যে লোকোত্তর মহাপুরুষের পত্রাবলীর সারাংশ এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত হইল পাঠকবর্গের অবগতির জন্য তাঁহার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় গ্রন্থারম্ভে জুড়িয়া দিতে অনেকেই আমাকে অনুরোধ করিয়াছেন। আমিও এই অনুরোধের যৌক্তিকতা অস্বীকার করিতে পারি না। শ্রীশ্রীঠাকুরের আশ্রিতবর্গের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাঁহাদের তাঁহার সাহচর্য্যের সুযোগ অতি অল্পই হইয়াছে এবং স্বভাবতঃই তাঁহারা ঠাকুরের সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানিবার জন্যে উৎসুক হইয়া রহিয়াছেন। পক্ষান্তরে এই পত্রাবলী হয়তো এমন অনেকের হাতে পড়িবে যাঁহারা ঠাকুর সম্বন্ধে কিছুই জানে না এবং তাঁহাদেরও এই বিষয়ে একটা কৌতুহল হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক। সুতরাং শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি জীবনী যে লিখিয়া দেওয়া প্রয়োজন ইহা অস্বীকার করিতে পারি না।
কিন্তু নানা কারণে আমি অধিক দূর অগ্রসর হইতে পারিতেছি না। বন্ধুবর৺ প্রভাতচন্দ্র চক্রবর্ত্তী মহাশয় তাঁহার পরিকল্পিত “শ্রীশ্রীরামঠাকুরের জীবনী”র ভূমিকায় লিখিয়াছিলেনঃ “যদিও দুর্দ্দমনীয় ইচ্ছার তাড়নায় আজ তাঁহার মহাপুরুষ চরিত লোকলোচনের গোচরে আনিতেছি, তথাপি আমার এই উদ্যম যে তাঁহার সর্ব্বথা অনভিপ্রেত তাহাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই। যাঁহার শ্রীশ্রীচরণে আত্মবিক্রয় করিয়াছি, তাঁহার কথা লিখিতে গিয়া অন্যায়কেও ন্যায় বলিয়াই মনে করি। নিয়ত পরিতাপের জগতে থাকিয়া এবং সুখ-দুঃখের প্রবল আবর্ত্তনে নিপতিত হইয়া যে কয়টি মূহুর্ত শ্রীশ্রীরামঠাকুরের গুণ কীর্তনে অতিবাহিত করিতে পারিব তাহাই আমার কলুষপঙ্কিল জীবন প্রবাহের মধ্যে অতি শুভক্ষণ। পরিশেষে সাক্ষাৎ দয়াবতার শ্রীশ্রীরামঠাকুরের শ্রীচরণে আমার কাতর নিবেদন এই যে, এই জীবন বৃত্তান্ত লিখিতে গিয়া তাঁহার অনভিপ্রেত কর্মানুষ্ঠান জন্য মাদৃশ নরাধমের অপরাধ তিনি যেন নিজগুণে ক্ষমা করেন”। আমি নিজেও যতদূর জানি শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁহার জীবনবৃত্তান্ত লিখিয়া প্রচার করার উদ্যমকে কখনও অনুমোদন করেন নাই। পক্ষান্তরে আমি নিজে যে এই কার্য্যের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত ও অনধিকারী সে সম্বন্ধে আমার বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই। বন্ধুবরের যে সাহস ছিল সে সাহস যে আমার নাই ইহা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতেছি।
কেবল ইহাই নহে শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনী সম্বন্ধে অনেক অনুসন্ধান করিয়াও তাঁহার জীবনের প্রথমার্দ্ধের অনেক কথাই সঠিক জানিতে পারি নাই। আমি আজীবন ইতিহাসের ছাত্র এবং এই বিষয়ে আমাদের একটা দুর্ব্বলতা আছে। নিশ্চিত হইতে না পারিলে আমরা সহজে কোন কথা লিপিবদ্ধ করিতে চাহি না। সুতরাং শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনী লেখার ভার ভবিষ্যতের এবং উপযুক্ততর পাত্রের হস্তে ছাড়িয়া দিয়া আমি অতি সংক্ষেপেই আমার বক্তব্য শেষ করিব।
