন্ডিত করিয়াছেন। অতএব ভাগ্যই ভগবান। অন্নপূর্ণা মায়ের কোলে থাকিবেন,তিনি সর্ব্বময় এবং সর্ব্বনিয়ন্তা বিধাত্রী জানিবেন।
(৪৯) সত্যনারায়নকে ভুলিবেন না। তাঁহান কৃপায় এই মরভূম হইতে জীবের মুক্তি হইয়া থাকে। ভাগ্যানুসারে জীব দেহ,গেহ সমাজ পাইয়া থাকে। কর্ম্মেরই অধিকার,জীবের ফলের অধিকার নাই। ফলদাতা সত্য জানিবেন।
(৫০) ভবিতব্যই ফলদাতা জানিবেন। সত্যনারায়নণের সেবা ভুলিবেন না। সকল অবস্থায় তিনি জীবের মিত্র সহচর। তাঁহাকে ভুলিয়া জীবগণ সঙ্কটে পড়িয়া,অহংকর্ত্তা সাজিয়া,মনের সঙ্গে যোগাযোগে ভ্রমন করিয়া নানান কলুষত্ব [?] হইয়া থাকে। সত্য সেবাই ধর্ম্ম,সত্যসেবাই কর্ম্ম,সত্যই সহায়,সত্যই সম্পদ,সত্যই জ্ঞান,বিদ্যা,শান্তি জানিবেন।
(৫১) ভাগ্য হইতেই লোকে ফল লাভ করিয়া থাকে। অতএব মনের দ্বারা লোকে শুভাশুভ বোধ করিয়া থাকে। তজ্জন্য চিন্তা না করিয়া অন্নপূর্ণার অধীনে থাকিতে চেষ্টা করুন।
(৫২) ভাগ্যই ফলদাতা,ভাগ্য হইতেই সকল ভোগবিলাস বিবর্তন হইয়া থাকে। ইহাকেই সত্যনারায়ন বলে। অতএব সত্যনারায়ণের ভাগে থাকিলে সর্ব্বমঙ্গলা পূর্ণ করেন জানিবেন। সত্যব্রতই সকল ধর্ম্মের সার। সত্য ছাড়া অসত্যের আকরথাকে না।
(৫৩) সাবিত্রীব্রতকেই ত্রিসন্ধ্যান্বিত ব্রাহ্মন বলিয়া জানিবেন। যজ্ঞ,দান,তপস্যাকেই কর্ম্ম বলে। এই কর্ম্মের ফল না থাকা হেতু যজ্ঞ শেষ করিয়া বেদ উদ্ধার করিয়া জগৎ বন্ধন মুক্ত করিয়া লয়। এই অবস্থাকেই সত্যব্রত বলিয়া জানিবেন।
(৫৪) লোকসকল স্ব স্ব ভাগ্যফল লাভ করিয়া থাকে। ভাগ্যের অতিরিক্ত কেহই কিছু পাইতে পারেনা। (ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র)।
(৫৫) ভাগ্যকে মনে করিয়া ভাগ্যরথে চলিলে নিত্যধাম [পায়] যেখানে যাইয়া জীব সকল জন্মমৃত্যু হীন [অবস্থা] অবিচ্ছেদ রুপে পাইয়া থাকে। এখানে যাহার যে ভাগ্য সেই ভাগ্যর বেশী কেহ কিছু লাভ করিতে পারেনা। অতএব ভাগ্যই ফলদাতা জানিবেন। ভাগ্যের সঙ্গে থাকিলে ভগীরথী শক্তিতে এই দিন রাত্র যে কালচক্রে চলিতেছে তাহা মুক্ত হইয়া যায়।
(৫৬) ভাগ্যকে মান্য করিয়া ভাগ্যরথে চলিলে ভগীরথ উপাধি হয়। এই উপাধিই সগর বংশ অর্থ্যাৎ লোকের ভাগ্য ভোগ মুক্ত করিয়া থাকেন।
(৫৭) ”সত্যং পরম ধীমহি। ” ফলশ্রুতি প্রলোভনে সঙ্কর্ষণ করিয়া সীমা,অস্থায়ী সুখের কবলে আটকাইয়া ফেলে,সত্যবস্তুকে বুঝিতে দেয় না। স্বভাবত:ই [?] প্রকৃতি তাহাকে ত্রিগুণের তারতম্য করিয়া ছিন্ন ভিন্ন অর্থ্যাৎ ভাগ,ভাগের ভাগী করিয়া নানাবিধ ভোগ উৎপন্ন করে। ইহাই ”আসুরী” (অস্থায়ী) “দৈবী” সম্পদ (স্থায়ী),এই দুটি বলিয়া মুনিগন হইতে ব্যক্ত হইয়াছে। আপনার সৌভাগ্য হেতু ঐ পক্ষে দুটিতে বিবাদ করিতেছেন। পরিণাম স্থায়ী “দৈবী” সম্পদই জয়যুক্ত করিয়া থাকে। অতএব আপনি শুভ সম্পদ লাভের জন্য ধৈর্য্যশীল হউন। ভগবান আপনার মঙ্গল করিবেন। সংকরের ঋণ মুক্ত না হইলে এই মরভূম জন্ম-মৃত্যু ত্যাগ হয় না বলিয়াই দৈবী সম্পদের বর্ত্তমান ক্রীড়া খেলা হইতেছে। অঋণ হইলেই অপ্রকাশ হয়,স্বক্ষেত্রে যোগ হয়,বিয়োগ হয় না।
(৫৮) সত্যই পূর্ণ;অসত্য অপূর্ণ,অভাব,প্রবাহমান,স্থিতি নাই। ইহাকেই মরভূম বলে। সত্যকে বাদ দিয়া ত্রিজগতে চৌদ্দ ভুবনের কোন লোকই কোন কার্য্যক্রম হইতে পারে না। আপনি সত্যের জন্য ধৈর্য্যশীল হউন। সত্যই আপনার স্থান জানিবেন। অনন্যচেতা: সততং যো মাং স্মরতি নিত্যশ:, ভগবৎ বেদ। এই বেদই সর্ব্ব ঋণমুক্ত করেন। ঋণমুক্ত হইলেই বিষ্ণুশর্ম্মা,বিষ্ণুপ্রিয়ার উদয় হয়। সকল রকম বন্ধন ছিন্ন করিয়া সত্যময় অখন্ড সত্তার যোগ প্রাপ্ত হয়।
(৫৯) লোকের স্ব স্ব ভাগ্যানুসারে প্রকৃতির গুণ বিকারে পড়িয়া দেহ,গেহ,সমাজ,বিদ্যা-বুদ্ধির সংমিলনে পৌরুষত্ব লাভ করিয়া থাকে,সেই পৌরুষত্ব প্রকৃতির গুণে অজ্ঞানবশত: অহংকারের ঘেরায় আটকাইয়া সত্যকে জানিতে পারে না বলিয়াই সে দেহের ও বিদ্যার গৌরব পাইয়া,সত্য ভুলিয়া,স্বয়ং কর্ত্তা হইয়া মনের (মাত্রা) দ্বারা শাসিত হইয়া এই জগতে জন্ম-মৃত্যুকে আশ্রয় করিয়া থাকে। মাহত্মাগণ মৃত্যু (কাল) হইতে ত্রাণের জন্য প্রকৃতি গুণের বেগ ধৈর্য্য ধরিয়া সত্যের সেবায় আপন গুণাদি সকল দিয়া সত্যের অধীন হইয়া থাকিতে অভ্যাস করে।
(৬০) লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যবশে সত্যধর্ম্মকে ভুলিয়া কর্ত্তা হইয়া নানান হেয়ালী চরিত্র লাভ করিয়া শুচি-অশুচিতে ডুবাডুবি খেলে। আপন বন্ধনতত্ত্ব জানিতে না পারিয়া কারাগারে আটক হইয়া মূঢ়তাজালে সুখীর আসন সংগ্রহ করিয়া থাকে। সত্যনারায়ণ ছাড়া কেহই কাহাকে সিংঙ্গার দিতে পারে না। অতএব সত্যের দাসত্ব লাভ করিয়া বদ্ধঋণজাল মুক্ত হইয়া কালের ঘেরা জন্ম-মৃত্যু জ্বালা-যন্ত্রণা হইতে উদ্ধার হইতে পারে।
(৬১) বিদ্যা সকল অবিদ্যায় আচ্ছন্ন,বিদ্যার গৌরব মলিন। সত্যের মলিনত্ব নাই,নীর্ম্মল। আমি কর্ত্তৃত্বাভিমানে যাহা পাই তাহা ভাগ্যেল ফলে অসম্পূর্ণই হয়। সত্যনারায়ণের ভাগ্য থাকে না,ফলাফলও থাকে না। তাহাকে প্রাপ্ত বলে অর্থ্যাৎ প্রসাদ বলে। তাহা ক্ষণমপিও ইন্দ্রিয় হইতে বিয়োগ হয় না। চাইতে গিয়াই তাহাকে হারাইয়াছি। সত্যকে পাইতেছি না। ভাগ্য ভগবান,তিনি খন্ড যুগে অখন্ডভাবে পূর্ণ,আমি খন্ড খন্ডাংশ ভাবে খন্ডিত। অতএব আমি অভাব।
(৬২) কর্ত্তা হইয়া নাম করিতে গেলে প্রারব্ধজনিত গুণগ্রাম নানা উৎপাত করিয়া থাকে। গুণ হইতে যাহা যাহা শরীরের কন্টক ইন্দ্রিয় প্রকৃতির মনের আধিপত্য করিতে থাকে,তাহার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করিয়া এই কৈবল্য বই আর কিছুই নাই এই যে ভাব-জ্ঞান,ইহাকেই ভক্তি,শ্রদ্ধা,প্রীতি এবং নাম করা বলে।
(৬৩) ইন্দ্রিয়াদি প্রকৃতির গুণের পরিচালনার বেগ একটু সহ্য করিতে অভ্যাস করিলে সেই গুণ পীড়নের হ্রাস হইয়া নিত্য আনন্দের বৃদ্ধি করে। অতএব মনের বেগ এবং বুদ্ধির বেগ ও শরীরের বেগ,যখন যাহা উৎপন্ন হয়,তখনই একটু বেগ ধৈর্য্য ধরিয়া প্রানের গতিকে রোধ করিলে হৃদয়ে মনের স্থির অবস্থা কপলের [?] যোগে স্থিরহইয়া থাকে। এই রকম সর্ব্বদা করিতে করিতে মন নিত্যধামে প্রতিষ্ঠা হইয়া যায়। আপন সুখের জন্য সেই সকল কর্ম্ম অধিষ্ঠান আসুরিক ভাব। ইহা সকলই ত্রিগুণের বিবাদ মাত্র জানিবে। অতএব মনের সুখের ক্রিয়ার জন্য সততই সহিষ্ণুতার দ্বারা ধৈর্য্য ধরিতে চেষ্টা করিবে।
(৬৪) নাম সংকীর্ত্তন যে চেঁচাইয়া করিলেই হয় তাহা নহে। মনে মনে করিলেও নাম হয়। নাম বৈ আর কিছুই জগতে ত্রাণের উপায় নাই। এই বুদ্ধিকেই নাম সংকীর্ত্তন বলে,নামের অধীন থাকার নামই সংকীর্ত্তন।
(৬৫) প্রারব্ধ ভোগের শক্তিতে গুণদ্বারা জীবে পরিচালনা ঘটিয়া থাকে। ভগবান নির্গুণ;তাঁহার যত আবরণ তাহাই প্রকৃতি। আমার দরিদ্র সংসার,এই সংসারে ভূতগণের নৃত্য ও অবস্থিতি। ইহাদের কাহারও কাহার সহিত মিত্রতা নাই,কেবল উড়িয়া চলে। কপালের দোষ গুণের আবরণ ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। ভাগ্য অদৃষ্ট বরাতে যাহা যাহা উপস্থিত করে তাহাই সংস্রবে থাকিয়া ঝগড়া করে। সে যাহা হউক,বিবাহ করার উদ্দেশ্যে কি?শরীরের স্নিগ্ধ বস্তু ক্ষয় করিবার জন্য নয়। সংসারে পিতামাতাকে পালন করা পুত্রের স্বধর্ম্ম। যে কোন রকমে যে যে প্রাক্তনের ভোগের সাহায্য করা যায় তাহাই পুত্রের কর্ম্ম,কর্ত্তব্য। আপন সুখেরজন্যনয়। জপ বলে সংখ্যাকে। সংখ্যা বলে নির্দ্দেশ করাকে। যে কোন বিষয়ে অদ্বৈতভাবে নির্দ্দেশ করিয়া থাকা যায় তাহারই নাম জপ। নাম বলে চিন্তাকে। নাম আর ধ্যান একই ভাব। যে কোন ভাবকে লক্ষ্য রাখিয়া তাহার চিন্তাই পুন: পুন: ঘুরিয়া ঘুরিয়া সর্ব্বদা চিন্তায় বিচরণ করে,তাহাকে নাম , জপ, ধ্যান ও গুরু বলে। যেই নাম সেই কৃষ্ণ ভজ নিষ্ঠা করি। নামের সহিত ফিরেন আপনি শ্রীহরি। আপনার বিদুরত্বভাব দূর করিতে কর্ত্তা ছাড়িয়া অদৃষ্ট করে। ভোগের দাস হইতে চেষ্টা করিয়া ভোগ শেষ হইলে রুচি আপনা হইতেই হইবে। অদৃষ্টে যেমন যেমন হইবে তাহা কে ছাড়াইতে পারে। ভগবান কাহারও অদৃষ্টের ভোগ নষ্ট করিতে পারেন না। এক নামেই পারে। নামই সত্য। কর্ত্তা হইয়া নাম করিলে নামের ফল শুকাইয়া যায়।
(৬৬) নাম সত্য,নাম মুক্ত,নাম ধর্ম্মসার। নাম বই সংসারে কিছু নাহি আর। । ভগবান এবং নাম একই রুপ!নামই ঈশ্বর;নামই জগতকে নানা ভাবে মায়ার (ভুলের) মদ্বারা বিভক্ত করিয়া আপন পর ভাবে দ্বন্ধ উপস্থিতে ত্রাণের জন্য পিপাসা বৃদ্ধি করিয়া লয়। অতএব সর্ব্বদা অনন্যচিন্তারুপ নাম হৃদয়ে অঙ্কন করিয়া নির্ব্বিঘ্ন চিত্তে অর্থ্যাৎ (উপায় অন্বেষণ বর্জ্জিত অবস্থায়) [থাকিতে চেষ্টা করিতে হয়। ]সর্ব্বদা জাগ্রত এক নামই আছে,আর কিছুই নাই।
(৬৭) এই কর্ম্মক্ষেত্রের কর্ম্ম সর্ব্বধর্ম্ম সার জানিবেন। বেদবিধির আচরণে ভগবৎপ্রীতির বাধক হইয়া থাকে। স্বভাবের সহচরই ভগবান। অভাব সহচর ভগবানের মায়া হইয়া থাকে।
(৬৮) মনেই সীমাবদ্ধ করিয়া সত্যের সঙ্গের বিয়োগ ঘটায়। ঘুমাইলে মন থাকে না,তখন সত্যের যোগ-বিয়োগ হয় না,ইহাই শান্তি। সর্ব্বদা সত্যেরই অনুসরণ করিতে চেষ্টা করিবেন। তিনি এই জন্ম-মৃত্যুরুপ মরভূমি হইতে উদ্ধার করিয়া লইবেন।
(৬৯) স্বীয় প্রকৃতির অংশে পরিতৃপ্ত থাকিতে পারিলে ভাগ্যফল মুক্ত হইয়া অবিযোগ সত্যকে পাইয়া থাকে।
(৭০) মনের দ্বারা জীবের সুখ-দু:খের ভাগ হইয়া থাকে। প্রাণের দ্বারা ঐ সুখ-দুঃখ ভাগের অতীত হইয়া সকল ঋণ পরিশোধ করিয়া সত্যের নিকট রাখিয়া থাকে,ইহার বন্টন নাই। ভাগ্যানুযায়ী জীবের জন্ম-মৃত্যু হয়। ভাগ মুক্ত হইলে জন্ম-মৃত্যু থাকে না। সর্ব্বদা নামের নিকট থাকিবেন,নামই উদ্ধার করিয়া লইবে।
(৭১) মনের স্বভাব প্রকৃতির গুণাবর্ত্তনে পড়িয়া চঞ্চল হইয়াই জীবরুপ উপাধি হয়। মনের সঙ্গে না থাকিতে চেষ্টা করিয়া সত্যবানের অধীনে থাকিতে চেষ্টা করিবেন। ইহাই সাবিত্রী ব্রত বলিয়া জানিবেন। কালের হাত হইতে উদ্ধার করিয়া ব্রজবাসী হইয়া অবিচ্ছেদ যোগ লাভ হয়। এখানে মন থাকে না,মঞ্জুরী হয়। বুদ্ধি থাকে না,চিন্ময় হয়। প্রাণ থাকে না,আনন্দময় হয়। কেবল মাত্র ধর্ম্মই থাকে। এই ভাবকেই যোগ বলে,বিয়োগ থাকেনা।
(৭২) স্ব স্ব ভাগ্যই ফলদাতা। তিনি যাহা করিবেন তাহার খন্ডন করিতে কাহারও কোন শক্তি নাই। সত্যনারায়ণের অধীনে সত্যের সেবক হইয়া এই কালচক্রের ভাগ্যভোগ ত্যাগ করিতে চেষ্টা রাখিবেন। তাঁহান দাসকে কালের কোনও অধিকার নাই। ইহাকেই সত্যপদ ধীমহি বলিয়া শ্রুতিগণ [?] বলিয়া থাকেন।
(৭৩) স্ব স্ব ভাগ্যবশে যাহাকে প্রারব্ধ বলিয়া বিজ্ঞ ঋষিগণ বলিয়া থাকেন তাহাকে পরিহার করিবার একমাত্র সত্যের সেবা ছাড়া কেহই পারে না। ভাগ্যবশে লোক সকল প্রকৃতির সংযোগে সঙ্কর [?] হইয়া দেহ, গেহ, সমাজ, দেশ, বিদ্যাবুদ্ধি, ধনী মানী আয়ুর সীমা পাইয়া থাকে। ক্রমেই প্রকৃতির গুণের বিকৃতি হইয়া পরিচালিত হয়,তাহাতেই লোকে ভয় আশঙ্কা বিশঙ্কা প্রভৃতি নানান উপদ্রবের অধীনে আবৃত হইয়া থাকে। কিন্তু কেহই তাহাকে অতিক্রম করিবার শক্তি পায় না। ……. দেহটা লোকের ক্ষয়শীল। যাহা কিছু অবয়ব বিশিষ্ট রুপলাবণ্য দৃষ্ট পদার্থ লোকে অনুভব করিয়া থাকেন,তাহা সকলি ক্ষয়শীল। এই দ্বারা জীব সকল বন্দী হইয়া কালচক্রে অবিরল ভ্রমণ করিতেছে,স্থিতি নাই। এই দেহই লোকের জন্ম-মৃত্যুর আকর বলিয়া জানিবেন। এই দেহসকলের মধ্যে যিনি দেহী তাঁহান ক্ষয় নাই। তিনি অক্ষয়,তাঁহান শক্তি দ্বারায়াই দেহবদ্ধ জীবের সকল ভাগ্যের ভাগ্যানুসারে স্ব স্ব শক্তি লাভ করিয়া থাকেন। সেই ভাগ্য যতটুকু যিনি পান তিনি ততটুকুই শক্তিলাভ করিয়া থাকেন,বেশী পাইতে পারেন না।
(৭৪) সাধনে ভাবিবে যাহা,সিদ্ধ দেহে পায় তাহা। যে যাহা চিন্তা করে দেহান্তে তাহাই পাইয়া থাকে।
(৭৫) ”যেই নাম সেই কৃষ্ণ”। নাম চিন্তামণি,নামের মধ্যেই সমস্ত আছে। সেবা শব্দটিই সর্ব্বদা নামের নিকট থাকা,নামের বাধক যাহা তাহার বেগ সহ্য করিতে অভ্যাস করা,একেই নাম করা বলে। এই প্রকার নামের যত্ন করিতে করিতে নামকে প্রাপ্ত হইয়া থাকে।
(৭৬) ভাগ্য অনুসারে লোকের প্রাপ্ত অপ্রাপ্ত ঘটিয়া থাকে। সত্যং পরম ধীমহি। ”মন: করোতি পাপানি,মনো লিপ্যতে পাতকৈ:। । ” মন হইতেই সুখ-দুঃখ জন্ম-মৃত্যু,দেবদানবও ভোগে লিপ্ত হইয়া থাকে। ঘুমাইলে মন থাকে না। তখন যে তাকে সেই ভগবান বলিয়া জ্ঞানী নির্বাচন করিয়া দিয়াছেন। তিনিই ত্রিলোকের পালক ধারক জানিবেন।
(৭৭) জীবগণের মধ্যে কাহারো কর্ত্তৃত্বাধীনে নাই যে তাহারা ইচ্ছা করিয়া কেহ কিছু করিতে পারে। সকলেই স্বভাবের গুণ হইতে প্রারব্ধ দ্বারা চালিত হয় বলিয়াই কাহারো কোন দোষ নাই। সকলি সময়সূত্রে হইয়া থাকে।
(৭৮) এই জগতে ভাগ্যফলই জীবের প্রাপ্য। (”যত্র জীব তত্র শিব”, পাশবদ্ধো ভবেজ্জীব:, পাশমুক্ত: সদা শিব:। । কার্য্যং হি কারণং ত্যাক্তা পুনর্ব্বোধে বিশিষ্যতে। । ) সত্যনারায়নকে কোন অবস্থায়ই ভুলিবেন না।
(৭৯) অকর্ত্তৃত্ব ভাবই জীবের মোক্ষ স্বভাব। সংসার মায়াময়,চঞ্চল, ইহাই জীবের শাসন,ইহার দায় মুক্তির জন্যই ভগবৎ শ্রীগুরুশর প্রয়োজন।
(৮০) ”ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্রং”। অদৃষ্টকে বাদ দিয়া চলিতে নাই। যাহা যাহা ভোগের প্রাপ্ত হইবে তাহাতেই সন্তোষ থাকিতে হয়। ভগবান যাহা বিধান করেন মঙ্গলের কারণ,যেহেতু ভগবান মঙ্গলময়। তাঁহান সঙ্গে তাঁহান সেবাই চরম বলিয়া ধারণা করিলে কোন অভাব ঘটে না।
(৮১) সত্যং পরম ধীমহি। সর্ব্বদা নাম করিবেন। নামই চিরকাল অচলা শক্তি দান করেন। নামই সত্য,নাম দিয়া সকল পূজা করিতে হয়। নামই মহামন্ত্র,নাম বই আর কিছুই নাই।
(৮২) এই সংসার আবরণের মুক্তি [?] একমাত্র সত্যব্রত (পতিব্রতা ধর্ম্ম) জগৎ মুক্তির আশ্রয় হইয়া থাকে। ”মন্ত্র মূলম গুরোর্বাক্যম” সকল শাস্ত্রের পবিত্র উপদেশ। নাম মন্ত্ররুপ,একই বস্তু,ভিন্নত্ব কিছুই নয়। প্রহলাদ একমাত্র গুরুর বাক্যকে আশ্রয় করিয়া নির্ব্বিঘ্ন [?] বিশুদ্ধ ভক্তির প্রেম লাভ করিয়াছিল। এই রকম ভাবকেই পতিব্রত বলিয়া থাকে। বাজে কথায় কাল কাটাইতে বাধা নাই কারণ বাজে বস্তুতেও তো ভগবান আশ্রয় ছাড়িতে পারেন না। অতএব সর্ব্বদা গুরুর আশ্রয়ে থাকিবার চেষ্টা করাই ভগবৎ সেবা। বাজে রহস্য কর্ম্মে তো সাধারণ জীব ভাবকে আকর্ষন করিয়াই থাকে,অতএব সর্ব্বদা যাহাতে গুরুর বাক্য পালন করা যায় তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া যথা কর্চ্চন [?] ভোগদণ্ডের মার্জ্জনা করিতে থাকুন। নামে পড়িয়া থাকার নামই ভক্তি। নাম চিন্তামণি অর্থ্যাৎ নাম লইয়া পড়িয়া থাকা। কর্ত্তা অভিমান যতদিন থাকিবে ততদিন নামের উদয় থাকে না।
(৮৩) প্রাক্তনের হাত ছাড়াইয়া নিতে কিছুরই শক্তি নাই। এই প্রাক্তনেই সুখদুঃখ লাভলোকসান,ভালমন্দের প্রতিপোষণ করেন। ভাগ্যে যাহা যখন ঘটিবে তখন তাহার জন্য উতালা হইতে নাই। ….. যখন প্রারব্ধ ভোগের দন্ড মুক্তির কোন উপায় নাই-ই তখন এই চিন্তা ভুলই। নামে পড়িয়া থাকিবেন। (যেই নাম সেই কৃষ্ণ ভজ নিষ্ঠা করি,নামের সহিত ফিরে আপনি শ্রীহরি। । )নাম বৈ আর কিছুই থাকিতে দেখা যায় না। নামই থাকিবে,নামের সঙ্গে থাকিয়া নামের সেবা পরিচর্য্যা করাই ধর্ম্ম।
(৮৪) সর্ব্বদা নাম করিবেন। ভগবান কালেতে সময় ফিরিয়া শুভপদ দিবেন। ভাগ্যগতিকে লোকে নানান রকম উৎপাতে পড়িয়া,নানান লাঞ্চনা ভোগ করিয়া কত কষ্ট পাইয়া থাকে। স্ব স্ব ভাগ্যেই সকল হইয়া থাকে। এই প্রারব্ধ ভোগ মুক্তের জন্য একমাত্র ভগবান নাম বিস্তার করিয়া রাখিয়া দিয়াছেন। সেই নামের বশ হইয়া থাকিতে থাকিতে সকল প্রকার প্রারব্ধ ভোগ কাটিয়া যাইতে পারে। …….কেবল নাম করিবেন,মনের সুখ না হইলেও নাম ভুলিবেন না। নাম বই আর গতি নাই। চেষ্টা যাহা করিতে হয়,চিন্তা যাহা করিতে হইবে প্রারব্ধই করিয়া নিবে,সকল অবস্থার বেগ ধৈর্য্য ধরিতেই চেষ্টা করিতে হইবে।
(৮৫) নাম এবং ভগবান একই। সর্ব্বদা অবিচ্ছিন্ন ভাবে নাম করিতে চেষ্টা করার নামই নাম করা। নামেই নাম মুক্ত করিয়া সর্ব্বানন্দময় শ্রীচরণ প্রাপ্তি দান করেন। নাম করিতে মনের শান্তি অশান্তির কোন প্রয়োজন হয় না। নামই সত্য,নাম শান্তি।
(৮৬) ভগবানের আশ্রিত জনেরা নানাবিধ প্রারব্ধ দন্ড ভোগ স্বীকার লইতেছে। রাম প্রভৃতি মহাপুরুষদের পুরাণীয় উপাখ্যানে প্রকাশ রহিয়াছে। সকলি প্রারব্ধ ভোগের বিরত হয় নাই। ভোগ অন্তে স্বরুপের প্রকাশ পায়। ভোগ থাকিতে বন্ধন যায় না। অতএব সর্ব্বদা নাম করিতে এবং নামের নিকটে থাকিতে চেষ্টা রাখিবেন। নামেই সকল ঋণ শোধ করিয়া নিত্যধামে ধামের শক্তি দান করিবেন,সন্দেহ নাই। সংসার মায়াময়। প্রাক্তন কর্ষণে নির্ম্মল রাতুল পদ ভগবানের নিকট প্রকাশ পায় না। সেই জন্যই ভক্তবৃন্দ প্রাক্তনকে,আলেখ্য রাখিয়া দেহ দেহীর মনের বৃত্তিকে উপেক্ষা করিয়া থাকেন। সর্ব্বদাই নাম করিবেন সকল অবস্থাই গুণ সঙ্কর্ষণে ঘটিয়া থাকে। অদৃষ্টের ফল শরীরে সঙ্গেই আসে এবং যায়। নামকে ত্যাগ করিতে না হয় তাহাই সত্য জানিতে হয়।
(৮৭) সংসারচক্রে মায়ামোহের জড়তায় আত্মবুদ্ধির প্রসাদ আবরণ করিয়া অনিত্য ঝঞ্জাটের দ্বারা বিষয় ভেদ চিন্তায় কলুষিত রাখে। এই জন্যই নামের স্বাদ হইতে বঞ্চিত থাকে। নাম করিতে করিতে সেই কলুষ মার্জ্জিত হইয়া পরম সুখে ভগবানের সেবা করিয়া প্রারব্ধ ঋণ সকল মুক্ত পায়। নাম এবং ভগবান একই জিনিস। নাম সঙ্গ করিলে ভগবানের পরিকর হইয়া থাকে। ভগবানের পরিজন স্বভাবসিদ্ধ সুখ দুঃখ মন্ডিত থাকে। সকলকেই সমান মানিয়া নেয়। ইহাই ভগবানের পরিকর। দক্ষ-যজ্ঞাদির দ্বারা কেবল ফল সুখদুঃখময় থাকিবে। সঙ্গের আবর্ত্তৃনে পড়িয়া দক্ষ-যজ্ঞের অশান্তি ফল যোগ করিয়া লয়। অতএব নাম করিবেন। -তৃপ্তি হউক,আর না হউক। দেহের দ্বারা জীব বন্দী।
(৮৮) ভগবানের নাম করিতে গেলে যদি কর্ত্তাভিমানীরুপে হয় তখন সুখ দুঃখ যাহা ঘটে তাহা ভাগ্যবশত:ই লাভ করিয়া থাকে। এইরুপ যজ্ঞকেই দক্ষযজ্ঞ বলিয়া থাকে। অতএব সর্ব্বদাই দেহের অভিমান যোগে যতদিন থাকিতে হইবে ততদিন শান্তির অশান্তির প্রতীক্ষা না করিয়া কেবল নাম নিয়া পড়িয়া থাকাই কর্ত্তব্য। যেহেতু জীবের কর্ত্তব্য,কর্ত্তৃত্ব নাই। ”ন কর্ত্তৃত্বং ন কর্ম্মাণি লোকস্য সৃজতি প্রভু: ন কর্ম্মফল সংযোগং” ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। জীবের কোন বিষয়েই কর্ত্তৃত্ব নাই। ভাবেও বুঝা যায়। কারণ যদি কর্ত্তৃত্ব ও কর্ম্মফল জীবের হইত তাহলে কোন বিষয়ে মনের অশান্তি আসিত না। সুচারুরুপেই সাধ্য বস্তুর অধিকারী থাকিত। যাহা হউক,নাম নিয়া পড়িয়া থাকই জীবের কর্ত্তব্য। প্রাক্তন দশাতেই সংসারের আয়-ব্যয় ঘটিয়া থাকে। যে কোন প্রকারেই লোকের উপার্জ্জন হউক না কেন সকলই ভাগ্যফল বৈ আর কিছুই না। ভাগ্যে যাহা আছে তাহাই করিয়া যাইতে হয়। পরের ভাগ লইতে নাই। ……..দেহযাত্রার জন্য আয় করিতে হইবে। তন্মধ্যে সদ্ভাবে থাকিয়া করাই উচিত। যাহা ভাল বুঝিবেন করিবেন। সকল প্রাক্তনেই করিয়া লইবে। নাম করিবেন। তাতে সুখ দু:খের দিকে প্রলোভন না রাখিয়াই করা উচিত। কারণ নামের সুখ দুঃখ নাই,অনাবরণ শক্তি,তাহাতে মনের কোন সঙ্কল্প বিকল্প রাখে না। যেমন শ্বাস প্রশ্বাস আপনা আপনিই চলিতেছে,কোনরুপ সঙ্কল্প বিকল্প নাই,সেইরুপ নাম অনবরতইচলিতেছে।
(৮৯) ভগবান ছাড়া এই দেহবিবর হইতে আর কোন পথ নাই। মায়ার আঁচে পড়িয়া দিবারাত্র অহংকার,অভিমানে মুগ্ধ থাকিয়া কেবল অস্থায়ী সুখের জন্য পিপাসা করে। সেই পিপাসায়ই মন এবং বুদ্ধি উৎপন্ন হয়। যখন ভগবানের সান্নিধ্য লাভ হয় তখন মন এবং বুদ্ধি থাকে না। যেই নাম সেই ভগবান। নাম পাইলেই ভগবানেরা পাওয়ার অভাব নাই। গুণ হইতে মায়ার উদ্ভব হয়,সেই মায়াই অভাব। অভাবই সুখ দু:খের পরিচয় দিয়া অসত্যের অনুচর করিয়া দেয়। অতএব নাম যখন পাইয়াছেন তখন যে অবস্থাই হউক না,এই দেহ ত্যাগের পর নিত্যধামে স্থিতি হইবেই নিশ্চয়। ঐশ্বর্য্য নিয়া ব্রজে যাইতে পারে না,ব্রজভূমি কেবল মাধুর্য্যময়। সেখানে সুখ দু:খের রীতি নাই,মন বুদ্ধিরও গতি হয় না। কেবল নাম নিয়া পড়িয়া থাকিবেন। …….পরের সুখের জন্য লোভ করিতে নাই। নামের সুখেরই আহবানকরিবেন।
(৯০) ভগবানের সেবা- পরিচর্য্যাই ধৈর্য্য ধরিয়া নামের নিকট সর্ব্বদা থাকা। যেই নাম সেই ভগবান। যদি নামই ভগবান হইল,তবে যেখানে নাম হয় সেইখানকেই বৃন্দাবন বলিতে হয়। ব্রজবাসীর কোন কর্ম্মে বেদবিধির প্রয়োজন হয় না। ভগবানের নিকট থাকিলে কোন অভাবও হয় না। ভ্রমণবশত: কর্ত্তা হইয়া ভগবানকে ছাড়িয়া অপূর্ণ কামের দ্বারা আবৃত হইয়া নানা উপাধীর সৃষ্টি করিয়া শান্তি ও অশান্তির যোগে পড়িয়া সুখী দু:খী হয়। অতএব সর্ব্বদা নামের আশ্রয় নিয়া সকল কার্য্য যথাসম্ভব করিয়া যাইবেন,মন স্থির হউক আর চঞ্চলই হউক। সুখী না হইলেও নাম করিতে ভুলিবেন না।
(৯১) সংসারের মায়ার টানে পড়িলে শত প্রজ্ঞারও মন বুদ্ধি স্থির থাকিতে পারে না। এই মায়াময় শক্তির দেহে বাস করিতে হইলে,মায়ার যে অবস্থায় যখন যে রকম ভাগ্যফল উৎপন্ন হয়,ধৈর্য্য ধরিয়া তাহার বেগ সতত সহ্য করিয়া যাইবেন। পুত্র কলত্রাদি সংসারে উৎপন্ন হয়,তাহার দ্বারা জীবনকে মোহিত করিয়া কর্ত্তৃত্বভাবে আত্মস্মৃতি ভ্রম জন্মাইয়া বদ্ধ করিয়া রাখে। এই মায়া হইতে মুক্ত হইলে সর্ব্বতোভাবে ভগবানের নামে রুচি হয়। রুচি হইলে অন্য কোনও উৎপাত যতই হউক ভ্রুক্ষেপও থাকে না। নামে রুচি বর্ত্তাইয়া যায়। ইহাই মায়ামুক্ত। ”যেই নাম সেই কৃষ্ণ” নিষ্ঠা করিয়া ভাবিতে ভাবিতে পরমপদ আনন্দময় ভগবান মায়ামুক্ত করাইয়া জীবদ্দশা মুক্তি দেন। এইজন্য কর্ত্তা না হইয়া যখন যে অবস্থা মায়াচক্রের মুখে পড়ুক না কেন তাহা প্রহলাদের ন্যায় সতত সহ্য করিয়া যাইবে। নামে রুচি হউক আর নাই হউক,সুখ হউক আর দুঃখই হউক,অকাতরে দিবানিশি নামের দাস হইয়া থাকিতে হয়। যে শৈশবে ছেলেটি তার মা দুরন্ত হউক আর সুশীলা হউক,যেমন তার মায়ের সঙ্গ ছাড়ে না,সেই রকম নামের প্রতিষ্ঠা করিয়া সেবা করিয়া হয়। অর্থ্যাৎ সর্ব্বদা নামের দাস অভিমান করিয়া নামের দ্বারা আবদ্ধ হইয়া থাকিতে হয়। এই নাম মুক্ত হইলে কোনও অভাব থাকে না। ভগবানের নামই সত্য। কলির আবরণের বন্ধন হইতে উদ্ধার লাভের একমাত্র নামই সম্বল। নামই শক্তির সাধ্য। নাম ভিন্ন এ জগতের মধ্যে সহায় আর কিছুই নাই। বিপদভঞ্জন হরি,তাঁহার শরণে সমস্ত বন্ধন উপদ্রব আদি মুক্ত হইয়া থাকে। অতএব সর্ব্বদা নাম করিবেন। যেই নাম সেই কৃষ্ণ,অভিন্ন নাম ও নামী। নাম করিতে করিতে ভগবান জাগিয়া পড়েন। অভয়দাতা ভগবান শক্তিধাম। তাঁহার আশ্রয় নিলেই পরম শান্তি লাভ হইয়া থাকে। ”অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তা: শরীরিণ:। ”
(৯২) সংসার মায়ামুগ্ধ ভ্রান্তবশত: অসত্যকে অর্থ্যাৎ অস্থায়ী বন্ধুর স্থায়ীত্ব বোধে ক্ষণিক সুখের জন্য অখন্ড সুখকে ছাড়াইয়া কেবল ঘুরাঘুরি করিয়া কেবল মায়াচক্রে গতাগতি পুন: পুন: চালিত হইয়া থাকে। নাম করিয়া যাইবেন। প্রারব্ধ যদিও নাম করিতে রুচি না দেয় তবুও নামকে ছাড়িবেন না। পতিব্রত ধর্ম্মই সত্য। যেই নাম সেই ব্রহ্ম। ব্রহ্মপদ লাভের কার্য্যই শুভ অশুভ কর্ম্ম। সুখের জন্য নাম করা হয় না। তপস্যাই নাম,দু:খেরই ভাজন। নাম করিতে করিতে যখন দু:খের বাঁধন কাটিয়া যাইবে তখন নামে রুচি অমৃতের স্বরুপ আনন্দ হৃদয়ে আসিবে। বিচ্ছেদ হইবে না। ফলাফল ত্যাগ করিয়া নাম করিতে হয়। নাম নিয়া পড়িয়া থাকাই ধর্ম্ম।
(৯৩) সংসার মায়ামুগ্ধ। কেবল ঐহিক সুখেরই পিয়াসী হয়। অনিত্য ক্ষণকাল সুখের জন্য প্রয়াসী হইয়া অনাদিত্য স্থির প্রেমানন্দরসকে পরিত্যাগ করে। ইহা ভ্রম হইতে হইয়া থাকে। এই যে দেহ,এইটি প্রারব্ধ যোগে পরের ঘরের বলিয়া জানিতে হয়। এই মন বুদ্ধি রজগুন চঞ্চলতা হইতে উৎপন্ন হইয়া থাকে,ইহা প্রাণের নয়। সর্ব্বদাই প্রাক্তন ভোগের জন্য মুক্ত হইয়া থাকিতে হয়। ইহকালে সুখদুঃখ,ভালমন্দ,ইহা কেবল মন হইতে বোধ হইয়া থাকে। এই মনের বিষয়গুলিকে ইন্দ্রিয় বলে। ইহারা সীমাবদ্ধ। অতএব মন হইতে যে কিছু আনন্দ ও নিরানন্দ,সুখ-দুঃখ যাহা যাহা অনুভূতি হয়,তাহা কেবল নিশাখোরের নিশার মতই থাকে। স্বভাবের অভাবই মায়া,ভুল জানিবেন। পুনরায় স্বভাবকে পাইতে হইলে মায়ার প্রলোভনকে ধৈর্য্য ধরিয়া যাইতে যাইতে ক্রমশ: প্রাক্তন ভোগ ক্ষয় হয়। প্রাক্তণ ক্ষয় হইলেই কর্ম্মপাশ মুক্ত হয়। কর্ম্মপাশ না থাকিলেই বন্ধন থাকে না। তখন ব্রজবিদেহী লাভ করে। এই ব্রজবিদেহ হইতে ভগবৎ সেবা প্রতিব্রতা শক্তি জাগে’ এই পতিব্রতা উপস্থিত হইলে,অতিন্দ্রিয়াতীত হইয়া থাকে। ইন্দ্রিয়াতীত হইলেই ভগবানে প্রেম হয়। তখন নামে রুচি,জীবে দয়া,বৈষ্ণব সেবা হইয়া থাকে। সেই রসকে পাওয়ার জন্য অকর্ত্তা হইয়া থাকিবে। সর্ব্বদাই নামের সেবা করিবে।
(৯৪) ”ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। ”অজ্ঞানবশত: জীবগণ নানান ভাবের ভাবে মুগ্ধ হইয়া,ঋণপাশে বদ্ধ হইয়া দেনার ভোগে দন্ডিত হয়। অতএব সর্ব্বদা ধৈর্য্যকে আশ্রয় করিয়া সত্যনারায়ণের ব্রত করিতে থাকুন,তিনিই সকল দণ্ড মুক্ত করিয়া নির্দ্বন্দ্বের আশ্রয় করিবেন। চিন্তা ভাবনা না করিয়া উপস্থিত সুখ দুঃখ দাতার বেগ সত্যনারায়ণের নিকট অর্পন করিতে থাকুন,তিনিই অকূল ভবসাগরের তরঙ্গ হইতে উদ্ধার করিয়া নিবেন। তিনি ছাড়া আর কাহারও কোন সাধ্য নাই। ভাগ্যফল মুক্ত করিতে।
(৯৫) চিরকালতো কর্ত্তা অভিমানী সাজিয়া এ পর্য্যন্ত কোন কিছুই পূর্ণ করিতে পারিতেছেন না। তবে কেন এই চেষ্টা। ভাগ্যে যাহা আছে তাহা কেহ নিতে পারে না। ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। সত্যনারায়ণকে ভুলিবেন না। সত্যের কোন অংশ নাই, সকল অবস্থায়ই পূর্ণ। সর্ব্বদাই সত্যের সেবা করিতে অভ্যাস করুন, সত্যই দয়া করিবেন।
(৯৬) সত্যনারায়ণের সেবা করিবেন। তিনি সর্ব্বদা আপনাকে পালন করিবেন,রক্ষা করিবেন। ভাগ্যবশে জীবগণ ভোগদ্বারা আবৃত হয়। ভোগ হইতেই শান্তিঅশান্তি সংগঠন হইয়া থাকে।