আমার মনে হয় যে, শ্রীশ্রীঠাকুরের পূত জীবন কাহিনী মোটামুটি তিনভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে। জন্মকাল হইতে কামাখ্যায় গুরু সাক্ষাৎকার পর্য্যন্ত প্রথম ভাগ, গুরু সাক্ষাৎকার হইতে স্থায়ীভাবে আনুমানিক ১৯০৭/০৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরিয়া আসা পর্য্যন্ত দ্বিতীয় ভাগ ও সেই সময় হইতে ১৩৫৬ বঙ্গাব্দের পূত অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে প্রকট লীলা সম্বরণ পর্য্যন্ত তৃতীয় ভাগ। শ্রীশ্রীঠাকুর ফরিদপুর জেলার ডিঙ্গামানিক নামক স্থানে ১২৬৬ বঙ্গাব্দে মাঘী শুক্লা দশমী তিথিতে বৃহস্পতিবার রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতৃদেব৺ রাধামাধব চক্রবর্ত্তী প্রকৃত সাধক ও জপতপপরায়ণ ছিলেন। মাতা৺ কমলা দেবী অতিশয় সরল প্রকৃতি, সেবাপরায়ণা ও রন্ধনকার্য্যে অত্যন্ত নিপুণা ছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখেই ইহা শুনিয়াছি। শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁহার কনিষ্ঠ যমজ ভ্রাতা লক্ষণ ঠাকুরের জন্ম বিষয়েও এক অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের নিজমুখে এই বিষয়ে কিছুই শুনিনাই বলিয়া তাহা এখানে প্রকাশ করিতে দ্বিধাবোধ হইতেছে। সে যাহাই হোক, ঠাকুরের বাল্যলীলা সম্বন্ধে তাঁহার নিকট যাহা শুনিয়াছি তাহারই কথঞ্চিৎ এই স্থানে লিপিবদ্ধ করিতেছি।
যাঁহারা শ্রীশ্রীঠাকুরের সহিত পরিচিত তাঁহারা সকলেই জানেন যে, তিনি নাম মাত্র আহার করিতেন। একদিন আমার প্রশ্নের উত্তরে বলিয়াছিলেন যে, কিছু কিছু সুদ দিলেই মহাজন সন্তুষ্ট থাকে, অধিক প্রয়োজন হয় না। এই স্বভাব তাঁহার বাল্যকাল হইতেই ছিল, নিতান্ত পীড়াপীড়ি না করিলে সহজে কিছুই খাইতে চাহিতেন না। তাঁহার মাতৃভক্তি ছিল অপরিসীম, অতুলনীয় বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। কিন্তু এই আহারের ব্যাপার লইয়া মাতা পুত্রে বাদ-বিসম্বাদের অন্ত ছিল না। শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্য জীবনেও যখন তিনি ঘুরিয়া ফিরিয়া মাঝে মাঝে দেশে আসিতেন তখনও এই আহার লইয়া মাতার সহিত তাঁহার মতান্তর ঘটিত। মাতার স্বভাবতঃই ইচ্ছা হইত যে, নানাবিধ ব্যঞ্জনাদি রন্ধন করিয়া সম্মুখে বসাইয়া পুত্রকে পরিতোষ পূর্ব্বক ভোজন করান, এইদিকে ঠাকুর জঙ্গল হইতে কতকগুলি লতাপাতা কুড়াইয়া আনিয়া তাহাই সিদ্ধ করিয়া আহার করিতে বসিতেন। এই প্রসঙ্গে ঠাকুর নিজেই বলিয়াছেন, “কখনও কাহাকে কোন কষ্ট দিয়াছি বলিয়া মনে পড়ে না, শুধু খাওয়া লইয়া মা’কে অনেক কষ্টই দিয়াছি”।
শৈশবকাল হইতেই শ্রীশ্রীঠাকুর একটু অনন্যসাধারণ ছিলেন। তিনি নিজের সম্বন্ধে বেশী কিছু কখনও বলিতে চাহিতেন না কিন্তু তথাপিও তাঁহার কতকগুলি কথার ভাবে আমার মনে হইয়াছে তিনি জাতিস্মর হইয়াই জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। সেইজন্যই বাল্যকালে তাঁহার কথাবার্তা ও আচরণ অনেক সময়েই বিস্ময়ের উদ্রেক করিত। শৈশব হইতেই তিনি একাকী নিজমনে থাকিতেই পছন্দ করিতেন এবং কালীপূজা, হরিপূজা প্রভৃতিই তাঁহার বাল্যখেলা ছিল। সামান্য কিছুদিন পাঠশালায় যাতায়াত করিয়াছিলেন কিন্তু আমাদের এই লৌকিক বিদ্যায় তাঁহার বিশেষ কোন প্রয়োজন না থাকায় অধিক