(৯৭) জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ,এই ত্রিবিধ কর্ম্ম ভবিতব্য জানিবেন। ইহার সম্পাদন করা জীবের শক্তি নাই। যেখানে যাহার যখন ভাগ্য উৎপন্ন হইবে ঠিক সেই সময়ে সেই ভাবেই তাহা ভোগ করিতে হইবে। কর্ত্তৃত্বদ্বারা লাভ-লোকসানে জীব কষ্ট পাইয়া থাকে। অতএব সর্ব্বদা সর্ব্বতোভাবে সত্যের আশ্রয় নিয়া থাকুন,সত্য হইতেই সমস্ত চিন্তা ভাবনা নিবৃত্তি হইবে। ……চিন্তা ভাবনা রজোগুণের তরঙ্গ মাত্র। ধৈর্য্য নিকেতনে গুণযুক্ত হইয়া নির্গুণ পরমপদ লাভ করিয়া দেহঋণ শোধন হয়। দেনা- পাওনা রাখিয়া এই মায়াদেহ মুক্ত করিতে পরে না।
(৯৮) লোক সকল ভাগ্যকে না মানিয়া,ভাগ্যরথে না চলিয়া নানান উপসর্গ ভোগ করিয়া থাকে। ভাগ্য হইতেই বানা উপাধির বশে আটক পড়িয়া শান্তিঅশান্তির দ্বারা মান অপমান উপভোগ করিয়া থাকে। লোক যখন ঘুমায় তখন শান্তি – অশান্তি প্রভৃতি কেহই থাকে না। অতএব সকলি অহংকারের উৎপন্ন শাসক মাত্র। ……কর্ত্তৃত্ব ছাড়িয়া ভাগ ভোগদান করুন,সত্যকে পাইবেন।
(৯৯) ত্রিলোকের লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যানুসারে দেহ গেহ স্বজন বন্ধুবান্ধবে সংযোজিত হইয়া থাকে। সেই ভাগ্য হইতেই ভবিতব্য দ্বারা মিলন অমিলন ঘটিয়া থাকে। ঐ সকল চিন্তা না করিয়া সকল ভার সত্যের আশ্রয়ে রাখিয়া,ভাগ্যফল দান (ত্যাগ) করিয়া সত্যকে পাবার জন্য উদ্যোগী হউন। ভবিতব্যই বিবাহাদি সংঘটনের কর্ত্তা। তিনি যখন যাহার সম্মিলন করিবেন তখন তাহার ব্যবস্থা হইবে। আপনি তাহার কর্ত্তা হইতে গিয়াই অপার চিন্তায় কষ্ট পাইতেছেন। সম্মিলনেরবাধকই ভবিতব্যজানিবেন।
(১০০) আপনি সর্ব্বদা সর্ব্বতোভাবে সহিষ্ণুতার বরণ করিয়া ভাগ্যফল,যে উর্দ্ধ অধ:গতি স্বরুপ অস্থায়ী,অনিত্য,অভাব,এই সকল ত্যাগ করিয়া অর্থ্যাৎ এদের অধীন না থাকিয়া কেবল সত্যনারায়ণের শরণ লইতে চেষ্টা করুন,অর্থ্যাৎ অভ্যাস করুন,তিনিই আপনাকে সর্ব্বদা শান্তিতে রাখিবেন। দক্ষযজ্ঞ কখন পূর্ণ হয় না,সত্যের অধীনও থাকিতে পারে না। চিরকাল তো কর্ত্তৃত্ব করিয়া আসিতেছেন,কোন কার্য্য সম্পন্ন করিতে পারিয়াছেন?বিচার করিয়া দেখুন,আপনপার ভাগ্যে যাহা আছে তাহাই পাইয়াছেন,তার অতিরিক্ত কিছুই পান নাই। যদি পাইতেন তবে কেন ছেলেদের বিবাহের জন্য এত ব্যস্ত হইতেছেন। যেখানে ভবিতব্য অর্থ্যাৎ যার সঙ্গে যার নির্দ্দেশ আছে সেখানে তার সঙ্গে তার মিলন হইবে। ইহার ব্যতিক্রম করা কোন দেবতার,কি দানব,কি মানবের নাই জানিবেন। সত্যনারায়ণকে কর্ত্তৃত্বটুকু দিয়া তাঁর সহায় হইয়া থাকিতে পারিলেই সকল ঋণ শোধ করিতে পরিবেন,শান্তিও পাইবেন।
(১০১) কর্ত্তৃত্ব অভিমানে কেবল কর্ম্মভোগ ভাগই করে, ঋণ বৃদ্ধি করায়, ঋণ মুক্ত হইতে পারে না বলিয়াই জন্মমৃত্যু উপভোগ করে……..সুখদুঃখ ভাগ্য অনুসারে ঘটে। পিতৃভক্তি ভিন্ম এই ভাগ্য ভোগ ত্যাগ হয় না জানিবেন। মনের বেগ ধৈর্য্য ধরিয়া পিতৃসেবা করিতে হয়। পিতার আশির্ব্বাদে পুত্রের শান্তি হইয়া থাকে।
(১০২) ”পিতা স্বর্গ:, পিতা ধর্ম্ম:, পিতাহি পরমন্তপ: ” এই শ্লোক স্মৃতির বাক্য জানিবেন। ভাগ্যানুসারেই পিতামাতা লোকে লাভ করিয়া এই মরভূমে আকৃষ্ট হইয়া পালিত হয়। সেই পিতার সেবাই নিত্য করণীয় পুত্রের কর্তব্য। জীবিত পিত্রবাক্য পালন করা,পিতার দেহ ত্যাগ হইলে শ্রাদ্ধ কর্ম্ম করা পুত্রের কর্ম্ম। তাহা ছাড়া লোকে কর্ত্তা সাজিয়া নিজের সুখের জন্য যাহা করে তাহা দক্ষযজ্ঞ জানিবেন। এই যজ্ঞ শেষ হয় না,জন্মমৃত্যুও এড়াইতে পারে না,পাপবন্ধনও কাটিতে পারে না,জানিবেন।
(১০৩) কোন চিন্তা করিবে না,কালে সকলি সুফল ফলে। অনন্যচেতা কর্ম্মই জগতে মুক্তকামী। সংসার মায়াময়,নিত্য অনিত্য দ্বন্দ্বে পরিণত। চক্রবৎ পরিক্রম সুখের দু:খের খনি,এই অনিত্যকর,অসুখজনক সংসার হইতে নিষ্কৃতি লাভই ভগবদিচ্ছা। তারই দাস হওয়া ধর্ম্ম।
(১০৪) আপনার করুণা পদ ভগবান বিস্তার করিয়া রাখিয়াছেন।
(১০৫) সত্যব্রতই পরম ধর্ম্ম,অনন্যচিন্তায় সকল অভীষ্ট সিদ্ধ করিয়া দেয়,কোন অভাব রাখে না।
(১০৬) যাহা প্রাক্তনে উপস্থিত করে,যথাযোগ্য ভাবে সর্ব্বদা সহ্য করিয়া থাকিবেন,ইহাই ভগবদ কৃপার স্থান।
(১০৭) প্রারব্ধ সূত্রে দেহে সুখদুঃখ,রোগশোকাদি জড়িত থাকে। এই ভোগের জন্য উদ্বিগ্ন হইলে নিত্যের প্রসাদ উপস্থিত করিতে পারে না। সুতরাং প্রাক্তন বিষয় শরীরে ভোগ লইবে। ভগবৎ দাসত্বই স্বরুপভাবে প্রকাশ করায়। অহংকাাদির দ্বারা ইহ সুখে প্রত্যাশিত হইয়া,আত্মার মর্য্যাদা লঙখন করিয়া জন্ম-মৃত্যুর সুখদু:খাদির আবরণে পতিত হইয়া থাকে,অতএব জীবের ভগবচ্চিন্তায় মগ্ন থাকাই মোক্ষধর্ম্ম। নাম করিতে করিতে শান্তি উপকর্ষণ হইয়া সদানন্দ উপভোগ করিতে পারে।
(১০৮) কোন চিন্তা করিবেন না,সর্ব্বদা ভগবৎ অধীন হইয়া থাকিতে চেষ্টা করিবেন। সংসার মায়াময়,প্রারব্ধ ভোগের অন্ত হইলেই শান্তি হয়। প্রারব্ধ ভোগের জন্য বিচলিত হইতে নাই।
(১০৯) মন যখন যাহা অবলম্বন করে তাহাই অনুভূতি হয়। মন হইতে কেবল মাত্র সুখ আর দুঃখই প্রাপ্ত হয়,কর্ম্মের দ্বারা স্বর্গ আর নরকই স্থান পায়। ভগবানের সেবাই পরম পুরুষার্থ,দ্বৈত বুদ্ধি হইতে উদ্ধার করেন। ….সহিষ্ণুতা বস্তুর আশ্রয় নিয়া যথাসাধ্য তাহার অধীন হইতে চেষ্টা করাই সাধন ভজন। ইন্দ্রিয় অতীন্দ্রিয় হইতে বিভাগ থাকাই সুখ। গুরুর আজ্ঞা ধরিয়া থাকাই ধর্ম্ম,ইহাই নিস্কাম যজ্ঞ,ইহাই হরিনাম এবং ভগবৎ সেবা। এই সেবা নিত্য বলিযাই উদ্ধার শব্দে প্রতিপাদ্য হয়। স্বর্গ আর মুক্তি উভয়ই নরক,কারণ স্বর্গ সুখভোগ,অবসানে পুনরাবর্ত্তে সেই সুখে বঞ্চিত হইয় দু:খী হয়। নরকের দুঃখই তাহার স্বভাব,তাহারও ভোগ অন্তে দুঃখময় সংসারে পড়িতে হয়। অতএব দিবানিশি প্রয়োজনীয় কর্ম্মের জন্য যত্ন করিয়া সাধ্যমত গুরুর বাক্য স্মরণের চেষ্টা করাই উচিত।
(১১০) এই সংসার মায়াময়। মায়ার হাত হইতে ত্রাণের জন্য সর্ব্বদা সত্যের সঙ্গে থাকিয়া শক্তি আহরণ করিতে হয়। সেই শক্তি বলেই সকল লোকেরই বদ্ধ ঋণতাপাদি মুক্ত হইয়া থাকে। ঋণমুক্ত পদ পাইলে পরম শান্তিময় পরমানন্দরস ভগবদ্ভক্তি পূর্ণরুপে অবিচ্ছিন্নভাবে আবরণ করিয়া রাখে। কোন অভাব থাকে না,কামধেনুবৎ জাগ্রত থাকে। অনন্যচেতার কৃপায় এই সম্পদ সাধিত হয়। মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন। এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞার আশ্রয় নিয়া,প্রলোভনের এবং শাসনের অধীন না হইয়া,সর্ব্বতোভাবে অনন্যচেতা হইয়া কর্য্যের অনুষ্ঠান করিতে করিতে সক্ষম শক্তি প্রাপ্ত হয়। তাহাতে কোন সংশয় নাই। নিত্যকর্ম্ম ভূলিতে নাই। লাভ হউক আর না-ই হউক,অল্পই হউক আর বেশীই হউক,সেদিকে লক্ষ্য না নিয়া কেবলমাত্র করিতে থাকিবে। কর্ম্ম করিতে করিতে সৎসঙ্গ করিয়া নিবে। ধর্ম্মই নিত্যব্রত।
(১১১) প্রারব্ধ শক্তির দায়মুক্তির উপায় একমাত্র ধৈর্য্যই জানিতে হয়। সংসার সুখের দু:খের ফল প্রসব একমাত্র প্রারব্ধই জানিবেন। এই প্রাক্তন অদৃষ্টরুপে নানা উপাধি ধারন করিয়া রহিয়াছে। পুরুষকার দ্বারা প্রারব্ধের কিঞ্চিৎ লাঘব হইয়া থাকে বটে কিন্তু দন্ডমুক্তি থাকে না। এই অদৃষ্ট দন্ড [মুক্ত করিতে] একমাত্র ধৈর্য্যই সহায় হয়। ভবিতব্য যখন উদয় হইবে তখন সকলিহইবে।
(১১২) সর্ব্বদা নাম করিবেন,নামকেই অনন্যচিন্তা বলিয়া থাকে। প্রাক্তন সূত্রে নানা উপাধি সংযোগ করিয়া তোলে,তাহার বেগ ধৈর্য্য ধরিয়া ক্ষয় করিতে হয়…..কালে সকলই হইবে। কেবল নামই সত্য,নাম বই এ জগতে কিছু থাকিবে না।
(১১৩) নাম বলিতে চিন্তাকেই বুঝাইয়াছে। নাম চিন্তামণি:কৃষ্ণশ্চৈতন্যরসবিগ্রহ:। নিত্যশুদ্ধোনিত্যমুক্তোহভিন্নাত্মানামনামিনো:। । অর্থ্যাৎ অবিচ্ছিন্নভাবে এই নাম বৈ আর এ জগতে প্রাপ্তি কিছুই নাই। এই যে অনন্যজ্ঞান ইহার নিকট সর্ব্বদা মন ইচ্ছা প্রভৃতি কামদ বস্তু রাখিয়া থাকে। যাহাতে কোন প্রলোভনে,কি কোন উৎপাতে ভুল না হয়,তাহাকেই নাম বলে। সংসারে যাবতীয় পদার্থের এক একটি ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ হইয়া থাকে। সেই ভিন্ন ভিন্ন যত নাম সকলই মনের ভ্রম,এই ভ্রম শুদ্ধ প্রকৃতির গুণের তরঙ্গ হইতে উৎপন্ন হইয়া থাকে। অতএব ঐ নামের বিতংপদে না যাইয়া মনে মনে আপদে,বিপদে সম্পদে সেই নামের নিকট সর্ব্বদা চিন্তা ভাবনার সকল অবস্থায়ই (এই বিশ্বাস স্থাপন করিয়া যে ”এই নামই ভগবান,এই নাম ছাড়া যে কোন নাম করা হয় তাহা ভ্রান্ত ও নামের বিভূতি”) [থাকিতে হয়]। যখন মনে,বুদ্ধিতে,সকল অবস্থায়,সকল শব্দতে একটি নাম বোধ হইবে তখন নামেরই সফলতা লাভ করিতে পারিবে। অতএব সকল অবস্থায়ই নামম করিবে।
(১১৪) ”শৈব শাক্তাগমাদীনি অন্যদ্বহুমতানিচ। অপভ্রংশানি শাস্ত্রাণি জীবানাং ভ্রান্তচেতসাম। । ” শিবশক্তি যোগ হইলে সন্ধ্যা হয়,এই সন্ধ্যা হইলেই বিশুদ্ধ ভক্তির উদয় হয়। বিশ্বাসও হয় অর্থ্যাৎ শ্বাস প্রশ্বাস সরল হয়। নাম শব্দে প্রকাশকে বুঝায়,সেই প্রকাশই চিন্তা বলিয়া থাকে। নাম চিন্তামণি: কৃষ্ণশ্চৈতন্যরসবিগ্রহ:” নিত্যশুদ্ধোনিত্যমুক্তোহভিন্নাত্মানামনামিনো:। । যেই নাম,সেই রুপ,সেই স্থান,অতএব নামে এবং নাম যেখানে প্রতিষ্ঠা হয় সেখানে নামের মন্দির বলিয়া থাকে। চিন্তাকেই ধ্যান বলে,ধ্যান উদয় হইলেই সকল রকমের বাধকক অর্থ্যাৎ আবরণ মুক্ত হইয়া সত্যনারায়ন পদ লাভ হয় (প্রকাশ হইয়া থাকে)। অতএব সর্ব্বদা মনের বেগ অর্থ্যাৎ ইন্দ্রিয়ের বেগ এবং বুদ্ধির বেগ অর্থ্যাৎ যাহা বোধ হয়,সুখ এবং দুঃখ,লাভ লোকসান,আপন পর,সদসৎ বুদ্ধি হইতেই নানান বিশৃঙখলার উদয় হইয়া জীবকে নানান দিকে আকর্ষণ করিয়া বন্ধন করে,ইহাদের বেগ সহ্য করার নাম তপস্যা। এই তপস্যা করিতে করিতে নির্ম্মল চিত্তেতে ভগবানের নাম স্ফুরণ হয়,এই নাম প্রতিষ্ঠা হইলে বাসনা অর্থ্যাৎ আবরণ ক্ষয় হইয়া পরম শান্তির নিকট থাকা যায়। এই অবস্থায় ভগবানের স্থান জানিবে। সংসার মায়ামুগ্ধ থাকায় গুণের তরঙ্গের উৎপত্তি যে সকল কামনা বাসনা জীবের দেগ হইতে উৎপন্ন হয় তাহাকে ভোগ করিবার জন্য উন্মত্ত হইয়া,বুদ্ধিভ্রমে পড়িয়া নানান উপায়ের দিকে মনকে প্রলোভনের দ্বারা আকর্ষন করে। এই লোভে আকৃষ্ট হইলে অহংকার,অভিমান,দম্ভ,দর্প,ক্রোধ,পারুষ্যাদি দ্বারা অধীন হইয়া জীব বন্দী হয়,চেড়ীসকল দৌরাত্ম করে,শাসন করে,প্রলোভন দেয়। অতএব মনের বেগ,বুদ্ধির বেগ এবং বাসনা অর্থ্যাৎ কামনার বেগ সহ্য করিয়া কেবল শ্বাস প্রশ্বাসের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া থাকিবার চেষ্ঠা করিতে হয়। এই লক্ষ্যকেই লক্ষ্য জপ সমাধি বলে। এই জপ করিতে করিতে হংসের উদয় হয়,ইহাক েই নামের উদয় বলে। এই নামই বেদ বলিয়া জানিবেন এবং ইহাই অক্ষয়,ইহাই মুক্তি,ইহাই ভক্তি,ইহাই শক্তি বলিয়া জানিবেন। এই ভাবকেই সত্যনারায়ণ বলিয়া ভবিষ্যৎ পুরাণে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠির সংবাদে রেবাখন্ডে প্রকাশ করিয়াছেন। নারায়ণ: পরো বেদো,নারায়ণ: পরাৎপর:। নারায়ন: পরা মুক্তি: নারায়ণ: পরা গতি:। ইহাকেউ সত্যযুগের তারকব্রহ্ম নাম বেদ বলিয়াছে। যে শ্বাস বাহিরে যায় তাহাকে শিব বলে,যে শ্বাস ভিতরে টানিয়া লয় তাহাকে শক্তি বলে,যে শ্বাস ফেলেও না টানেও না,স্থির হইয়া থাকে,তাহাকে সত্য বলে এবং এই সত্যকে আশ্রয় করিয়া থাকাকে অয়ন বলে। এইজন্য সত্যনারায়ণ বলিয়া বেদাদিতে জানাইয়াছেন। এই সত্যনারায়ণের সেবা অর্থ্যাৎ পরিচর্য্যা অভ্যাস করিতে করিতে এই সত্যনারায়ণ উদয় হয়। ইহার আশ্রয়ে বুদ্ধিকে যোগ করিতে করিতে স্থির বুদ্ধি হইলেই মন আর কোথায়ও যায় না। তখন শুভবুদ্ধির উদয় থাকিবে,অন্ত হয় না। এই অবস্থাই প্রাপ্তি জানিবেন। সত্যং পরম ধীমহি সর্ব্বদা শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্যস্থলে মনকে রাখিয়া ”নাম” করিতে করিতে পরম রুচি আসিয়া দেহকে বাসনা শূন্য করিয়া নিত্য আনন্দে শান্তিতে ডুবাইয়া রাখিবে।
(১১৫) ভগবান ভক্তি রুপাদিদ্বারা প্রকাশ থাকেন,নাম আর রুপের ভিন্ন ভিন্ন কিছুই নাই। যেই নাম সেই কৃষ্ণ,নাম নিয়া পড়িয়া থাকিলেই ব্রজবাস হয়। তার কারণ যেই নাম সেই যদি কৃষ্ণ হয়,তবে যেখানে কৃষ্ণ সেখানেই ব্রজ। বৃন্দাবনং পরিত্যজ্য পাদমেকং ন গচ্ছতি,এই প্রমাণেও ত জানা যায় নাম লইলে ব্রজ ছাড়া হয় না এবং ভগবানের অদৃশ্য ও হয় না,বৃন্দাবন বাস হয়। দেহের আবরণে থাকিয়া যে সকল সুখদুঃখ উপভোগ হয় সেই সকলই জীবের বন্ধন-ভোগ মাত্র,কারণ ঘুমাইলে শান্তি অশান্তি সুখদু:খের কোন ভিন্নতা থাকে না। নাম ভিন্ন আর সকলই অনিত্য,এখন মনে শান্তিতে হউক,ভাল লাগুক আর না লাগুক,নামের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবেন,দেহের সকল দেনা শোধ করিয়া নিত্যধামে যাইতে পারিবেন। ভগবান আপনার পিছনে সর্ব্বদাই আছেন জানিবেন। আপনি যেই কয়দিন এ জগতের জন্য দেহে থাকেন। ,ততদিনই আপনাকে প্রাক্তণ জ্বালা ভোগ করিতে হইবে। পরপারে শান্তির আকর জানিবেন। প্রাক্তন সূত্রেতে এ সংসারে ভাই,ভগ্নী,স্ত্রীপুত্রাদিরুপে নানান যোগ বিয়োগের সম্বন্ধ হয়,সেই সকলই অযোগ,অভাব,আবরণ অর্থ্যাৎ বন্ধন। কেবল নামের জন্য অধীন হইতে চেষ্টা করিবেন। ভাগ্যের অতিরিক্ত কিছুই করিবার যো নাই।
(১১৬) হংস শব্ধের অর্থ হাঁস,প্রকাশ করা,ইহাই ভগবানের আশ্রয়। যেমন গরুর বাহন বিষ্ণু,বৃষবাহন শিব,তেমনি হংসবাহন ব্রহ্মা। ইনিই ত্রিবেদ,ত্রিগুণ,ত্রিতত্ত্ব,ত্রিদেবা,ইনিই ত্রিশক্তি,ইনিই ত্রিঅগ্নি,ইনিই ত্রিমূর্ত্তি,ইনিই তুরীয়রুপে জনার্দ্দন হইয়া থাকেন। তাঁহাকেই সোহং বলে,ইহাই ভগবানের নাম। এই যে শ্বাস প্রশ্বাস চলিতেছে [ইহা] হংসেরি একটা চঞ্চল অবস্থা। যখন প্রাণের সঙ্গে নাম করিতে করিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হইয়া,কর্ত্তৃত্বাভিমান যাইয়া,নামের অর্থ্যাৎ প্রাণের দাস হইয়া বুদ্ধি স্থির হইবে,তখন যে অবস্থা হইবে তাহাই সোহহং…….. ”অচ্যুতং কেশবং বিষ্ণুং হরিং সত্যং জনার্দ্দনম। হংসং নারায়ণষ্ণৈব এতন্নামাষ্টং শুভং। । ” হংস নাম,নাম হয় চিন্তামণি,এই হংসই প্রাণ,ইহার প্রতিষ্ঠা হইলে ভগবান প্রাপ্তি হয়। নিরপেক্ষ হইয়া প্রাণের অধীন হইয়া নাম করিতে করিতে প্রাণের প্রতি যখন ভালবাসা আসিবে তখন ইন্দ্রিয়গণের প্রীতি প্রলোভন শক্তির ভালবাসা বিরক্তিজনক হইবে। নচেং বলপূর্ব্বক ইন্দ্রিয়গণকে রোধ করিতে গেলে তাহাদের সাঙ্গ পাঙ্গ আসিয়া বিরক্ত করিয়া নামের পথে যাইতে বাধা জন্মাইবে। মনে বিচার করিয়া প্রাণ বই আমার কেহ নাই,এই প্রাণের সঙ্গ ছাড়িয়া মায়ামৃগে অর্থ্যাৎ ইন্দ্রিয়গণের প্রলোভনে পড়িয়া আমাকে এই অনিত্য বস্তুর আলয়ে আটক করিয়া গিয়াছে এই বোধ হইবে,তখন ঐ প্রলোভনের ইন্দ্রিয়েরবেগ সহ্য আপনা হইতেই হইবে। ইন্দ্রিয়গুলি একমাত্র মনের বৃত্তি জানিবেন। একটুক ধৈর্য্য ধরিলেই ইন্দ্রিয়গণ ধীরত্ব লাভ করে। তখন ঐ ইন্দ্রিয়গণই মিত্র হইবে। প্রাণের বোধন হইলেই ইন্দ্রিয়গণ শান্তশিষ্ট হয়। সুকৃতিদিগের নিকট লক্ষ্মী এবং কুকৃতিদিগের নিকট অলক্ষ্মীরুপা এই প্রাণ হইয়া থাকে।
(১১৭) এই সংসার মায়ার গারদ। ভোগদন্ড ভাগ্যানুসারে জীবের সম্ভোগ ঘটিয়া থাকে। সেই ভোগের তারতম্য হেতু ভাল মন্দ,সুখদুঃখ,শান্তি অশান্তি ঘটিয়া থাকে। অতএব ভাগ্যেরফল যাহা হয় তাহা মনের দ্বারা উপভোগ করে। মনের সঙ্গের সঙ্গী যাহা সুখ দুঃখ সকলি ভ্রম,উহা ঘুমাইলে থাকে না,ভুলিয়া গেলেও থাকে না। কাজেই এই প্রলোভনের সঙ্গী না হইয়া যখন যে অবস্থায় পড়িতে হইবে সেই অবস্থায় নাম করিয়া যাইতে থাকিবেন। ধৈর্য্যই ধর্ম্ম,ধৈর্য্য হইতে সকল দেনা পাওনা শোধ করিয়া,সংসারের মায়াময় ভ্রান্তিজনক দেহ মুক্ত লাভে ভগবৎ পদ বিদেহী হইয়া শান্তিস্বরুপ ভগবানের অবিচ্ছেদ সঙ্গ লাভ হয়। ধৈর্য্য ভিন্ন তাহা হয় না,কারণ অধৈর্য্য কেবল প্রলোভনের দিকে আকর্ষন করিয়া শাসন উৎপাত জন্মায়। অতএব সুখদুঃখ সমান ভাবিয়া সর্ব্বদা সকল অবস্থায় নাম করিয়া যাইতে থাকুন। দেহ ছাড়িয়া গেলে ত কেহ টানিবে না,কারণ দেনাপাওনা থাকিবে না। ভগবানের কাছে থাকিতে হইলে,প্রারব্ধ উৎপাত ভোগ ধৈর্য্য ধরিয়া না থাকিলে ভগবানের কাছে স্থান পায় না।
(১১৮) ………..নাম ছাড়িয়াই প্রকৃতির গুণের তারতম্য তরঙ্গে পড়িয়া,কি যে ভাল,কি যে মন্দ,তাহা বুঝিতে পারে না বলিয়াই নানানটা চহিয়া থাকে। সুখের প্রয়াসী না হইয়া,মনে যাহা ভালমন্দ বোধ হয় তাহার দিকে লক্ষ্য না রাখিয়া,অটলভাবে যেমন ধ্রুব প্রহলাদাদি পতিপরায়ন ব্যক্তিগণের চরিত্র [প্রকাশ] করিয়া ছিলেন,আপনিও সেইরুপ নামের নিকট থাকিয়া যাইতে থাকুন,,নামই আপনার সকল অভাব অর্থ্যাৎ অযোগ গুণের তরঙ্গ হইতে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাইবে………জীবের চক্ষের দ্বারা মনেতে যাহা যাহা ভালমন্দ বোধ হয় সকলি প্রকৃতির গুণের আবর্ত্তন। মনের দ্বারা,কি বুদ্ধির দ্বারা,কি ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা যে সুখ হয় তাহা কর্ত্তৃত্বাভিমানে না রাখিয়া,সেই মনের এবং বুদ্ধির বেগ সহিষ্ণুতাদির দ্বারা সহ্য করিতে করিতে পরমানন্দময় বোধন হইয়া স্থির বুদ্ধি এবং স্থির মন,স্থির ইন্দ্রিয়াদি কর্ম্ম সঙ্গের সঙ্গী নিত্য অবিচ্ছিন্নভাবে স্থির রসপ্রাপ্ত হইয়া পরম শান্তিতে থাকিতে পারে,ইহাকেই স্থির প্রাজ্ঞতা বলে। স্থির -প্রাজ্ঞই ভগবানা। যাহা হউক,অনন্যমনে যতদূর পারেন নাম করিয়া যাইবেন। প্রলোভনময় বুদ্ধি,মনের কিম্বা ইন্দ্রিয়াদির ইচ্ছা বাসনায় মুগ্ধ হইয়া পড়িবেন না। কেবল নাম করিয়া যাইতে থাকুন,নামই আপনাকে উদ্ধার করিয়া নিবেন।
(১১৯) মনের সুখ কি দুঃখ যাহা বোধ করা যায় তাহা সকলি অসার,অনিত্য,অস্থায়ী। কর্ত্তা অভিমান হইয়া সীমাবদ্ধ বুদ্ধির সাহায্যে অসীম যে সর্ব্বব্যাপী ভগবান তাহাকে জানিতে পারে না। তাহার কারণই অহংকার অভিমান। গুণের তারতম্য ভাগ হইয়া,কেবল (কৈবল্য) কর্ম্ম ভুলিয়া যাইয়া নানান ইন্দ্রিয় সুখকর কার্য্যাদির অনুষ্ঠানে স্পৃহা জন্মিয়া থাকে। যাহা হউক,যাহা পাইয়াছেন তাহাই করিবেন। সে রকম করিতে করিতে যাহা যাহা উৎপন্ন হইবে তাহার দিকে লক্ষ্য না করিয়া সর্ব্বদা ঐ রকম করিতে করিতে নিত্যবস্থুর সাক্ষাৎ হইয়া থাকে। নিত্য সত্ত্বায় উপলব্ধি যোগে বিচ্ছেদ হইবে না,কারণ সত্ত্বার ক্ষয় নাই। কর্ম্মক্ষেত্রেতে কর্ম্মই করিয়া যাইবে,ফলাফলের দিকে লক্ষ্য কি স্পৃহা রাখিবে না। পরের যাহা দেখে তাহার দিকে লক্ষ্য কি স্পৃহা রাখিয়া তাহার মত হইতে নাই। যে যাহা বুঝে,যাহা দেখে,সকলি ভুল বুঝিয়া এবং করিয়া থাকে। আপনার কর্ম্ম আপনিই করিয়া যাইবেন। পরের সুখদু:খের তারতম্য করিয়া ভুলে যাইবেন না।
(১২০) এই জগতে যাহা কিছু উপস্থিত সুখদুঃখকর সকলই ভ্রমাত্মক বুদ্ধির পরিচায়ক। একমাত্র ভগবানই সত্য। যে সকল সঙ্গলাভে সুখ কি দু:খের উপলব্ধি হয় সে সকলি অস্থায়ী,উদয় হইয়া ক্ষয় হইয়া যায়। অতএব মনের দ্বারা যে সকল শান্তি আহরণ হয় তাহাতে মুগ্ধ হইলে সত্যস্বরুপ ব্রহ্মপদ লাভকরিতে পারে না। মনের যে কোন অবস্থাই হউক না,সকল অবস্থায় সর্ব্বদা ধৈর্য্য ধরিয়া শুদ্ধ প্রাণের সেবা করিয়া গেলে সনাতন নিত্য ধর্ম্ম অধিষ্ঠান হইয়া মনকে এবং বুদ্ধিকে কুহকগণ বদ্ধ জ্বালাদি উপসর্গ মুক্ত করিয়া লয়। শ্বাস-প্রশ্বাস বলিতে যে প্রাণ নাকের পথ দিয়া এবং মুখ দিয়া বাহিরে এবং শরীরের ভিতরে যায়,তাহাকে শ্বাস-প্রশ্বাস বলে। যে বায়ূ ফেলিয়া দেয় সেই বায়ুকে না টানিয়া,না ফেলিয়া শরীরের মধ্যে যতক্ষন রাখা যায় ততক্ষণ সময়কে প্রাণের মধ্যাবস্থা বলে,অর্থ্যাৎ ফেলিবেও না,টানিবেও না। এইরুপে স্থির অবস্থাকে যত বেশি সময় রাখা যায় তৎ-প্রতি লক্ষ্য রাখিবার নামকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যস্থল বলিয়া থাকে। যে শ্বাস-প্রশ্বাস আসে ও যায় তাহাকে আদি-অন্ত জগৎ বলে। এই জগৎ হইতে উদ্ধারের জন্য প্রাণের মধ্য অবস্থাকে সর্ব্বদা যত্ন করিয়া রাখিবার চেষ্টা করাকে যজ্ঞ বলে। ইহাতে জগৎ মিত্র হইয়া পরমানন্দ দিবে।
(১২১) শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যস্থল বলিতেই একমাত্র হৃদয়কেই বলে,সেইখানেই নামের স্থিতিস্থান জানিবেন। ”ঈশ্বর: সর্ব্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জ্জুন তিষ্ঠতি। ভ্রাময়ন সর্ব্বভূতানি যন্ত্রারুঢ়ানি মায়য়া। । ” এই শ্রুতি যাবৎ বুঝা গেলে হৃদয়ে মন রাখিয়া অর্থ্যাৎ সর্ব্বদা ঘন ঘন নাম উচ্চারণ করিতে করিতে শক্তি গাঢ় হইবে। যত ঘন ঘন নাম উচ্ছরণ করিতে পারেন ততই প্রাণের স্থিরাবস্থা হইবে। ইহাউ শিবশক্তি যোগ জানিবেন। ”যেই নাম সেই কৃষ্ণ ভজ নিষ্ঠা করি। নামের সহিত ফিরেন আপনি শ্রীহরি। । ” অতএব নাম করিতে করিতে আপনিই নামের ধবনি হইবে। নাম করিতে কোন রকমের কল্পনা করিতে নাই,তাহার কারণ ভগবান অকল্প,তাহার নামও অকল্প,তাঁহার সঙ্গও অকল্প;যাহা হউক,সর্ব্বদা নাম উচ্চারণ করিতে করিতে ঘন ঘন নাম উচ্চারন হইবে। সেই সময় আনন্দ আসিবে। কর্ত্তা হইয়া কোনরুপ কাজ করিতে গেলে মায়ামোহে জঞ্জাল বাধায়।
(১২২) সংসার মায়ামুগ্ধ। জীব প্রারব্ধ ভোগের প্রলোভন ত্যাগ করিতে না পারায়,ক্ষণিক সুখ লাভদ্বারা নিত্য যে পবিত্র শক্তি [তাহা] হারাইয়া কেবল বাসনাজালে বদ্ধ হয়। ইহাতে প্রাক্তনের জন্মমৃত্যু হইতে উদ্ধার করিবার জন্য এই নামরুপে পৃথিবীতে নামের অবতরণ করিয়াছেন। ”যেই নাম সেই রুপ ভাব নিষ্ঠা করি, নামের সহিত ফিরেন আপনি শ্রীহরি। ” “হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম। কলৌ নাস্তেব্য নাস্তেব্য নাস্তেব্য গতিরন্যথা। । ” অতএব নামের আশ্রয় নিয়া থাকিলেই এই ভব বাসনা কুল হইতে পরিত্রাণ লাভ করিতে পারে,ঐহিক সুখ তাহাকে দিতে পারে না।
(১২৩) কালচক্রেই সমস্ত ঘটিয়া থাকে……….নাম বই জগতে আর কিছই ত্রাণের উপায় নাই। নামই সত্য,অতএব সর্ব্বদা নামের প্রতিষ্ঠা করিয়া হৃদয়ে নামের মন্দির মধ্যে সর্ব্বদা সেবা করিবেন। নামের সেবা করিতে করিতে প্রেমের শক্তি ফুটিয়া উঠিবে।
(১২৪) সংসার কেবল মায়াময় ভ্রান্তমুগ্ধ। এ জগতে সুখদু:খাদি লাভ লোকসান প্রাক্তন বশত:ই ঘটিয়া থাকে। সেই প্রাক্তন ভোগের জন্য আপনপর ভাবে শত্রুমিত্র জ্ঞান হয়। এই জ্ঞান হইতে উদ্ধারের একমাত্র ভগবানের সেবা বৈ আর কিছুই নাই। যেই নাম,সেই ভগবান। অতএব সর্ব্বদা নাম করিলে ভগবানের নিকট থাকা হয়। সর্ব্বদা ভগবানের নিকট থাকিলে কোন অভাব হয় না,যেহেতু ভগবান আনন্দময়,সুখময় বলিয়া খ্যাত আছেন।
(১২৫) সংসার মায়াময় ভ্রান্তমূলক প্রাক্তনের ক্ষেত্রভূমি। ইহা হইতে পরিত্রাণের জন্য শুদ্ধ সত্যকে আশ্রয় করিয়া থাকিতে হয়। সত্যই পরম ধর্ম্ম। সেই সত্যই নামরুপে প্রকট হইয়া অক্ষয় ভান্ডারী রুপে আনন্দ বিতরণ করিতেছেন। অতএব সর্ব্বদা নাম করিবেন। নাম ভিন্ন কোন যুগেই উদ্ধারের পথ পায় নাই। অতএব সর্ব্বদা নাম করিবেন। পতিতপাবন শক্তিবান জানিয়া যত ঘন ঘন উচ্চারণ করিতে পারেন তাহাই চেষ্টা করিবেন। তাহা হইলে পরম শক্তি আসিয়া আপনাকে পরম সৌভাগ্যশালী করিয়া লইবে এবং কৃপা করিয়া প্রীতি ভক্তি যোগে আপনাকে শান্তিময় করিবেন সন্দেহ নাই।
(১২৬) যেই নাম সেই কৃষ্ণ ভজ নিষ্ঠা করি। নাম করিবেন,নাম আর কৃষ্ণেতে অভেদ। সর্ব্বদা নাম উচ্চারণ করিতে করিতে ভগবান সমস্ত ঋণ মুক্ত করিয়া ভগবানের নিকট স্থান দিবেন। প্রহলাদ প্রভৃতি সমস্ত ভক্তগণকে যেমন করিয়া এই সংসারের দেবদানবের আবর্ত্তন থেকে উদ্ধার করিয়াছেন,সেই রুপ আপনাকেও এই সংসার তরঙ্গের বন্ধন হইতে ভগবান উদ্ধার করিয়া লইবেন। অতএব নাম নিয়া পড়িয়া থাকুন। নামেই সমস্ত আপন করিয়া নিবে।
(১২৭) জীবগণ ভ্রান্তিবশত: কর্ত্তা হইয়া মায়ার শক্তিকে কলুষিত অহঙ্কারবশত: নানান উপাধি ধারণ করিয়া থাকে। তাহাতেই প্রাক্তনে নানান ভাবে বাসনা জন্মাইয়া জীবগণকে ভগবানের স্বরুপ জানিতে দেয় না। যাহা হউক,যে ভগবানের দাস হইয়া থাকে তাহা কোন কর্ম্মেরই অনুষ্ঠান,কি সাধন ভজন করিতে হয় না। যেমন জয় বিজয় নারায়ণের দাস,তাহাদের প্রারব্ধে কিছু করিবার অধিকার থাকে না। যেমন ভগবানের সারথি সুমন্ত্র,তার রথ চালন ছাড়া আর কি করিবে,তার নিকটও কোন প্রারব্ধ থাকে না। ………নামে পড়িয়া থাকিবার নাম হইয়াছে ”নাম করা,” অর্থ্যাৎ সমস্ত অবস্থায় তাহারই কর্ম্ম করিতে হয়। দেহের জন্য কর্ত্তা না হইয়া কেবল কর্ম্ম করিয়া যাইতে থাকুন,কোনরুপ অভাবে পড়িবেন না।
(১২৮) সত্যং পরম ধীমহী। এই শব্দই ব্রহ্মবাক্য। নাম ছাড়া এ জগতে কিছুই নাই,প্রাক্তন জড়িত দেহ,দেহের ভোগসকল দেহ দিয়াই সম্পাদন করিতে হয়। প্রাণ যাহা নাক দিয়া আছে আর যায়,তাহাকে যত পারেন নামের সঙ্গে হৃদয়ে স্থীর করিয়া রাখা,এই দিকে লক্ষ্য রাখিয়া যাইবেন। …… সংসার কর্ম্মে থাকিয়া নাম করিয়া যাইবেন,ভগবান ইহাতে শান্তি দান করেন এবং উদ্ধার করিয়া থাকেন। জন্মমৃত্যু,জরাব্যাধি কেবল কর্ত্তৃত্বাভিমানের কর্ম্ম। সর্ব্বদা ঐ শ্বাস-প্রশ্বাসের সাহায্যে নাম করিতে চেষ্টা করিবেন,তবে আর পতিত হইবেন না।
(১২৯) ভগবানের নামের দাস হইয়া থাকিলে সংসারে সকল প্রকার উৎপাতই সহ্য করিয়া যাইতে হয়। উপস্থিত মতে কর্ম্মের পুরস্কার ভুক্ত না থাকিয়া কেবল নাম লইয়া পড়িয়া থাকিতে হয়। ভাগ্য যাহা যাহা ঘটিবে তাহাই সন্তোষের বিষয় জানিয়া,ধৈর্য্য ধরিয়া প্রারব্ধ ভোগের বেগ ক্ষয় করিয়া যাইতে হয়। প্রারব্ধই সকল রকমের অবস্থান্তর করিয়া থাকে। দেহ কালের আবরণ হইতে উৎপন্ন হইয়া কাল হইতেই জীবের দেনাপাওনা ঘটাইয়া থাকে,কাল মুক্ত হইলেই দেহ মুক্ত হয়। চিন্তা ভাবনা না করিয়া আবাহন বিসর্জ্জন শূন্যেতে কর্ম্ম করিয়া যাইবেন। যাহা ভাগ্যের ফল আপনিই জাগিবে…….আপন কর্ম্মশক্তি অনুসারে করিয়া যাইবেন। কাহারও কোন অনিষ্ট না করিয়া,সর্ব্বদা সত্যকে হৃদয়ে স্থান দিয়া কর্ম্মকার্য্য করিয়া যাইবেন নামই সত্য,নাম বৈ এ জগতে কিছুই নাই,থাকিবেও না। ………কেবা কার স্ত্রী,কেবা কার পুত্র,সকলি নামের ভ্রম মাত্র জানিয়া কার্য্য কর্ম্ম করিয়া যাইতেহয়।
(১৩০) সর্ব্বদা নাম করিবেন। নামই সত্য এবং নামই থাকিবে। হরিনাম মহামন্ত্র। নাম ভিন্ন মনের বৃত্তি যাহা হয়,সকলই দক্ষযজ্ঞ। যজ্ঞ ভ্রষ্ট হইয়া যায়,নামই থাকে। নামের আবরণ নাই,নাম মুক্ত,নামের সহিত মুক্তি পায় জানিবেন।