দূর অগ্রসর হ’ন নাই। বাল্যকালে ঠাকুরের এক প্রধান আকর্ষণ ছিলেন তাঁহার পিতৃদেবের গুরুদেব শিবতুল্য পরম তাপস৺ মৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন। তিনি ঠাকুরকে অত্যন্ত ভালোবাসিতেন। ঠাকুরের মুখে শুনিয়াছি যে, তাঁহার পিতৃদেব যখন মৃত্যুশয্যায় সেই সময়ে গুরুদেব কাছাড় হইতে তাঁহাদের বাড়িতে আগমন করেন এবং পিতৃদেবের গাত্রে পদস্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহার দেহত্যাগ হয়। ইহার প্রায় এক বৎসর পরে ফরিদপুর জেলার জপসা নামক গ্রামে গুরুদেব অসুস্থ হইয়া পড়েন এবং এই সংবাদ শুনিয়া শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁহার মাতার সহিত গুরুদেবকে দেখিতে যান। সেই সময়েই গুরুদেবের দেহত্যাগ হয়, তখন ঠাকুরের বয়স ৮ বৎসর। ইহার পর কোন এক অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে তিনি সূক্ষ্মে(কোনও অলৌকিকভাবে) দীক্ষা লাভ করেন ও পরে কামাখ্যায় আর এক অক্ষয় তৃতীয়াতে গুরুদেবের সহিত স্থূলভাবে সাক্ষাৎ লাভ হয়। এই সময়ে ঠাকুরের বয়স কত ছিল তাহা সঠিক জানিতে পারি নাই।
ঠাকুরের জীবনীর দ্বিতীয় অধ্যায় অত্যন্ত কুহেলিকাচ্ছন্ন । কামাখ্যা হইতেই তিনি তদীয় গুরুদেবের সহিত নিরুদ্দেশ হইয়া যান এবং আনুমানিক ৮/১০ বৎসর পর দেশে ফিরিয়া আসেন। সম্ভবতঃ ইহার কিছু পরেই তিনি নোয়াখালী চলিয়া যান এবং সেখানে ও ফেনীতে কয়েক বৎসর অতিবাহিত করেন। কবিবর৺ নবীনচন্দ্র সেন যে, ঠাকুরের বয়স যখন ২৬/২৭ বৎসর তখন ফেনীতে ঠাকুরের সঙ্গে তাঁহার পরিচয় হয় এবং সে সময়ের ফেনী ও নোয়াখালির কতকগুলি ঘটনার তিনি উল্লেখ করিয়াছেন। (“আমার জীবন – চতুর্থ খণ্ড”, “প্রচারক না প্রতারক”) কিন্তু ইহার পরেই ঠাকুর আবার নিরুদ্দেশ হইয়া যান এবং ১৯০২/০৩ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি কলিকাতা অঞ্চলে ফিরিয়া আসেন। এই দুইবার নিরুদ্দেশ অবস্থায় তিনি কোথায় কোথায় ছিলেন এবং কি করিয়াছেন সে সম্বন্ধে খণ্ড খণ্ড ভাবে অনেক কথাই তাঁহার শ্রীমুখে শুনিয়াছি কিন্তু ঘটনাগুলি পারম্পর্য্য আমার জানা নাই এবং এগুলিকে ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্ভবপর নহে। অধিকন্তু, “অসম্ভবম্ ন বক্তব্যম্” এই নিষেধবাণীও আমাকে নিরস্ত করিতেছে। সুতরাং পাঠকবর্গের কৌতুহল নিবারণার্থে সামান্য দুই একটি কথা বলিয়াই আমি এই প্রসঙ্গ ত্যাগ করিব। শ্রীশ্রীঠাকুর তদীয় গুরুদেব এবং তিন জন গুরুভ্রাতার সহিত দীর্ঘকাল হিমালয়ের নানা স্থানে পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন। এতদুপলক্ষে কৌশিকাশ্রম গমন, কয়েকজন বিরাটকায় মহাপুরুষের দর্শন ও তিন মাসাধিক কাল তাঁহাদের সেবা, বশিষ্ঠাশ্রমে গমন, পথে হরগৌরী রূপধারী বালক-বালিকার সহিত সাক্ষাৎ, তাঁহাদের গুহায় রাত্রিযাপন ও গুরুদেব এবং গুরুভ্রাতাগণের সহিত বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়া, পরদিবস প্রাতঃকালে উন্নত পুরুষ, রক্তচন্দন চর্চ্চিত দেহ, রক্তজবার মালাধারী এক বৃদ্ধ কর্তৃক পথ প্রদর্শন এবং মূহুর্তমধ্যে বশিষ্ঠাশ্রমে প্রত্যাবর্তন ও তথায় শ্রীগুরুগণের সহিত যজ্ঞানুষ্ঠান, ইত্যাদি অনেক কথাই ঠাকুরের শ্রীমুখে শুনিয়াছি। গাজিয়াবাদের নিকট এক অরণ্যে তিনি দীর্ঘকাল তপশ্চর্য্যায় নিযুক্ত ছিলেন এবং রাজপুতানায় কোন এক ভক্তগৃহে বৎসরাধিক কাল যাপন করেন। কিন্তু ঠাকুরের নিষেধবাক্য স্মরণ করিয়া আমি আর অধিক দূর অগ্রসর হইতেছি না, পাঠকবর্গ ক্ষমা করিবেন।
পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, আনুমানিক ১৯০২/০৩ খৃষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা অঞ্চলে ফিরিয়া আসেন। ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে তাঁহার মাতৃবিয়োগ হয়, সেই সময়ে তিনি কালীঘাটে ছিলেন, দেশে যান নাই। ইহার পর তিনি কলিকাতার নিকটবর্ত্তী সুবিখ্যাত পল্লী উত্তরপাড়ায় কয়েক বৎসর অতিবাহিত করেন। হঠাৎ একদিন একবস্ত্রে বাহির হইয়া যান এবং বৎসরাধিক কাল দাক্ষিণাত্যের নানা স্থানে পদব্রজে ভ্রমণ করিয়া ১৯০৭ খৃষ্টাব্দের শেষ ভাগে কিংবা ১৯০৮ খৃষ্টাব্দের প্রথম ভাগে দেশে ফিরিয়া আসেন। এই সময় হইতে তাঁহার তিরোভাব (১৮ই বৈশাখ ১৩৫৬) পর্য্যন্ত তিনি লোকালয়েই কাটাইয়া গিয়াছেন এবং অযাচিতভাবে লোকের ঘরে ঘরে যাইয়া কৃপা বিতরণ করিয়া তাহাদিগকে কৃতকৃতার্থ করিয়াছেন। “অহৈতুকী কৃপাসিন্ধু” কথাটির তাৎপর্য্য তাঁহাকে দেখিয়াই সম্যক উপলব্ধি করিতে পারিয়াছি। কত লোক যে তাঁহার শ্রীচরণাশ্রয় পাইয়া ধন্য হইয়াছেন তাহার সঠিক সংখ্যা কাহারও জানা নাই; কিন্তু এই সংখ্যা যে অন্ততঃ লক্ষাধিক হইবেই এরূপ মনে করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা প্রভৃতি স্থানে তিনি সর্ব্বজনবিদিত ছিলেন বলিলেও বোধহয় অত্যুক্তি হইবে না। হিন্দু মুসলমান নির্ব্বিশেষে তিনি সকলেরই ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। জীবনের শেষে অল্পাধিক ৬ বৎসর তিনি ভাগ্যবান ভ্রাতা ৺ উপেন্দ্রকুমার সাহা ও ৺নরেন্দ্রনাথ ভুঁইয়াকে সেবাধিকার প্রদান করিয়া তাঁহাদের সাহচর্য্যে নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী নামক স্থানে কাটাইয়া গিয়াছেন। পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দের ১৮ই বৈশাখ পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে বেলা ১-৩০ মিনিটের সময় তিনি প্রকটলীলা সম্বরণ করেন। চৌমুহনীতেই তাঁহাকে সমাধিস্থ করা হয় এবং তথায় বর্ত্তমানে একটি আশ্রম স্থাপিত হইয়াছে। ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে, তাঁহার পূত জন্মভূমি ডিঙ্গামাণিকে এবং কলিকাতার উপকণ্ঠে যাদবপুরে আরও তিনটি আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই পরিচিতি পড়িয়া যে কেহই সন্তুষ্ট হইতে পারিবেন না তাহা বলাই বাহুল্য। অনেকে হয়ত বলিবেন যে, ইহা না লিখিলেই ভাল হইত এবং কৌতুহলের উদ্রেক করিয়া তাহা নিবারণের কোনও চেষ্টা না করিয়া আমি অত্যন্ত অন্যায় করিয়াছি। পূর্ব্বেও বলিয়াছি এবং পরিশেষে আবার বলিতেছি যে, ইহার অধিক সাধ্য আমার নাই এবং আমি পুনরায় আমার এই অপারগতার জন্য পাঠকবর্গের মার্জ্জনা ভিক্ষা করিতেছি। তবে ইহাও নিঃসঙ্কোচে বলিতে পারি যে ঠাকুরের লীলাকথা আলোচনা করিতে আমরা অনেকেই সম্পূর্ণ অযোগ্য ও অনধিকারী এবং এই পত্রাংশগুলিই তাঁহার প্রকৃষ্ট পরিচয় এই কথাটি মনেপ্রাণে মানিয়া লওয়াই আমাদের পক্ষে সর্ব্বতোভাবে মঙ্গলপ্রদ সন্দেহ নাই।