(১৩১) ভগবান এবং নাম একই বস্তু। নাম করিতে ভালই লাগুক আর বিরক্তিই লাগুক,নাম করিবেন এবং নামের ফল পাইবেন যেমন অমৃত খাইতে ভালই লাগুক আর মন্দই লাগুক অমৃত কাজ করিবেই,সেইরুপ নাম করিলে নামে তাকে শান্তিধামে নিবেই। নাম জাগাইয়া চৈতন্য করিয়া দিবার উদ্দেশ্য কি [?] এই নামে রুচি পাউক আর অরুচি হউক,নাম ভগবান যদি এক হয় তবে নামের নিকট যে অবস্থায় থাকা যাক ভগবানের নিকটই থাকা হয়। যদি ভগবানের নিকটই থাকা হইল তবে নাম চৈতন্য রুচি জাগরণের বাসনা হওয়াই ভ্রান্ত। ঐহিক সুখের আভাস দু:খের সমুদ্র মাত্র। অতএব মনের যাহা কিছু সুখের আশ্রয় কি দু:খের আশ্রয় সকলই ভ্রম,কারণ ঘুমাইলে সেই সুখদুঃখ,সুখ ঐশ্বর্য্য কিছুই থাকে না। পতি সেবা করিয়া যাইবেন। পতি হইতে আপন কেহ হয় না। পতি সকল অবস্থায় উদ্ধার করেন,এজন্য ভগবানকে পতি বলিয়া থাকে এবং নাম যাহা পাইয়াছেন সেই নামই ভগবান। সেই নামই জাগ্রত,সেই নামই রুচিসম্পদ। পতির দোষ,পতির নিন্দা কোন স্থান দিতে নাই। যেই নাম পাইয়াছেন তাহা উপর আর কোন অধিক নাম মন্ত্র যোগাযোগ কিছুই নাই জানিবেন। প্রাণ ভরিয়া শুধু সেবা করিয়া যাইবেন,বেদ বিধি ভাল – মন্দ বিচার করিবেন না। অদৃষ্টে যাহা ফলাফল এই দেহের গুণের পরিবর্ত্তন জানিয়া নাম ধরিয়া থাকিবেন। তবেই শান্তির কালচক্রে সমস্ত দেনা ঋণ পরিশোধ করিয়া যাইতে পারিবেন,যেখানে গেলে ভগবানকে আর ভুলিবেন না,ভগবানও ভুলিবেন না। ইহজগতের বাসনাদি কর্ত্তৃত্বাভিমানীর মন বুদ্ধি নিয়া সত্যের নিকট যাইতে পারে না। এই জগতের বস্তু এই জগতে থাকিবে,তাহার প্রত্যাশিত হইলে এই হ্রাস দীর্ঘরুপ ঘুরাঘুরির চক্র ত্যাগ করিয়া যাইতে পারে না।
(১৩২) জগতের মধ্যে মাতাপতিা প্রভৃতি স্বজন বন্ধুবান্ধব যাহাদিগকে অঙ্গীকারসূত্রে বন্ধন হয়,সেই সকল বিষয় বুদ্ধির মধ্যে সকলই সেই ভগবান জানিবেন। কেবল আবরণে অর্থ্যাৎ আধারগত হইয়া পৃথক পৃথক নাম উপাধি হইয়া থাকে। …..প্রাণ অর্থ্যাৎ যাহা শ্বাস-প্রশ্বাস চলিয়া থাকে,ইহাই ভগবান। ইহাকেই স্থির করিয়া যতটুকু সময় রাখা যায় ততটুকু সময়ে ভগবানের নাম করা হয় এবং ইহার স্থির অবস্থায় নিবার জন্য মনের যে বেগ তাহারই নাম মন্ত্র। যখন এই প্রাণেতে স্থির বুদ্ধি অর্থ্যাৎ প্রাণ স্থির বোধ হইবে তাহাকে স্থির আত্মা বলিয়া জানিবেন। অতএব যত সময় পারেন ঐ প্রাণের স্থির করিবার জন্য চেষ্টা করিবেন,এই অনুষ্ঠানের নামই নাম করা,অর্থ্যাৎ এই স্থিরের অধীন থাকার নামকে ”নাম” বলে। এই স্থির অবস্থায় ভগবান (অভাবশূন্য) জ্ঞান জানিবেন। …….. নামই সত্য,নাম সর্ব্বদাই করিবেন,সকল অবস্থাতেই এই ভূত প্রকৃতি মুক্তির জন্য এই প্রাণের স্থির করার আশ্রয় নিয়া [থাকিবেন]। এই প্রাণের স্থির বৈ আর কিছুই নাই এই জ্ঞানকে নাম সংকীর্ত্তন বলিয়া জানিবেন।
(১৩৩) সংসার মায়ামোহের তরঙ্গ। এই তরঙ্গে একমাত্র উদ্ধারের পথ নাম সংকীর্ত্তন। নাম বৈ আর সংসার বন্ধন মুক্তি পাইতে পারে না। নামই সত্য। কাম কামনা সত্য নয়,কারণ রজগুণের স্বভাব। এই গুণের তরঙ্গ হইতে উদ্ধার করিতে হইলে বিষয় সুখের পিয়াসে উদ্ধার পায় না। যে হেতু বিষয়-বুদ্ধি রজগুণের আঘাত মাত্র। অদৃষ্টে যাহা যার আছে তাহা ঘটিবেই,অদৃষ্টে না থাকিলে শত বিদ্বানও ভিখারী হইয়া থাকে। সংসারের আয়-ব্যয় সকলই ভাগ্যে জুটিয়া থাকে। ভাগ্যফলের জন্য স্পৃহা এবং ক্ষোভ করিতে নাই।
(১৩৪) চির অভ্যাসকে পরিবর্ত্তনের জন্য কিছু সময়ের প্রতীক্ষা করে। ক্রমেই অভ্যাসবশে সদানন্দ পদ লাভ হইবে,সে যে কি আনন্দ তাহা মনের বুদ্ধির অগোচর। যেমন নিদ্রার গাঢ়তা হইলে অনির্ব্বচনীয় [?] অপার সুখ উদয় থাকে নিত্যানন্দ ও তদরুপ। মনের দ্বারা বা বুদ্ধির দ্বারা যে সকল আনন্দ সুখ বোধ হয় তাহা কেবল বিমাতার অর্থ্যাৎ মোহমায়ার প্রলোভন,অলীক,অল্পস্থায়ী,ইন্দ্রিয় ডগায় যতক্ষণ প্রকাশ থাকে ততক্ষণই উহার উদয় থাকে। সুখের অন্তে দুঃখ,দু:খের অন্তে সুখ,এই মহামায়ার তরঙ্গ। তাহাতে মুগ্ধ হইলেই ভোগের ভোগ বৃদ্ধি হয়। ইহার অতীত হইলেই পরমানন্দ,যাকে উদয় করিলে তরঙ্গ থাকে না,স্থির হয়,সেই আত্মা। পরমানন্দময় নিরঞ্জন পদার্থ যাহা হইতে চিরশান্তি উদয় থাকে সেই ভক্তি একাগ্রতা সম্মিলন। ”শূন্য ভাবিত ভাবাত্মা পাপৈর্বিমুচ্যতে”বলিয়া মহাজন বাক্য বেদ করিয়া গিয়াছেন। নিরাবলম্ব [?] পদে অর্থ্যাৎ আকাশকে ভাবিতে ভাবিতে অভাব শূন্য আকাশের সর্ব্বশক্তি (অভাব শূন্য পদ) প্রাপ্ত হইয়া থাকে। অতএব যত সময় পারেন অহং জ্ঞান পরিহারের জন্য কেবল মাত্র আকাশ সর্ব্ব উপাধি ভাবকে আহরণ করিতে চেষ্টা করিবেন। ইহাই প্রকৃত ধর্ম্মযাজক বলিয়া উক্ত হয়।
(১৩৫) নিত্য সত্যই ধর্ম্ম। সত্যই পরম ধর্ম্ম,সত্যই পরম গুরু,সত্যই পরম পদ। সত্যই পরম তপ:, সত্যই পরমাত্মার স্বরুপ। সত্যই আদি,অনাদি,সত্যই পরামুক্তি,পরাগতি।
(১৩৬) সংসারে যাহা কিছু [সকলই] আগমপায়ী অনিত্য সুখকর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুখদুঃখপ্রদ মাত্রস্পর্শ মাত্র। ইহা কেবল ইন্দ্রিয় ডগায়ই প্রবোধন হইয়া পার হইলে থাকে না। ইহা নিত্য সুখের অন্তরায়ই। অতএব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুখের দু:খের প্রতি লক্ষ্য না রাখিয়া অতিন্দ্রিয় নিত্যসুখময় অসীম রসে ডুবিবার জন্য সতত: চেষ্টা করাই পরম উপাসনা। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুখাদি যাহা উপভোগ করা যায় সে কেবল মনেরই ছায়া,অর্থ্যাৎ চঞ্চল। অতএব যাহাতে ক্ষণ উদ্দিপন প্রকৃতির আনন্দ-বন্ধন হইতে উদ্ধার পাওয়া যায় তাহার চেষ্টাই ধর্ম্মকর্ম্ম, সহায় সম্পদ। এই প্রকার শরণ লইয়া অতিন্দ্রিয় শক্তির বৃদ্ধি করিতে করিতে কৈবল্য আশ্রয় প্রাপ্ত হয়। ( জয় রাম অপরাধ মার্জনা করছি শ্রীগুরু চরনে কারন এই স্থানে আশ্রয় নাকি আশ্রম বুঝতে পারছি না তাই আশ্রয় লিখেই পোস্ট করলাম) ইহাই কৈবল্য মুক্তিপদ বলিয়া থাকে। ইহার পথ ত্রিবিধ অর্থ্যাৎ শত্রভাব,মিত্রভাব,শরণাগত ভাব যাকে ভক্তি বলে। এই ত্রিবিধভাবইমুক্তিপ্রদ। শত্রভাব সর্ব্বদা তাহার শত্রুভাবেই অন্বেষণ করিতে থাকে,তাকে বধ জব্দ [?] করাই সর্ব্বদা হৃদয়ে বর্ত্তমান হইয়া জাগরণ থাকে। সর্ব্বস্ব গেলেও ভাবের পরিবর্ত্তণ হয় না,যথা অসুরগণ (মহিষাসুর হিরণ্যাক্ষাদি) এই হইল শত্রুভাব,এই প্রকার প্রাপ্ত হয় সময় পূর্ণ হইলে। মিত্রভাব সর্ব্বদাই সর্ব্বভূতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব দর্শন,ঈশ্বরকে ভালবাসা,সকলে মধ্যে ই আত্মার মত অর্থাৎ আপন শরীরে যেমন সুখদুঃখ অনুভুতি,তদ্রুপ পরদেহে আপন দেহের মতন সুখদুঃখ বোধ করিতে পারিলে মিত্রভাব হয়। ইহাই প্রেম বলে,পরহিতে রত ইহাই মিত্রভাব। ইহা যদি স্থায়ী হয় তাতেই সর্ব্বদা মিত্রভাবে ভগবানকে পায়। শরণ ভাব নিজের নিশ্চেষ্ট ভাব;সকল সুখদুঃখ ভাব মৃত ব্যক্তির দেহের ন্যায় কর্ত্তৃত্ব অভীমান শূন্য হইয়া সকল বেগ সহ্য করিতে করিতে তাহার প্রাপ্ত হয়,যথা প্রহলাদ। এতদ্ব্যতীত ভগবানকে লাভ করিবার জন্য আহরণ,অন্বেষণ করিতে করিতে এবং যাগ যজ্ঞাদি ক্রিয়ার চেষ্টা করিতে করিতে শান্তি না পাইয়া হয়রান হইয়া পাড়িলেও নিশ্চেষ্ট ভাব উদয় হইয়া পড়ে। এই প্রকারও প্রাপ্ত অনিবার্য্য।
(১৩৭) ”সংসার” তরঙ্গ নানান। এই তরঙ্গ হইতে নির্ম্মল অন্তরঙ্গে থাকলেই যে অবস্থা হইবে তাহাই কৈবল্যধাম জানিতে হয়। ইহাই ”জ্ঞান”, ”শূন্য ভাবিত ভাবাত্মা পূণ্য পাপৈর্বিমুচ্যতে”, এই শ্লোকটি সতত হৃদয়ে জাগরণ করাই ভগবানের কীর্তন। আপন শরীরকে বিন্দু জ্যোতির্ম্ময় কিরণবিশিষ্ট ভাবনা করিয়া শূন্যতে মন অর্থাৎ কোন অবলম্বনে না রাখিয়া থাকার নামই প্রণব, সংসার তারণ শক্তি, যাহাকে ব্রহ্মবীজ বলে। ইহারই উদয় উন্মুখ গায়ত্রী, ইহাই বেদমাতা অর্থাৎ সর্ব্বপ্রকাশ গুণাদি সাধ্য শক্তি। এই গায়ত্রীই শূন্যভাবে থাকার অবস্থা, অতএব সতত এই গায়ত্রী জপ করিবেন।
(১৩৮) ……..তিনি মঙ্গলময়,সুখময়,তাঁহান আশ্রিত জনের সুখের মঙ্গলের অভাব থাকে না। অতএব সতত সকল সময় তৎবিষয়ে লক্ষ্য রাখাই পরম পথ। গুরুই সর্ব্বদা রক্ষা করিবেন,কোন চিন্তা করিবেন না। অচিন্ত্য পদকে আশ্রয় করিতে করিতে নির্ম্মল ধ্যান আসে। সেই নির্ম্মল ধ্যানের দ্বারা পরমপুরুষ প্রকাশ পায়,তৎপর মনের লয় আসে। এইজন্য যে পর্য্যন্ত দেহঅস্তিত্ব থাকে সেই পর্য্যন্তই গুরু স্মরণ করিবে। এই প্রকার মনের লয় হইলেই যে অবস্থা হয় তাহাই ভগবৎ প্রাপ্তি। সম্প্রদায়ভূক্ত দ্বারা তাহা হয় না। সংসারে সম্প্রদায়ই বন্ধন,সর্ব্বব্যাপী পরম ব্রহ্মই মুক্ত বলিয়া কীর্ত্তিত হয়। অতএব মুক্তের সঙ্গে থাকাই শ্রেয়।
(১৩৯) (গুরুরিত্যক্ষরদ্বয়ং মন্ত্ররাজমিদং প্রিয়ে)এই বর্ণ দুইটিই ত্রিলোকের ভয় অপসারন করে। (”গুরুরিত্যক্ষরং যস্য জিহবাগ্রে নিত্যবর্ত্ততে,তস্য কিং বিদ্যতে মোহশ্চর্য্যেবেদস্য কিং বৃথা”) অতএব গুরুচর্য্যাতে ভুলিবেন না। …….সর্ব্বদা স্বীয় কার্য্য শৈথল্য করিতেনাই।
(১৪০) লোক সকল স্ব স্ব ভাগ্যবশে দেশ,স্থান,ধনী,মানী,বিদ্যা,বুদ্ধি ইত্যাদি দৌলত সম্ভোগ করিয়া থাকে। তাহাতেই লোক সুখীদু:খী হইয়া থাকে। এই ভাগ্যভোগ পরিহারের জন্যই ধৈর্য্যকে আশ্রয় করিতে চেষ্টা করিতে হয়। অতএব সর্ব্বদাই ধৈর্য্য ধরিয়া চেষ্টা করুণ,ভাগ্য হইতেই সকল মীমাংসা পাইবেন। …….ভাগ্যে যাহা থাকে তাহাই হইবে, সেই জন্য কোন চিন্তা ভাবনা না করিয়া সত্যদেবের অনুশীলন চিন্তা করুন। তিনিই একটা বিহিত করবেন। ইহা ছাড়া কিছুই নাই।
(১৪১) সত্যং পরং ধীমহি,সত্য বই আর কিছুই জাগ্রত থাকে না। ভগবান সত্যরুপা,সর্ব্বময়,ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আছেন। খন্ড বোধনে তাঁহান ইয়ত্তা করা দু:সাধ্য। ভগবৎ মতিদান [?] লাভ করিয়া ভগবানের স্নেহ যোগে সুখী হয়।
(১৪২) ভবিতব্য প্রজাপতি বন্ধন-যেখানে যাহার যেভাবে সংঘটন ঘটে সেই ভাবকেই প্রারব্ধ বলে। শাস্ত্র দেখিলে সকলি মানিতে হয়,না দেখিলে আলাদা কথা। ভবিতব্য যেখানে হইবে জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ তাহা হইবেই। ইহার খন্ডনকারী এই ত্রিজগতে কেহইনাই।
(১৪৩) মনের বেগ ধৈর্য্য দ্বারা পরিহারে আবেগ পীযূষ পরিপূর্ণ সত্যকে পায়,তাহাকে পাইলে প্রেমভক্তির কোন দরকার হয় না জানিবেন। প্রেমাদি রুচিঅরুচি সকলি মনের জানিবেন। ভগবানের নিকটে কিছুই থাকে না,একমাত্র নামই থাকে। যেমন ঘুমের মধ্যে কেহই থাকে না। ভগবানই থাকে [ন],ভগবানই নাম জানিবেন। নাম করিতে কোন ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন হয় না। আপদে বিপদে প্রাণ কখনও ত্যাগ করে না জানিবেন। এই প্রাণই ভগবান। ইনি শুদ্ধ,অশুদ্ধ,পাপপূণ্য বলিয়া তারতম্য রাখে [ন] না,সমান জানিবেন। শরীরই ক্ষয়শীল,শরীরীর ক্ষয় নাই জানিবেন। ইহার অধীন হইলে সকলি প্রাপ্ত হইয়া থাকে।
(১৪৪) ”যত্র জীবস্তত্র শিব:। পাশবদ্ধো ভবেদজীব:, পাশমুক: সদা শিব:। ” প্রকৃতির বর্ণবিবর্ণে বিমোহিত হইয়া,ভাগ্যানুসারে সত্যপদ ছাড়িয়া,সীমাবদ্ধ ক্ষয়শীল দেহ-গেহ,বিদ্যা-বুদ্ধি,ধনী-মানী,শত্রুমিত্রাদির আবর্ত্তনে পড়িয়া প্রকৃতির গুণের দ্বারা ভাগ্য-ভোগ করিয়া থাকে,এই ভোগ ত্যাগ না হওয়া পর্য্যন্ত মনের জল্পনা কল্পনা বিমুক্ত হইতে পারে না,দেহের বন্ধনও কাটে না জানিবেন। ”মন: করোতি পাপানি মনো লিপ্যতে পাতকৈ:। ” অতএব মন হইতেই দেহের ভোগ আয়তন করিয়া শান্তিঅশান্তি আদি দ্বন্দ্ব উপভোগ করিয়া থাকে। মনহইতেই দেহে সুস্থ অসুস্থ ইত্যাদি উপলব্ধি হয়। জীব যখন ঘুমায় তখন মন থাকে না,দেহ গেহাদি কিছুই থাকে না। সেইরুপ প্রাণের জানিবেন। ”প্রাণোহি ভগবানীশ: প্রাণো বিষ্ণু: পিতামহ:। প্রাণেন ধার্য্যতে লোক: সর্ব্বং প্রাণময়ং জগৎ। । ” ঘুমাইলে মনাদি থাকে না। তখন প্রাণ থাকে,অতএব ভাগ্যশীল দেহের স্মিতিরুপ [?] ভাগ্যফল তিতিক্ষা করিয়া কর্ত্তৃত্ব মুক্তদ্বারা সত্যের অর্থ্যাৎ প্রাণের দাস হউন,সত্যনারায়ণ আপনার মঙ্গল করিবেন। ভাগ্য হইতেই লোকে দেহের শান্তি অশান্তি ভোগ পাইয়া থাকে। এই জন্য দেহই ভোগের আয়তনী জানিবেন ”দেহী নিত্যমবধ্যোহয়ং দেহে সর্ব্বস্য ভারত। ” দেহ ভাগ্যবর্ত্তে যখনই দেহ ত্যাগ হইবে তখনই বিদেহীরুপ নিত্যানন্দ লাভ করিতে পারিবেন।
(১৪৫) ভগবান বিভূতিযোগে বলিয়াছেন ব্যবসায়ী মধ্যে তিনি জয়রুপে বিরাজ করেন। ব্যাসকাশী পূর্ব্বপার,এখানে পাণ্ডব বর্জ্জিত স্থান বলিয়া বেদজ্ঞবিৎ জ্ঞানীগণ বলিয়াছেন। এখানে ঊণকোঢী শিব উপস্থিত হন,অন্নপূর্ণার অভাব বলিয়া এই স্থান পাণ্ডবগণে বর্জ্জন করিয়াছেন। পশ্চিমপারে অন্নপূর্ণা অবিচ্ছেদে থাকেন বলিয়া পাণ্ডবগণ অর্থ্যাৎ জ্ঞানীগণ পশ্চিমপারে বাস করিয়া থাকেন। এই জন্যই পূর্ব্বপার ব্যাস কাশী সীমাবদ্ধ জ্ঞান,খণ্ড খণ্ড ভাবে ক্ষয়শীল বলিয়া অন্নপূর্ণা হয় না। কেবল ব্যয়ই হইয়া থাকে,পশ্চিম পারে অব্যয়,ক্ষয় নাই,কারণ এখানে অন্নপূর্ণা হয়। এই জন্যই সত্যপীঠ বলিয়া [পশ্চিম পারকে] জ্ঞানীগণ নিশ্চয় করিয়াছেন,এখানেই সত্যনারায়ণ রুপে অন্নপূর্ণা,বিশ্বনাথ আনন্দকানন,অভিমুক্ত ক্ষেত্র বলিয়া নির্দ্ধারণ করিয়াছেন। সেই সত্যপীঠেই পাণ্ডব থাকে জানিবেন। অতএব সত্যনারায়ণের সেবক হইয়া,আয়ব্যয় তরঙ্গ হইতে মুক্ত হইয়া জয়যুক্তহউন।
(১৪৬) লোকসকল ভাগ্যবশে তারতম্য অনুসারে ত্রিলোকে আটক হইয়া নানাবিধ উপসর্গ উপভোগ করে,ঐ প্রকৃতির গুণের দ্বারা হ্রস্ব: দীর্ঘরুপ উপাধি অবলম্বন দ্বারা নানাবিধ আখ্যা প্রাপ্ত হয়।
(১৪৭) প্রাক্তন নির্দিষ্ট ভোগ ভিন্ন জীবগণের কোনই অধিকার নাই।
(১৪৮) সত্যনারায়ণ ভ্রমবশে পড়িয়া নানান উপাধি পরিভোগের দ্বারা আটক করিয়া রাখে। (সত্যং পরম ধীমহি!) ”বৃদ্ধতে বুদ্ধিহীনং বিগলিতদশনং ক্ষুৎপিপাসাভিভূতং। পশ্চাত্তাপেন দগ্ধং মরণমনুদিনং চিন্তয়া জীর্ণদেহম্। । ” এই অপরাধেই আটকের শাসন হইতেছে জানিবেন।
(১৪৯) ”ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র” অতএব সত্যকে ভুলিবেন না; ও ছাড়িবেন না;সত্যেই আপনার অসত্য,অস্থায়ী,বিবর্ণ পাক [?] মুক্ত করিয়া পরম শান্তিময় আনন্দপদে অধিষ্ঠান করিবেন,সন্দেহ নাই। লোকের ভবিতব্য ঘটনীয় ভাগ্যবশে যখন যাহা ঘটে তাহার ন্যায্য অন্যায্য কোন অংশেই দাবী [?] কাহারো থাকিতে পারে না। সকল ভাগ্যগতিকে ঘটিতেছে জানিবেন। অতএব সত্যনারায়ণের নিকট বানরাজার ন্যায় রক্তাক্ত কলেবরে শিব সান্নিধ্যে [?] উপস্থিত হইয়া সেবকত্ব লাভ করিয়াছিল এবং অবিচ্ছেদে [?] কার্ত্তিকের ন্যায় পুত্র অর্থ্যাৎ পবিত্র আনন্দপদ পাইয়াছিল,সেইরুপ আপনিও ঐকান্ত ভাবে ভাগ্যাংশের সকল অবস্থায় সত্যের নিকট থাকিতে চেষ্টা করিবেন। ………… লোকের যখন যাহা কিছু ঘটিয়া থাকে সকলি ভাগ্যযোগ জানিবেন। সত্যনারায়ণের ভাগ নাই,কম্পও নাই,তাঁহার সকল অবস্থাই পূর্ণ জানিবেন। তাঁহার আশ্রয় নিলে কোন অভাব কি অপূর্ন থাকে না জানিবেন। ……. ভাগ্যই সকল করিবেন।
(১৫০) সত্যনারায়ণকে ভুলিবেন না। সত্যবানকে সাবিত্রী কালের বৈষম্য চক্র হইতে উদ্ধার করিয়া ত্রিলোকের সকল ঋণ পরিশোধ করিয়াছেন,অতএব সত্যনারায়ণে [র] সেবায় নিযুক্ত থাকুন,তাঁহাকে ভুলিবেন না। ভাগ্যে যাহা যখনই ঘটে তাহা সকলি ক্ষয়শীল,অস্থায়ী বলিয়া জানিতে পারিলে বেদ উদ্ধার হয় এবং সকল ঋণমুক্ত হয় জানিবেন। সত্যের ক্ষয় নাই;অসত্যের অস্থায়ী বস্তুর অস্তিত্ব নাই জানিলে সত্যনারায়ণকে পাওয়া যায়। তাঁহান [কে] পাইলে ত্রিলোকের জন্মমৃত্যু থাকে না। অতএব সত্যকে ভুলিবেন না। সত্যই সকল বন্ধন মুক্ত করিবেন।
(১৫১) এই জনগণের পালক,সৃজক,হারকরুপে গণেশজননী অকম্পভাবে ত্রিলোককে পালন করিতেছেন।
(১৫২) লোকের ভাগ্যগতিকেই নানান উপসর্গে পড়িয়া থাকে,সেইজন্য চিন্তা না করিয়া সত্যনারায়ণের প্রতি নির্ভর করিয়া…ভাগ্যভোগ ত্যাগ করিয়া নিত্য শান্তিময় সত্যকে পাইবেন। ……..চিন্তা করিবেন না। লোকের যাহা যখন ভোগ হইয়া থাকে সকলি সময় গতিকে হয়,তাহাতে বিচলিত না হইয়া ধৈর্য্যদ্বারা ভোগমুক্ত করিতে চেষ্টা করাই সত্যের সেবা জানিবেন।
(১৫৩) ভাগ্যই ফল দিয়া থাকেন…সত্যনারায়ণ সর্ব্ববিধভাবেই ত্রিলোকের মঙ্গল করিয়া রক্ষা করেন জানিবেন। অতএব ভাগ্যরথে চলিতে পারিলে সকল রকমের বাসনা পূর্ণই হইয়া থাকেজানিবেন।
(১৫৪) ভাগ্যই ফলদাতা,যখন যে যে ভাগ্য লোকের উপস্থিত হয় তাহাতে কোনরুপ অধীর কি অসন্তোষ না হইয়া,ধৈর্য্যকে আশ্রয় করিয়া সত্যকে ধরিয়া থাকিতে চেষ্টা করিবেন। সত্যই মঙ্গলময়,সত্যের বল ছাড়া কোন জীবের কোনই শক্তি নাই জানিবেন।
(১৫৫) “যদৃচ্ছালাভ সন্তুষ্টো দ্বন্দ্বাতীতো বিমৎসর:। সম: সিদ্ধাবসিদ্ধৌ চ কৃত্বাহপি ন নিবধ্যতে। । ” স্ব স্ব ভাগের দ্বারা সন্তোষ হইয়া থাকিলে সকল ঋণই পরিশোধ হইয়া অঋণী অপ্রবাসী হইয়া যায়। …….সত্যের বর্ষ নাই,অসত্যের পূর্ণত্ব নাই,একেই ব্যাসকাশী বলে। পশ্চিমে অর্থ্যাৎ যাহাকে ত্যাগ করিয়া সীমাবদ্ধ হইয়াছি তাহাকে ব্যাসকাশী বলে,ইনিই পূর্ব্বপার,পশ্চিম পার হইল অন্নপূর্ণার স্থান। ……… প্রকৃতির তারতম্য হইতে লোকের স্বভাবপ্রাপ্তি হইয়া থাকে। প্রকৃতির গুণের দ্বারা লোক সকল পরিচালিত হয় বলিয়াই কাহার কোন কর্ম্মে দোষ হইতে পারে না জানিবেন।
(১৫৬) আপনি সর্ব্বতোভাবে সত্যনারায়ণের সেবাপরা হইয়া থাকিতে অভ্যাস করুন। সত্যনারায়ণ ছাড়া এই মরভূমের ঋণদায় হইতে উদ্ধার হইবার কেহই শক্তি রাখে না,কারণ মনের দ্বারা সত্যকে ছাড়িয়া অসত্যকে আশ্রয় করিয়া লোকসকল ভাগ্যফল ভোগ করিয়া জন্মমৃত্যু এড়াইতে পারে না। অতএব নিজ নিজ অধিকারের দাবী না করিয়া কর্ত্তব্য বিষয়ে সচেতন থাকিতে চেষ্টা করাই কর্ম্ম। ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র,কাহারও কোন দোষ নাই। ভাগ্য হইতেই ভগবৎ পদ লাভ করিয়া,কর্ম্মফল ত্যাগ করিয়া সত্যের অনুশরণে থাকিলে এই মরভূম হইতে উদ্ধার হইতে পারে। “ত্যক্তা কর্ম্মফলাসঙ্গং নিত্যতৃপ্তো নিরাশ্রয়:। ” সত্যনারায়ণ ছাড়া অন্য কোন গতি এই জীবভূমে নাই জানিবেন। ভাগ্যকে মান করিয়া দাবী দাওয়া পাওনা-দেনা যে সকল ঋণ আছে,তাহা পরিশোধ না হইলে এই যমদ্বার ভেদ করিতে পারে না। …..যমদ্বার ভেদ করিতে না পারিলে পিতৃলোক উদ্ধার হয় না। পিতৃলোক মুক্ত না হইলে পতিলোক মুক্ত হয় না,পুত্রলোক যাহাকে শুদ্ধভক্তি বলে তাহা পায় না। অতএব কায়মনোবাক্যের দ্বারা সত্যব্রত করুন,তিনিই সকল সংকটের পার করিয়া দিবেন।
(১৫৭) ভবিতব্যে থাকিলে হইবে,তাহার জন্য চিন্তা না করিয়া সত্যের অধীনের জন্য সতত: চেষ্টা করুন। সত্যনারায়ণের দাসের ক্ষয় নাই। তিনিই সকল বিধানের কর্ত্তা,তাঁহান সেবক ও নিত্য অক্ষর হইয়া থাকে,কালের বশের কোন অধিকার থাকে না জানিবেন। “ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। ” পুত্রের [?] জন্য আপনি বিধান করিবার অধিকার রাখেন না। জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ স্ব স্ব ভাগ্যই সংস্থান করিয়া থাকেন। যস্মিন দেশে,যদাচারে,যদদন্ডে,সময়ে যাহার যাহা ঘটিবে তাহার তাহা হইবেই। চিন্তা না করিয়া কেবল সত্যের উপর নির্ভর করিয়া থাকিবার চেষ্টা করুন,তাতে আনন্দই পাবেন এবং সকল ঋণদায় পরিহারে স্বরুপ লাভ করিবেন সন্দেহ নাই।
(১৫৮) জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ এই তিনটি ভবিতব্যই বিধান করেন। ভবিতব্যকে ভরসার দ্বারে রাখিয়া লোকের ভাগ্য সংঘটিত পাওনা দেনা,এই ঋণদায় হইতে উদ্ধার করিতে পারে। অঋণ হইয়া,অপ্রবাসী হইয়া অষ্টকালের আবরণ মুক্ত করিতে পারা যায়। ভাগ্যফল কেহই এড়াইতে পারে না। যাহা যাহার প্রাপ্ত আছে তাহা সেই সেই ভাগ্যানুসারে পাইয়া এবং দিয়া থাকে। সেই জন্য চিন্তা না করিয়া স্ব স্ব কর্ত্তৃত্ব ত্যাগ করিয়া সত্যের দাস হইয়া থাকিতে কৃতিশালী মাত্রই চেষ্টা করিয়া থাকে। সত্যকে ভুলিবেন না। সত্যই ত্রিজগৎ কারাগার হইতে উদ্ধার করেন,তিনি ছাড়া কেহই ত্রাণ করিতে শক্তি পায় না [?] জানিবেন………….ভবিতব্য কর্ত্তা জানিবেন।
(১৫৯) ভগবানের কৃপায় ভাগ্যফল উপেক্ষা করিয়া, ‘সত্যদেবের’ যাহার ভাগ নাই,তাঁহার সেবার কার্য্যে রত হইতে সতত: চেষ্টা করিবেন। তিনিই ভাগ্যফল দাতা জানিবেন। অঘ [ট] ন শক্তি তাঁহানই অধীন আছে। লোকসকল ভাগ্যবশে মনের আকৃষ্ট হইয় স্ব স্ব [?] ভাগে পড়িযা ফলভোগ করিয়া থাকে,সেই ভাগ্যের পরিবর্ত্তনের শক্তি ভাগীদারের নাই। অতএব সর্ব্বদা সর্ব্বতোভাবে ভগবানের আশ্রয় নিয়া,কর্ত্তৃত্ব গণ্ডী [?] ত্যাগ করিয়া,সত্যের অধীন হইয়া শান্তিময়ের পরিচর্য্যা করিতে থাকুন,সকল শান্তি বিধান [তিনিই] করিবেন। জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ,ইহার কর্ত্তা আপনিও নয়,কেহই নয়। একমাত্র ভবিতব্যই কর্ত্তা জানিবেন। ধৈর্য্যহারা হইয়া নানান উপাধি বন্টনে পড়িয়া জীবদ্দশায় লাঞ্চিত হইয়া দিগ্বিদিক হারা হইয়া পড়ে। ………যাহা ভবিতব্য ঘটাইবে তাহাই হই [বে],জোরাবলীর কিছুই নাই। সকল কর্ম্মেই ভবিতব্য কর্ত্তা জানিবেন। তাহার উপর নির্ভর করিয়া থাকিলে কোন অপচয় হয় না। ভাগ্যচক্রে যাহাই যখন উপস্থিত করেন তাহারই ভোগদান করিয়া অখণ্ড শান্তি প্রাপ্ত হইতে পারে।
(১৬০) কোন বিষয় হতাশ না হইয়া সত্যের উপর নির্ভর করিয়া থাকিতে থাকিতে সত্যই সকল ব্যবস্থা করেন। সময় গতিতে জীবের শুভাশুভ রুপ ধারণ করিয়া থাকে। ইহাকেই ভাগ্যফল বলিয়া জানিতে হয়। আপনার ভাগ্যে যাহা থাকিবে তাহাই পাইতেছে [ন] এবং পাইবেন। তার জন্য চিন্তা ভাবনার অধীন হইয়া কি লাভ হইতে পারে [?] সকল সময়ে সকল অবস্থায় মনিষীগণ ধৈর্য্যকেই আশ্রয় করিয়া ভাগ্যজনিত ফল সকল ত্যাগ করেন। ……….সত্য ভুলিবেন না। সত্যই আপনার সকল সম্পদ ও সহায়,সাহায্যকারী বলিয়া জানিবেন।
(১৬১) সত্যং পরম্ ধীমহি। সত্যদেবের কোন অংশ নাই। অসত্য…….যাহা অস্থায়ী,চঞ্চল,তারই ভাগ,ভগ্নাংশ। ইহার স্বভাব নাই,সকলই অভাব,অনন্তকাল চলিতেছে,বিরাম নাই। এই ছিন্নি ত্যাগ করিয়া সত্যদেবের পূজা করিয়া কাম্যফল ভক্তগন,প্রসাদ [?] প্রাপ্ত হইয়া সত্যলোকে অবিচ্ছেদ রুপে অবস্থান করিয়া পরমানন্দ ভোগ করেন। (ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বদা)অতএব ভাগ্যভোগ ধৈর্য্যের দ্বারা পরিহার করিয়া সত্যকে পাইতে চেষ্টা করুন। কর্ম্মক্ষেত্রে ভাগ্যানুসারেই লোকে কর্ম্মফল উপলব্ধি করে……….আপনার ভাগ্যকে কেহই নিতে পারে না। …………….সত্যনারায়নকে ভুলিবেন না। সত্যনারায়ণকে সকল বিষয়ই শান্তিপদ জানিবেন।
(১৬২) ”প্রারব্ধং ভুঞ্জমানানি সত্যধ্যান পরায়না। ” সত্যই স্থির,ধীর,গম্ভীর। অস্থায়ী,অসত্য,প্রবাহ,অনিত্য,থাকে না। ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। ভাগ্য হইতেই ভোগ উৎপন্ন হয়,সত্য হইতেই ভোগদান হয়। ”তুল্যনিন্দাস্তুতিম্মৌনী সন্তুষ্টো যেন কেনচিৎ। অনিকেত: স্থিরমতির্ভক্তিমান্ মে প্রিয়ো নর:। । ” সত্যই সমজ্ঞান। (যথাকাশ মহান)
(১৬৩) কালেই এই জগৎ চালনা করিতেছে। সময় মতেই সকল পরিষ্কার হইয়া যায়,শীত উষ্ণ দু:খাদি কাল হইতে উদয় হয়। ধৈর্য্যই সকল ধর্ম্মের সার। মনের দ্বারাই বহু অংশ হইয়া প্রাণীসকল নানা রকম উপাধি ধারণ করিয়া থাকে,এই সকলই প্রবাহমান,স্থিতি নাই – মন হইতেই কাম,ক্রোধ,লোভ উৎপত্তি হয়,স্থিতি করিয়া রাখা যায় না। এই জন্যই জীবসকল বন্ধন হইয়া থাকে। অতএব এই সকল বেগ সহ্য করিতে করিতে নিত্যানন্দরুপ প্রকাশ হইয়া পড়ে। সত্যকে ভুলিবেন না। সত্য থাকবে। অসত্য অস্থায়ী,থাকে না।
(১৬৪) সত্যং পরম্ ধীমহি। ভাগ্যফল ভোগের দ্বারা প্রশমন হয়। এ জগতে অদৃষ্টচক্রে পরিক্রম করিতেছে। ইহকালের ভোগ আয়তন দেহীর দেহেতেই ভোগ হইয়া থাকে,তাহার জন্য ক্ষোভ করিতে কি আছে। ভগবান ভিন্ন আর কিছুই থাকিতে পারে না। অতএব ধৈর্য্যই মঙ্গলদায়ক। ……. চিন্তা ভাবনা না করিয়া সর্ব্বদা ধৈর্য্যকে আয় করিতে চেষ্টা করিবেন।
সত্যং পরম্ ধীমহি। জগতে যাহা কিছু যাহার যা ভাগ্যভোগ ঘটে তাহা তাহার সেই সময়ে ভোগ করিতেই হয়। ভগবান তাঁহান সত্যতার পরিবর্ত্তন করিবার কিছুই নাই। তিনি সর্ব্বদাই সত্য;জগতে উদয়-অস্ত,অস্থায়ী,অসত্য,তার মধ্যে কিছুই সত্যতা হইতে পারে না বলিয়া ভাগ্য অনুসরন করে। ….. সময় গতিকে বন্ধুবান্ধবও অসমতা হইয়া থাকে। তাহা সকলই উদয় অস্তশীল। (১৬৫)
(১৬৬) … , হরিশ্চন্দ্র, নল, শ্রীবৎস প্রভৃতি, তাঁদের চরিত্র অনুসরণ করিলে দেখিতে পাইবেন যে সত্য ছাড়া আপন কিছুই নাই। অতএব সত্যই ধর্ম্ম, আশ্রয়ই কর্ম্ম, ভাগ্যবশেই জীবের গতাগতি হইয়া থাকে। মন হইতে ভাগ্যফল প্রসব হইয়া থাকে, অতএব মনের সমস্ত বেগ সহ্য করিতে করিতে ভাগ্যফল ভোগদান করিয়া অপরিবর্ত্তনশীল আনন্দধাম প্রতিষ্ঠার অধিকার হইয়া থাকে। সকল অবস্থা [য়]ই সত্যকে স্নেহ যত্ন করিবেন, সত্য হইতেই শান্তি পাইবেন। ভাগ্যফলে জীবগণের ভালমন্দ বিভাগ হইয়া থাকে।
(১৬৭) যাহা যখন হইবে বিধির লিখন তাহা ঘটিবে,তাহাতে জীবের ধৈর্য্য ধরাই কর্ম্ম। যার যখন সময় হয় তাহা রোধ করার কাহারো (জীবের)কোন শক্তি নাই। সকলই কালের কবলে ক্ষয় হইতেছে। দেবদানবাদি,যক্ষ,রাক্ষস,গন্ধর্ব্ব,মানব,বৃক্ষ, তরুলতা,যত প্রাণীগণ সকলি প্রাণের অধীন,যখন সময় উপস্থিত হয় তখনি কাল হয়,কেহই অকালে গতাগতি করিতে পারে না। এই সকল জানিয়া ধীর প্রকৃতি মোহিত হয় না। অতএব…শোক সন্তাপ পরিহারের জন্য ধৈর্য্য ধরিতে চেষ্টা করুন। বিশেষত: যার জন্য অনুতাপ করিতেছেন তাকে ত পাইতেছেন না,পাওয়াও যাইবে না। ………কর্ম্মস্থলের ভাগ্যফলও সময়েই ফলিয়া থাকে,তাহার জন্য চিন্তা ভাবনা না করিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে থাকুন। সত্যকে ভুলিবেন না। সত্যকে ধর্ম্ম। ইহা বৈ এ সংসারের ভাগ্যফল মুক্তি দিবার আর কেহই নাই। সকলেই ভাগ্যফল ভোগ করিয়া কেহ শান্তি পায়,কেহ অশান্তিতে থাকে ইহাই মরভূমের কালের চারণ। অতএব আপনি ধৈর্য্য ধরিয়া স্থির হইবার চেষ্টা করুন। মনেতে বিচার করিয়া দেখিবেন ধৈর্য্য ছাড়া আর কিছুই আপন নাই।
(১৬৮) ভবিতব্যই সকলের কর্ত্তা,ইহা হইতেই সময়েই ফল ভোগকরিয়া থাকে,তজ্জন্য চিন্তার কিছুই নাই। যেখানে যে সময়ে যাহা ঘটিবার [?] তাহা কেহই ছাড়িয়া দিতে পারে না।
(১৬৯) ক্ষিতি,অপ,তেজ,মারুত,ব্যোম,মন,বুদ্ধি,অহংকার,এই প্রকৃতি সর্ব্বদাই পরিবর্ত্তণশীল এবং সীমাবদ্ধ জানিবেন। এই সীমা মুক্ত হইলে ত্রিলোকের ঋণ মুক্ত হইয়া সত্যলোকে অবস্থিতি হইয়া থাকে। শব্দ,স্পর্শ,রুপ,রস,গন্ধ ইহারাই তারতম্য ভাবে বিস্তার হয়,তাতেই মনের সুখদুঃখ,আপনপর বলিয়া বিভিন্নতা উৎপন্নঘটনা ঘটে। যখন জীব নিদ্রার অধীনস্থ হয় তখন ইহাদের কেহই থাকে না। তাতে যে অবস্থা হয় সেই অবস্থাই সত্যনারায়ণের সেবার সিন্নিদান (ত্যাগ) বলিয়া জানিবেন। মনের দ্বারায়….ভাগের ভাগ হইয়া মনের বহু অবস্থা ভোগ হইতে থাকে। ইহাই মনের বাসনা,ইচ্ছা,দ্বেষ,হিংসা আদি বহু উপাধি ধারণ করিয়া তাহার দ্বারায় পাশবদ্ধ হইয়া জীব বহুরকম ঋণদায়ে জড়িত হইয়া পড়ে। সত্যবৃত্তি (যাহা অনাবরণ) সেই দুঃখসুখহীন নিত্যানন্দময় সত্যনারায়ণকে ভুলিয়া এই ভবসাগরে উর্দ্ধ অধগতিতে চলাচল হইয়া সত্যেলোকে সদানন্দরুপ তাহাকে হারাইয়া যায়। ইহাতেই জন্মমৃত্যু জরাব্যাধি হইয়া জীবগণ ঋণদায় ঠেকিয়া পড়ে। …………ভাগ্যানুসারে ফলাফল হয়,সহ্য করাই জীবনের ধর্ম্ম।
(১৭০) ভাগ্যানুসারে লোকের গতাগতি হইয়া থাকে,এই হইতেই ভোগ উৎপন্ন হয়। এই ভোগদানই সত্যনারায়ণের প্রসাদ। অতএব প্রাক্তন সূত্রেই যাতায়াত পুন: পুন: [ঘটিয়া থাকে] জীবের কোন শক্তি নাই বাধা জন্মায়।
(১৭১) ভাগ্যভোগ ভুগিতেই হইবে।
(১৭২) শরীর শব্দটাই ক্ষয়শীল,তার…ভালমন্দও সেইরুপ ক্ষয়াত্মক…।
(১৭৩) স্ব স্ব ভাগ্যবশে আকৃষ্ট হইয়া প্রকৃতির তারতম্য অনুসারে এই সংসারে সকল লোক…দেহ,গেহ,জাতি,মান,বিদ্যাবুদ্ধির গৌরবত্ব এবং ধনজন সংমিলনের আধিপত্য লাভ করিয়া থাকে। কেহই সেই ভাগ্যসেতু পার হইয়া যাইতে পারে না।
(১৭৪) সত্য ছাড়া এই ত্রিজগেতে আপন কেহ নাই। সেই সত্যকেই ভাগ্য বলিয়া থাকে। ভাগ্যই ফলদাতা জানিবেন।
(১৭৫) সত্য সেবা ভিন্ন অসত্যের সেবায় জন্মমৃত্যু বশ ত্যাগ করিতে পারে না। ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র।
(১৭৬) ভাগ্যকে মানিয়া ভাগ্যরথে চলিলে ভগীরথের ন্যায় এই সংকর অস্থায়ী তরঙ্গ হইতে মুক্তিপদ লাভ করিতে সক্ষম হয় জানিবেন।
(১৭৭) দেহ গেহ সকলি পরের,তাতে সকলি অবাধ্য,কাজেই যতই যাহা যাহা জীবপঙ্গুতে অভিলাষ হয় [তাহার] ব্যতিক্রম ঘটিয়া থাকে। এই অবাধ্য শরীরের ভরসা করিয়া কিছুই করিবার অধিকার [কাহারও] নাই।
(১৭৮) ভাগ্যানুসারে লোকে দেহ,গেহ,সমাজ প্রভৃতি আত্মীয়স্বজন দ্বারা উপভোগ করিয়া থাকে,তাহার ভাগ্যফলদাতা ভগবান (সত্যদেব) জানিবেন। শরীরের ক্ষীণতায় প্রানের ক্ষয় হয় না,মনেরই হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। শরীরের ক্ষয় নিবারণের জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা নিতে হয়।
(১৭৯) সত্যনারায়ণের সেবা করিতে হইলে স্ব স্ব প্রকৃতির গুণের ফল যে অহংকারাদি ভুলজ্ঞান জীবের পরিচালনা করে,তাহার বেগ সহ্য করিয়া সত্যের অধীন হইয়া সত্যকেই সেবা করিতে হয়জানিবেন। ।
(১৮০) যত রকমের প্রাণী এই মরভূমে আসে সকলি স্ব স্ব ভাগ্যানুযায়ী সমাজ,জাতি,দেশ,দেহগেহ,,বিদ্যাবুদ্ধি, ধনজনবৈভবাদি পাইয়া আবির্ভাব হইয়া থাকে। শত চেষ্টা করিলেও ভাগ্যের অতিরিক্ত কিছুই করিতে কি পাইতে পারে না জানিবেন। জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ প্রভৃতি সকলি ভবিতব্যের নিবন্ধন দ্বারা পাইয়া থাকে। সত্যকে ভুলিয়াই এই ভবিতব্যের আশ্রয় পাইয়া থাকে। সত্যকে ভুলিয়াই এই ভবিতব্যের আশ্রয় পাইয়া থাকে। এই ভবিতব্য নিয়ম ত্যাগের জন্যই সত্য আশ্রয় নিতে হয়।
(১৮১) সত্য অংশে [?] পড়িয়া,বেশাবরণের নানান বর্ণে রঞ্জিতভাবে আকৃষ্ট হইয়া,প্রকৃতির তারতম্যতা লাভে শরীরাদি [?] সমাজীয় বন্ধুবান্ধবের সংমিলণ ঘটিয়া প্রকৃতির গুণের দ্বারা পরিচালিত হইয়া থাকে বলিয়া নানারুপ শান্তি অশান্তি ভোগ করিয়া সুখদু:খের অংশী করে। অতএব স্বধর্ম্ম পালন করিতে করিতে এই প্রকৃতি বন্ধন কাটিয়া পুনরায় সত্যপদ লাভ করিতে পারে।
(১৮২) প্রাক্তনের ভোগ নানা প্রকারই ঘটিয়া থাকে। [যে] কোন অবস্থায়াই ধৈর্য্য রাখিবার যত্ন করিতে হয়। এই সংসারে দেহগেহ যাহা কিছু সম্মিল [ন] দেখা যায় সকলি স্বপ্ন ভঙ্গুর ন্যায়,সর্ব্বদা ভগবানের নামে জগৎ প্রতিষ্ঠা হইয়া থাকে। অতএব চিন্তা না করিয়া চেষ্ঠা করিতে ত্রুটি না করিয়া প্রারব্ধের ভোগ মুক্ত করিতে হয়। ভগবান ভিন্ন এ জগতে সকলি অলিকবৃত্তি,কেবল আগমপায়ী বলিয়াই প্রকাশ হইয়া থাকে। সর্ব্বদা নাম করিবেন,নাম বৈ আর কিছুই শান্তি দিতে পারে না।
(১৮৩) প্রারব্ধ বশত: এ জগৎ চলিয়া থাকে। যখন যাহার ভাগ্যে যাহা হয় তাহা মঙ্গলই হইয়া থাকে।
(১৮৪) ভগবান ছাড়া আর আত্মীয় বল ভরসা জগতে কেহই নাই। এই সংসার মায়ামুগ্ধেই ভুলাইয়া অনিত্য বস্তুর পোষকতায় ব্যস্ত থাকে। অস্থায়ী সম্বলের সাহায্য বশে আনন্দ দিতে পারে না,কেবল সুখদুঃখই দিয়া থাকে। অতএব সর্ব্বদা সকল অবস্থার বেগ সহ্য করিয়া,ভগবৎ প্রীতির সাহায্য প্রয়োজন করিয়া তাহারই অন্বেষন করিতে নিযুক্ত থাকাই সংসারের কর্ম্ম।
(১৮৫) ধীরে ধীরে নাম ধরিয়া ডাকিতে যে রকম হয় সেই ভাবেই নাম করিতে হয়। এই প্রকার সর্ব্বদা করিতে করিতে ক্রমেই প্রেমের অঙ্কুর হইয়া ফলফুলাদি ভাব সকল স্ফুরণ হয় এবং শরীরেও শান্তি ভোগ হয়। তাড়াতাড়ি করিলে হাঁপাইয়া শরীর কাতর হইয়া পড়ে,নামের ব্যাঘাত হয়।
(১৮৬) শরণাগতজন সর্ব্বধীর ভাবাপন্ন হইয়া গুরুর আদেশ পালনের চেষ্টা করিতে হয়। এই ছাড়া জীবের কোন শক্তি নাই। এই জন্যই শরণ নিয়া থাকার নামই গুরুসেবা।
(১৮৭) চিন্তা করিবেন না,যাহা ভগবানকরেন ভালই করেন।
(১৮৮) অনন্যচেতাই সংসারের আবর্জ্জনা পরিষ্কার করিয়া থাকে।
(১৮৯) নিশ্চয় করিয়া অভীষ্ট পদের আলোচনা করিবেন,তাহাতেই ভগবান সন্তোষ থাকিবেন সকল ভার দিয়া থাকিলে কোন অভাব আসে না। ভগবান কর্তৃত্ত্বাদি কর্ম্মফল সৃজন করেন না,কর্ম্মেরও ভালমন্দ দেখেন না। ভাবগ্রাহী জনার্দ্দন,ভাবই নেন। সুকৃতি কুকৃতির ধার ভগবানের নাই,কেবল ভক্তির অধীন থাকেন। ……..গুরুর কৃপায় রামের কাছে কারো অপরাধ কি পরাধ আসে না। অনর্থক ভ্রান্তিবশত: চিন্তা করিতে নাই।
(১৯০) জয় রাম জয় রাম দয়াল ঠাকুরের এই অমৃতবানী সকল গুরুভ্রাতা, গুরুভগ্নীদের পড়ার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। করুনানিধি,দীনবন্ধু,পতিতপাবন শ্রী শ্রী ঠাকুর রামচন্দ্রদেব আমাদের কত সহজ পথের দর্শন দিলেন এই বানীতে তাহা সুস্পষ্ট। তিনি যে কত দয়ালু। আমাদের প্রানের ঠাকুর,প্রেমের ঠাকুর। সংসার চিন্তার কারণেই মন নানাদিকে ছুটাছুটি করে। করিলেও,সময় করিয়া তাহাকে বশে নিতে প্রতি সময় গুরুর কর্ম্ম সম্পাদন করিতে চেষ্টা করিবেন,যখনই সময় পান। তাও যদি না পারেন তবে সকল ভার গুরুর উপর দিয়া উপস্থিত কার্য্যের শেষ করিতে চেষ্টা করুন এবং সর্ব্বদাই সুখের দু:খের,কি কোন লালসা,কি ভাবনা চিন্তা না করিবা জন্য চেষ্টা করুন। সেও যদি না পারেন তবে কেবল গুরুজী গুরুজী উদারার সুরনে [সুরে] সর্ব্বদা উচ্চারণ করিতে চেষ্টা করুন। সকল ক্রিয়া,স্তবস্তুতি,জপাদি যাহা নৈমিত্তিক বিধান আছে,কি ধ্যান,সকলি পারলে করিবেন,না পারলে না করিবেন,তাহাতে কোন প্রকার অপরাধ হইবে না। ……কোন চিন্তা ভাবনা করিবেন না।
(১৯১) সত্য (অর্থ্যাৎ ধীর) কে সর্ব্বদা অভ্যাস করিয়া নাম করিতে হয়। হর্তরস্যাভাবে নাম করিলে হাপাইয়া পড়িতেও হয়,নাম সাধ্য হয় হয় না,রুচিও ধরে না। (ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি)ভগবান বলিয়াছেণ। সর্ব্বদাই নাম করিবেন,অনন্যচিন্তাইনাম।
(১৯২) সর্ব্বদাই নাম করিতে থাকুন,নামই সকল অভাবে দূর করে। গুরু চিন্তা দিবানিশি করিলে তাহার ব্রহ্মপদভাণ্ড হয়,কোন অভাব থাকে না,অপার আনন্দই পাইয়া থাকে।
(১৯৩) ভগবান সর্ব্বঘটেই নানান প্রকার তরঙ্গের দায় হইতে উদ্ধার করিয়া থাকেন। ……. সর্ব্বদা নাম করিবেন। সত্যনারায়ণই কলির কলূষ নাশ করিয়া জীবের অভাব সমুদ্রের পার করিয়া ল’য়েন।
(১৯৪) সংসারের যে কোন সুখদুঃখ সকলি ইন্দ্রজালের ঘেরা,অনিত্য আগমপায়ী,বন্ধনই হইয়া থাকে। অতএব যাহাতে এই সকল সুখদুঃখময় বুদ্ধির বিষয় হইতে মুক্তি হইতে পারেন তাহারই প্রতি সর্ব্বদা মনোনিবেশ করিতে চেষ্টা করিবেন। সর্ব্বদা শ্বাসপ্রশ্বাস যত ধীরে ধীরে চালাইয়া জপের অভ্যাস করিতে পারেন,তাহাই চেষ্টা করিবেন। সংসারে যখন যাহা হইবে ভোগ নিতে নিতে,সহ্য করিতে করিতে ভোগ ক্ষয় পাইবে,সংসার মুক্ত হইবে,সন্দেহ নাই।
(১৯৫) ভবিতব্যই সংসারের বিধান করিয়া থাকেন।
(১৯৬) ভবিতব্য যেখানে উদয় করিবে [বিবাহ] সেখানেই হইবে,তাহার বাধা দেওয়া যায় না।
(১৯৭) সংসার মায়াময় (বলং বলং বাহুবলং)। খুড়া,জেঠা [প্রভৃতি] মাত্র সুখের যোগাযোগের সম্বন্ধ জানিবেন। ….. আপনার ভাগ্যকে সর্ব্বদা দেখিবেন,কাহারো কোন ত্রুটি লইবেন না।
(১৯৮) পতি সেবাই সতীর পরম ঐশ্বর্য্য,পতিযোগই সতীর পরম শান্তি।
(১৯৯) সকল ভার ভগবানকে দিয়া পরিপূর্ণ শান্তিতে এ জগতের উপস্থিত কার্য্যসকল সুসম্পন্ন করিতে থাক,ভগবান সকল বিষয়ের অভাব হরণ করিয়া পরম শান্তিতে…….রাখিবেন,সর্ব্বদাই মঙ্গল করিবেন।
(২০০) ভবিতব্য যাহা করেন তাহার হাত এড়ান যায় না
(২০১) দাম্পত্য প্রণয়ের স্বরুপ মিলনে যতনা আনন্দ হয়,বিরুপ মিলনে সেই রুপ হয়না। ভবিতব্যই ইহার কর্ত্তা,কাহারও কোন হাত নাই। ……..যাহা হয় ভগবানই করিবেন,আপনার কোন চিন্তা করিবার কিছুই নাই।
(২০২) সংসার সম্বন্ধ যাহা যাহা অদৃষ্টচক্রে ঘুরিয়া থাকে ভগবৎশরণ শক্তি দ্বারা সকল অবস্থা মুক্ত করিয়া লয়। ………প্রারব্ধ গতিকে যাহা দেয়,যে ভাব লাভ হয় তাহাই ভগবানের কৃপা জানিবেন।
(২০৩) প্রারব্ধ দত্ত কর্ম্ম [?] যাহা কিছু সংসারে উৎপন্ন হয় তাহা সকলই গুণের বন্টন মাত্র। সত্যনারায়ণই কেবল তাহাদের ভান্ডারী,তাঁহার আশ্রয় লইলে সমস্ত কর্ম্ম ক্ষয় হইয়া যায় এবং যজ্ঞ সমাপনান্তে কৈবল্যধামে লইয়া যায়।
(২০৪) ভবিতব্যই সম্বন্ধের মিলন অমিলের কর্ত্তা। যেখানে নির্ণয় হইয়া আছে,সেখানেই হইবে। ………..চিন্তার কিছুই নাই। ব্রহ্মোর্পণীয় সঙ্গ কখন বিফল হয়না। দক্ষমালীয় কর্ম্ম সকলেই ফলাফলে বিভক্ত থাকে। সর্ব্বদা নাম করিবেন। (গুরোর্ধ্যানাৎ তথা নিত্যং দেহী ব্রহ্মময়ো ভবেৎ। পিন্ডে পদে তথা রুপে মুক্তাস্তে নাত্র সংশয়:)নিরাশের কি আছে?
(২০৫) (শুণ্য ধাতু ভবেৎ প্রাণ:) ”প্রাণোহি ভগবাণীশ:,প্রাণোবিষ্ণু: পিতামহ:। প্রাণেন ধার্য্যতে সর্ব্বং,সর্ব্বং প্রাণময়ং জগৎ। । ” মনের-অর্থাৎ পূর্ব্ব পারস্থিত ব্যাসকাশীতে রুপলাবণ্যে রসাবি রসের তারতম্য দ্বারা প্রলোভিত হইয়া,সত্যরুপ যে অখন্ড অবিনাশি প্রাণ তাঁহাকে ভুলিয়া মনের জল্পনা কল্পনায় বিমোহিত হই বলিয়াই হৃদাকাশ সীমাবদ্ধ রুপের ত্যাগ করিতে পারে না,কারণ,প্রাণের কোন রুপ নাই। মনের দ্বারা সীমাবদ্ধেই রুপের অস্থায়ী বৃত্তির সম্ভোগ ঘটিয়া থাকে। জন্ম মৃত্যু এড়াইতে মনে পারে না,প্রানেই শক্তিমান জানিবেন। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেব অবশিষ্যতে। সকল অবস্থাই পূর্ণ জানিবেন। মনের পূর্ণত্ব নাই,অপূর্ণইজানিবেন। প্রানকেই পূর্ণমাসী বলিয়া প্রকাশ করিয়াছে। অতএব প্রাণের আশ্রয় নিলে অর্থ্যাৎ শূণ্যকে আশ্রয় করিলে প্রভাশূন্য,মনশূন্য,বুদ্ধিশূণ্য,নিরাময়,সর্ব্বশূন্য নিরাভাস সমাধি তস্য লক্ষণং,ত্রিশূন্য যখন উপস্থিত হয় তখনই যজ্ঞ সমাপ্ত হইয়া থাকে। ব্রহ্ম,বেদ,যজ্ঞ,ব্রাহ্মণ করিয়া বিশ্বনাথ অন্নপূর্ণার অবিমুক্ত ক্ষেত্র করিয়াছেন ব্যাস অন্নপূর্ণার স্থানে থাকিতে পারে না বলিয়াই পূর্ব্বপার অর্থাৎ মনের কাশী (জ্ঞান) বলিয়া কীর্ত্তন করিয়াছেন।
(২০৬) শূন্য চিন্তা শব্দের ভাবকেই ব্রহ্মচিন্তা বলে। ইষ্ট অনিষ্ট যোগকে বিয়োগে রাখিবার জন্য ভগবানের সেবাসাধ্য আয়তন করিতে হয়,ইহাদ্বারা ইষ্টানিষ্ট বিয়োগ হইয়া থাকে। ভগবান শব্দটিই স্বরুপ অর্থাৎ আলকনন্দ [?] শূন্যময়,এক,ব্রহ্মশব্দ বলিয়া কহা [?] হয়। বাসনামূলক আবরণকেই দেহ,শরীর সংঘাত বলিয়া জানিতে হয়। বেদাধ্যয়ন করিতে করিতে বিপ্রপদ লাভ হয়,পরে সংস্কার কার্য্যদ্বারা মার্জ্জিত হইয়া দ্বিজত্ব লাভ করে,পরে ব্রহ্মে স্থিত হইয়া ব্রাহ্মণ হইয়া থাকে। তৎপর ক্রমশ: ভাবান্তর [?] অতিক্রম করিতে করিতে রুদ্রস্থাপনাদি যোগে বিজয় হইয়া পরমানন্দাম্পদ মহাশক্তি বিকাশে চারু আনন্দ ভোগ হইয়া থাকে। অতএব দিবানিশি শূন্যস্বরুপ একমাত্র পতিব্রতাবলম্বন [?] দ্বারা কৃতকার্য্য লাভ হইয়া সত্যবান হইতে পারিবেন,ইহাই স্বভাবসিদ্ধ আনন্দ যোগ জানিবেন। পতিব্রত ধর্ম্ম যাজণ করিতে করিতে সতী হয়,পরে সীতাভাব প্রাপ্ত হয়,তৎপর জিতেন্দ্রীয় অর্থাৎ সাবিত্রীপদ পায়। কালমুক্ত হইয়া সত্যস্বরুপ অবিচ্ছিন্ন আনন্দ সহ পরম প্রীতি লাভ করিয়া থাকে,ইহাই ত্রিসন্ধ্যা জানিবেন।
(২০৭) ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। জননী জন্মভূমি স্বর্গ হইতেও শ্রেষ্ঠ। ভয় শোকে [কাতর] হইয়া পালাবার স্থান একমাত্র সত্য বই আর নাই। সকল লোকেই মরভূমের অধীন। সত্যই মরভূমের অতীত জানিবেন। অতএব সত্য আশ্রয় করিয়া থাকিতে চেষ্টা করাই জীবের স্বধর্ম্ম।
(২০৮) যেখানে পথহারা হয় সেখানে ধৈর্য্যই ধর্ম্ম জানিবেন। …………তাহা হইলেই পথ বিপথ কি,নির্ণয় হইবে। অহংকর্ত্তা হইয়া পথ ঠিক পাইতে পারে না। যদি পাইত তবে কেন সীমাবদ্ধ [অবস্থা] জীবের ঘটে?
(২০৯) সংসার মায়ামুগ্ধ,প্রাক্তন সূত্রের দ্বারা বন্ধন হইয়া চলিয়া থাকে। গতাগতি হ্রাসবৃদ্ধিরুপে সুখী দু:খী হইতেছে। যাহা হউক,ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র।
(২১০) প্রাক্তনই ভোগের উপকরণ,উদয়-অস্ত দ্বারা অনুলোম বিলোম করিয়া থাকে।
(২১১) প্রাক্তন কর্ম্ম কাহাকেও ছাড়ে না,কাহার [ও] কোন দোষ গুণ হয় না। স্ব স্ব ভাগ্যবশেই সুখদুঃখরুপ ভাগ্যসাগরে লোকসকল ভ্রমণ করিয়া থাকে। অতএব সত্যের অধীন হইয়া থাকিতে চেষ্ঠা করুন,তিনিই এই সংকট হইতে উদ্ধার করিয়া লইবেন। …… সত্যনারায়ণের সেবা করিয়া,এই ত্রিলোকের ভাগ্যফল দান করিয়া পরম শান্তি পাইবেন। স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্ম্মো ভয়াবহ: , জানিবেন।
(২১২) মনের দাস না হইয়া সত্যের অধীনে থাকিতে চেষ্টা রাখুন। সত্যকে পাইলেই ……জন্মতিথি পরিমার্জ্জিত হইয়া অজ,নিত্য শাশ্বতকে লাভ করিতে পারিবেন। একেই জন্ম উৎসব বলে।
(২১৩) ‘মন: করোতি পাপানি,মনো লিপ্যতে পাতকৈ:। । ” সত্যং পরম্ ধীমহি। …….. ঘুমাইলে দেহ গেহ মনাদি কোন উপসর্গই থাকে না। জাগরণে বহু বন্টনে ঘেরায় পতিত হইয়া অহংকারের চক্রে অন্ধচক্র ভ্রমণ করিয়া থাকে। যাহা হউক,সত্যের সেবক কখনও ঘোরে না,সকলি গোচর হইয়া থাকে।
(২১৪) ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র,ভাগ্যই ফল দিয়া থাকে। এই ভাগ্য আবরণ শূন্য হইলে যে অবস্থা তাহাই ভগবান,কি ভাগ্যবান,বলিয়া জানিবেন। ইহাকেই সাবিত্রীব্রত বলে। ইহার দ্বারা সত্যবানকে সাবিত্রী কালের বন্ধন হইতে উদ্ধার করিয়া তিন কুল,অর্থাৎ পিতা (ধর্ম্ম) পতি (কর্ম্ম) পুত্র (পবিত্র,শুচি) উদ্ধার করিয়াছিলেন,জানিবেন। অতএব অখন্ড সত্যকে ধরিয়া থাকিবেন,সত্যই যথাসম্ভব ভাগ্যফল হইতে উদ্ধার করিয়া লইবেন।
(২১৫) ………স্বৎগুরুর অধীন হইয়া,কামরুপা যে দেহ তাহার সীমা অতিক্রম করিয়া মনের বুদ্ধি দ্বারা যে সকল ভাব লোকের প্রকৃতির গুণের দ্বারা পরিচালিত হয় তাহার সঙ্গ ত্যাগ করিয়া,নিত্য যিনি সৎ,যাহার অংশ,কি অপূর্ণ,কি কম্প নাই,সেই যে শক্তি যাহাকে ত্যাগ করিয়া থাকিতে পারি না,যিনি আমারও [?] প্রবৃত্তি বৈষম্য দোষ দেখেন না,তিনিই সৎ-অসৎ বর্জ্জিত শক্তি,তাঁহান প্রকাশ শব্দ হইতে গুরু শব্দ বাচ্য হইয়া থাকে,ইহাকেই সদগুরু বলিযা জানে। প্রকৃতির গুণে সত্যকে জানিতে না পারিয়া,অত্যন্ত মলিন প্রকৃতি তার [?] মিলনকেই সঙ্গ [?] করিতে গিয়া দোষগুণের প্রবন্টনে পড়ে,কাজেই ভালমন্দ বিচারক হইয়া দিশা হারাইয়া ইতস্তত হইয়া থাকে। সত্যের অংশে গেলে সৎ-অসৎ বিচার থাকে না,যেমন গাঢ় ঘুমের ঘোরে পড়িয়া থাকিলে বিচার করার কোন ক্ষমতাই থাকে না। সেইরুপ সত্যকে পাইলে ভালমন্দ কিছুই থাকে না,এই অবস্থাকেই সদগুরুলাভ বলে। কারণ দেহ প্রকৃতি অতি ময়লা [?] ক্ষয়শীল বস্তুর দ্বারা গঠিত হয়,তাহাকে শত ধৌত করিলেও সাফ [?] অর্থাৎ শুদ্ধ হয় না,ময়লাই থাকে। জীবসকল সত্যকে ভুলিয়া,অসত্যকে সত্য করিতে গিয়া বিড়ম্বনা ভোগ করিয়া থাকে। সত্যকে আশ্রয় করিয়া থাকিতে চেষ্টা করিতে করিতে সত্যপদই লাভ করিতে পারে। মনের সুখদু:খাদি অস্থায়ী,তাহারা কেহই ঘুমাইলে থাকে না। জাগরণেই নানান ভাগে বাটারার সামীলে প্রবেশ করিয়া থাকে। না দেখিবে কারো দোষ, না করিবে কারো রোষ,}মহাজনের পদ। আপনিহইবেসাবধান।
(২১৬) বলং বলং বাহুবলং। উদ্যোগভাবে [?] চেষ্টা করিলেও ফলাফল ভাগ্যানুসারেই হইয়া যায়। চেষ্টা করিবেন,কাহারো মুখাপেক্ষায় থাকিতে নাই। ……সংসার মায়াময়,সময় অনুসারে বর্ত্তমানে নাম ভিন্ন আর কেহই সাধ্যপরা হইতে পারে না।
(২১৭) মন: করোতি পাপানি,মনো লিপ্যতে পাতকৈ:। মনের যে সকল জল্পনাদি উপসর্গ উৎপন্ন যখনই হইবে,তখনই ধৈর্য্যের সহচর হইয়া মনোবৃত্তি খর্ব্ব করিবে। ইহাই সকল সাধন এবং সত্যের সেবা ও নাম করা জানিবেন। অভ্যাস হইতেই মন বিবর্ত্তন হইয়া থাকে। যেমন ঘুমাইলে মন থাকে না,দেহাদিও কিছুই থাকে না,তখন সত্য ত থাকে। তাহাকেই প্রাণ [?] বলে জানিবেন। ধৈর্য্যকে রক্ষা করিবার চেষ্টা করার নামই সত্যব্রত জানিবেন। প্রকৃতির গুণের তারতম্য সকলেই বিকৃতি লাভ করে। তাতে দ্বন্দ্ব মোহ উদ্ভব ঘটিয়া থাকে।
(২১৮) জীবের স্বভাবই কর্ত্তৃত্বহীন,কারণ যা কিছু চেষ্টা করে তাহা পূর্ণ করিতে সক্ষম হয় না। প্রারব্ধবশে আকৃষ্ট হইয়া প্রতিভাবেরই দাসত্ব স্বীকার করিয়া থাকে। এমত অবস্থায় যে কর্ত্তত্বভাবে বিভোর থাকে তাহা ভ্রান্তি মাত্র। অজ্ঞানবশত:ই হইয়া থাকে। যাহা হউক,জীবের যখন কোন বিষেয়েই কর্ত্তৃত্ব চেষ্টা আয়তন কিছুই নাই,এমত অবস্থায় যখন যেরুপ অদৃষ্টচক্রে ভোগ উপস্থিত হয় তাহাতে সন্তোষ থাকিয়া কর্ম্মক্ষেত্রের ভাগ্য অনুসারে যাহা যখন উপস্থিত হয় তাহাই মনোযোগের সহিত করিতে করিতে সংসারের কর্ম্মমুক্ত হয়,পরে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি মুক্ত হইয়া স্থির প্রাজ্ঞ ধনের অধীনস্থ থাকে। ইহাই জীবের মোক্ষধাম। ভাগ্যবশে জগতে তারতম্যভাবে অর্থাৎ উন্নতি অবনতি,লাভ লোকসান,সিদ্ধঅসিদ্ধ,শক্তিমান অশক্তিমানী হইয়া অভিমানি ভাবে বিবৃত হয়। সেই জন্য ফলাফলে আসক্তিহীন হইয়া জগতে উপস্থিত কর্ম্ম ভাগ্যবশে যাহা ঘটে তাহাই করা কর্ত্তব্য। কর্ম্মমুক্ত না হওয়া পর্য্যন্ত জীব নানান বাসনা জালে জড়িত থাকে। অতএব নিরপেক্ষ অর্থাৎ কোন চিন্তা ভাবনা না করিয়া সংসারের ব্যবস্থানুসারে কর্ম্ম যথাসাধ্য করিবেন।
(২১৯) এই সংসারে মায়ামুগ্ধ প্রকৃতির দ্বারা জীবগণ মোহিত থাকায় অনিত্য পদার্থের জন্য সর্ব্বদা মুগ্ধহয়। তাহাতেই শুভ অশুভ কল্পনায় ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই মায়া ভ্রান্তি মোচন করিবার জন্য সংসার মধ্যে আত্মসংযম (সহিষ্ণুতাদি অকর্ত্তৃত্ব ভাবের)সমাশ্রিত হইয়া কার্য্যক্ষেত্রে ভাগ্য অনুসারে শুভশুভাদি লাভ লোকসান ইত্যাদি কল্পনাসূত্রের বেগ সহ্য করিতে করিতে এই উপস্থিত ভাগ্য আবরণ রুপ ক্ষন প্রয়োজনীয় ভ্রান্তিমূলক বিষয় বাসনাকে ত্যাগ করিয়া,নিত্যস্বরুপ পরমানন্দ আবরণে ভগবানের স্বরুপ দাসত্ব লাভ করিয়া সর্ব্বদা শুভ শুভাদি কাল্পনিক ভ্রান্তি প্রকৃতি হইতে মুক্তিলাভ করিয়া থাকে। এইরুপ সহিষ্ণুতাকে সর্ব্বদা আহরণকরত: সত্য প্রকৃতির ঋণ পরিহার হইয়া সত্য আশ্রয় পাইয়া থাকে। অতএব………. অদৃষ্টচক্রের তারতম্যকে হৃদয়ে সর্ব্বদা মনের মালিন্য চিন্তা আদি পরিত্যাগ করিয়া যথাশক্তি ভগবৎ সেবায় লিপ্ত থাকিতে চেষ্টা করুন। ………কোন চিন্তা করিবেন না। মায়াতে জড়িত হইয়া গুনের তারতম্যবশত: যাহা কিছু ভালমন্দ বিচার হয় তাহা সকলি ভ্রান্ত ও অস্থায়ী জানিবেন। ভগবান জীবের জন্য সততই প্রেম পীযূষ দ্বারা ব্যাপ্ত হইয়া আছেন,তাঁহাকে ভুলিতে নাই। এই সংসারে অনিত্যকারী অহংকার অভিমানাদি বশে আত্মস্মৃতি ভ্রান্ত হইয়া লোক কর্ত্তৃত্ব অভিমানী হয়,তজ্জন্যই নানারুপ অবস্থায় মায়াচক্রে ঘুরিয়া বেড়ায়। একমাত্র ভগবানই সর্ব্বস্ব। এই সংসারে আয়-ব্যয়,হ্রাস-বৃদ্ধি যাহা ঐশ্বর্য্য দেখে,তাহা সকলি ভ্রান্ত কল্পনা হইতে প্রবোধনহয়। …….মনকে কোন বিষয়ে খারাপ করিবেন না। এই মনই কিন্তু আপনার সঙ্গের সঙ্গী,এই মনকেই উদ্ধার করা প্রয়োজন বিধায় জীব ভগবানের শরণ নিয়া,অদৃষ্টচক্রের ফলাফল তুচ্ছ করিয়া তাঁহারই পদাশ্রয় লইতে চেষ্টা করিয়া থাকে। বিষয়ের তারতম্যসূত্রে মনকে কলুষিত করিয়া কুপথারুঢ়ে টানিয়া লয়। অতএব সর্ব্বদা এই অনত্যি বাসনার তরঙ্গ হইতে সহিষ্ণুতা দ্বারা মনকে সততই সৎপথে (ভগবৎ সেবায়) রাখিতে চেষ্টা করুন। এই সংসারে মনে যা চায় তাহাই পাপ, তাহাই মৃত্যুভোগ। অতএব মনের ইচ্ছাদিকে কিছুতেই পরিতোষের চেষ্টা করিবেন না। এইরুপ মনের গতিগুলোকে প্রতিহত করিতে করিতে পরম শক্তি উৎপন্ন হইয়া নিত্যানন্দময় করিয়া লইবে। গুণ হইতেই মনের চঞ্চলতা হইয়া থাকে। নির্গুণ তত্ত্বে যেতে দেয় না,ইহাকেই কামরুপ বলিয়া থাকে। এই কামই সংসারের মুক্তি কন্টক। এই কামকে দলন [?] করিয়া ভক্তির রসে ভগবান সেবায় মনকে স্থাপন করিবেন। ……কর্ত্তৃত্ব বুদ্ধিকে ছাড়িয়া অকর্ত্তা বুদ্ধিই পথের সম্বল,ইহাই পরম ভক্তি। (সর্ব্বধর্ম্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। অহং ত্বাং সর্ব্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচ:। । )এই ভগবৎ বাক্য। এই প্রকার সংসারের যাবতীয় বাসনার তাড়না হইতে মুক্ত পাইয়া নিত্যভাব ধারন করিয়া থাকে। ……..চিন্তা করিবেন না,ভাগ্য পরীক্ষা করিয়া চলিবেন। সকল অবস্থাকেই সমান করিয়া লইতে চেষ্টা করিবেন।
(২২০) লোকসকল স্ব স্ব ভাগ্যবশে আকৃষ্ট হইয়া ধনীমানি,দেহগেহ,বিদ্যাবুদ্ধি,শক্তিসামর্থ্য, শত্রুমিত্রাদি নানান উপাধি সম্বলিত হইয়া থাকে,তজ্জন্যই লোকে প্রকৃতির গুনের তারতম্য গতির ভাগে পড়িয়া ভোগ ভুগিতে বাধ্য হইয়া থাকে। ভগবান,যাঁহাকে জন্মমৃত্যুরহিত অখন্ডস্বরুপ বলিয়া মুনি ঋষিগণ নিশ্চয় করিয়াছেন,তাঁহানকে লোকসকলই ভুলিয়া,স্বয়ং কর্ত্তা হইয়া,কর্ম্মপাশে আবদ্ধ হইয়া,কার্য্যকারণ কর্ত্তৃত্বের আওতায় পড়িয়া স্ব স্ব ভাগ্যানুফল উপলব্ধি করে। কর্ম্মফল দাতা একমাত্র সত্যই হ’ন,অসত্য যে অস্থায়ী,যাহাকে লোকে ভাগ (অংশ) বলিযা উপাধি করেন,সেই ভাগ ত্যাগ ব্যতীত সত্যকে উপলব্ধি করিতে পারে না। এই সত্যনারায়ণের সেবায় রত থাকিতে থাকিতে অসত্য (অস্থায়ী, যাহারা ঘুমের ঘোরে থাকে না)তাহাদের [?] বাদ করিয়া সেই সত্যকে পাইতে পারে। কারণ সত্য ব্যতীত স্থায়ী এবং নিত্য আর কিছুই নাই।
(২২১) জগতে কামনা প্রপিড়ীত হইয়া,ভ্রমমূলক ক্ষনস্থায়ী,জন্মমৃত্যুশীল,উদয় অস্ত প্রভাভাবে লুব্ধবশত: ভাগ্যভোগ করিয়া সমনের দায়মুক্ত করিতে সক্ষম হয় না বলিযাই বহু প্রকৃতির বশে আবদ্ধ থাকে। সত্যনারায়ন প্রতি ঘরে ঘরে অবতার আছেন,তাঁহানকে ভুলিয়া জীবভাবে অদৃষ্টচক্রের লুনঠিত হইয়া পড়ে। ইহা হইতে ভগবান গৌরাঙ্গ নিতাই অদ্বৈতরুপে অবতার হইয়া নামরুপে প্রচারকরত: এই ভাগ্যমুক্ত করি [য়া] জীবগণকে স্বরুপ দশায় ভুক্ত করিয়া লইয়াছেন,ইহার বিধানই ভগবান ছাড়া কিছুই নাই। নামেতেই সুখদু:খের পার করিয়া থাকে-নামে ভবসাগর শুকাইয়া ফেলে,ভব রাখে না,কামেতে ভবভাগ ভাগ্যবৃদ্ধি করে। প্রবল প্রতাপে জীবগণকে প্রলোভন শাসন দ্বারা আবদ্ধ করিয়া নেয়,জন্মমৃত্যু,কামকামী বিধানে স্মৃতির লোপ করিয়া,দন্ড রিয়া কালচক্রের ভ্রমণ করিয়া দেয়। ……..নামেই সকল ভাগ্যঋণ মুক্ত করিয়া পঞ্চানন্দরসে ডুবাইয়া দিবে। ভাগবৎ পদাচরণ ভিন্ন সঙ্করীয় ঋন পরিশোধ করিবার শক্তি জীবের নাই। ……. নামের অধীন থাকিলেই নামময় হইয়া ভবসাগরের ঋণসকল মুক্ত হইয়া যাইবে। ঋণবদ্ধ থাকিলে যে সমস্ত অদৃষ্টচক্রের খাদ্যপায়ী [?] হইয়া সুখ সম্ভোগ করে তাহা কতক্ষন থাকে [?] বিচার দ্বারাই পরিশোধ করা যায়। নামই সত্য,নামই কৈবল্য। ভাগ সত্য নয়,কৈবল্য ও নয়।
(২২২) প্রাক্তন-ভোগ ত্রিবিধ উৎপাত হইতে সম্পাদন হইয়া থাকে। লোকসকল ঐ উৎপাতে বিভোর হইয়া নানা উপায় কর্ত্তা হইয়া করিয়া থাকেন বটে,কিন্তু মরভূম ত্যাগ করিতে পারে কে? একমাত্র সত্যই মরভূমের পারে অবস্থিত আছেন। এই সত্যব্রতই মর সংকরজাত ত্রিবিধ উৎপাত হইতে রক্ষা করিয়া আপন কোলে স্থানদিয়া ত্রাণ করেন জানিবেন। অতএব সত্যনরায়ণের গোরে অর্থাৎ কোলে পড়িয়া থাকিলে কোন উপদ্রব লাগিতে পারে না। সত্যনারায়ণকে ভুলিয়াই অসত্য অর্থাৎ রসে লোভিত হইয়া,মরভূমের ঋণপাশে আবদ্ধ হইয়া বিবিচ্ছেদভাবে ভ্রমণ করিয়া নানারুপ ভয়,শোক,আতঙ্ক উপভোগ করিতে করিতে দিশা হারাইয়া ফেলে।
(২২৩) স্ব স্ব ভাগ্য অনুসারে লোকসকল স্থানাদি গৃহাদি প্রাপ্ত হইয়া থাকে। ”ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র”সেই জন্য চিন্তা ভাবনা না করিয়া সত্যরুপ স্থাপনের সঙ্গ করুন। তিনিই সৃজন,পালন,সংহরণ। তিনি ছাড়া আর নাই। ভুলবশত: কর্ত্তৃত্বাভিমানে তাঁহানকে ভুলিয়া গিয়া ক্ষয়যুক্ত বস্তুর কর্ত্তৃত্ব করার দরুণ ঋণপাশে জীব বন্দী হইয়া আটক পড়ে। এই পাশমুক্ত হইলে অভ্রান্ত শান্তিলাভ হইয়া সুচারূ মঙ্গলের অধিকারী হইতে পারে। ভাগ্যানুসারেই বাড়িঘর হইবে। তাহার চিন্তা করা কেবল বন্ধন বাঁধন ছাড়া কিছু নয়। গাঢ় ঘুমাইলে যারা থাকে সে সত্য, যারা থাকে না তারা অসত্য (অস্থায়ী) বলিয়া জানিবেন। অতএব সত্যের নিকট থাকিতে চিন্তা করিবেন-তিনিই এই ভবসাগর হইতে উদ্ধার করিবেন।
(২২৪) ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। কর্ম্মেরই অধিকার লোকের,ফলের অধিকার সত্যের। ফলদাতা ভগবান,ফলের জন্য চিন্তা না করিয়া উপস্থিত কর্ম্মসমাপ্তের জন্য যত্নবান হউন। এই কর্ম্ম হইতেই পাশমুক্ত হইয়া লোক অলকার দর্শন পায়,অর্থাৎ বন্ধন মুক্ত হইয়া পাদোদক অর্থাৎ সত্যের আশ্রয় পাইয়া থাকে। আশ্রয় পাইলে জন্মমৃত্যু থাকে না জানিবেন। ইহার নাম ”প্রসাদ” বলিয়া প্রকাশ করে। সত্যের সেবাই কর্ম্ম,অসত্যের সেবা কেবল আকাম। বন্ধনই হইয়া থাকে।