এখানে আমাকে আবার একটা বিতর্কে মধ্যে প্রবেশ করিতে হইবে, এবং সেইজন্য গোড়াতেই পাঠক-পাঠিকাদের মার্জ্জনা চাহিয়া লইতেছি। সংযম ও নিয়ম মনুষ্য জীবনে অপরিহার্য। ইহার অন্ততঃ কিছুটা না থাকিলে কি সমাজ -জীবন, কি রাস্ট্র-জীবন, কিছুই অব্যাহত রাখা যায় না। কোন ক্ষেত্রে, কোন অবস্থাতেই উচ্ছ্ঙ্খলাতাকে কেহই সমর্থন করেন নাই। ধর্ম্ম-জীবনেও এই সংযম ও নিয়মের স্থান সুনির্দ্দিষ্ট আছে এবং প্রত্যেক ধর্ম্ম-সম্প্রদায়ই নানাবিধ বিধি-নিষেধ প্রচলন করিয়া এই সমস্যার সমাধানে যত্নবান হইয়াছেন। আবার ইহাও দেখা যায় যে, কোন কোন ক্ষেত্রে এই বিধি-নিষেধ যৌক্তিকতার গন্ডী ছাড়াইয়া উৎকট আকার ধারণ করে। প্রায় প্রত্যেক ধর্ম্ম-সম্প্রদায়ের ইতিহাসেই ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হইতে একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করিতেছি। কোনও এক মঠে আমাকে একটা দিন কাটাইতে হইয়াছিল।সকাল বেলা আন্দাজ ৭/৩০-টার সময় এক মঠবাসী আসিয়া আমাকে বলিলেনঃ “বালক-ভোগ প্রস্তুত, আপনি স্নান করিয়া আসুন, প্রসাদ পাইবেন।” শীতের সকাল, তখন স্নান করিবার ইচ্ছা আমার মোটেই ছিল না, কিন্তু মঠবাসীর আগ্রহাতিশয্যে যাইতে হইল, কোন প্রকারে স্নান করিয়া আসিলাম। মঠবাসী আমাকে একটি ঘরে লইয়া গিয়া বসিবার জন্য একখানি কুশাসন পাতিয়া দিলেন এবং এক গ্লাস জল আনিয়া দিলেন।পরে একখানি ছোট পাথরের থালায় চারখানা লুচি, কিছু হালুয়া, কয়েক টুকরা ফল এবং একটা লাড্ডু আনিয়া আমার সম্মুখে রাখিলেন। আমি “প্রার্থিতমাত্রেণ” নীতির অনুসরণ করিয়া কেবল হাত বাড়াইয়াছি, অমনি ঐ মঠবাসী একেবারে “হা হা” করিয়া উঠিলেন। তারপর আরম্ভ হইল এক নির্যাতনের পালা। এমন বিপদে আমি জীবনে অল্পই পড়িয়াছি। বাঁ হাত কোথায় রাখিব, ডান হাতে কি ভাবে লুচিখানা লইতে হইবে, চিবাইবার সময় ঠোট ফাঁক হইতে পারিবে না, আবার হাত না ধুইয়া অন্য কিছু তুলিয়া লওয়া চলিবে না, এক কথায় মঠবাসীর অত্যাচারে আমার প্রসাদ পাওয়া তালুতে উঠিয়া গেল। এক সপ্তাহ থাকিব বলিয়া গিয়াছিলাম সেই দিন বৈকালেই পলাইয়া আসিলাম।
বিধি-নিষেধের এই জাতীয় বিকৃতি আরও বহু দেখিয়াছি এবং কোন কোন তথাকথিত প্রগতিশীল সম্প্রদায়ের ব্যাক্তিদিগের মধ্যেও ইহা প্রত্যক্ষ করিয়াছি। কিন্তু এগুলি ব্যতিক্রম, সচরাচর ইহাই দেখা যায় যে, প্রয়োজন মতই বিধি-নিষেধ প্রচলন হইয়া থাকে, এবং ইহারা একেবারে অসহনীয় হয় না। আমাদের ঠাকুরের কিন্তু বিধি-নিষেধের বালাই ছিল না। তবে কি তিনি উচ্ছৃঙ্খলতার প্রশ্রয় দিয়া গিয়াছেন? আমি মাছ ছাড়িতে চাহিলাম, তিনি বলিলেন যে, যখন ছাড়িবার মাছই আমাকে ছাড়িয়া যাইবে। এ কথার তাৎপর্য্য কি? আমি কি ইহাই বুজিব যে, আমার যাহা ইচ্ছা তাহাই করিয়া যাই, ভালমন্দ দেখিবার প্রয়োজন নাই, যখন যেটা ছাড়িবার আপনিই ছাড়িয়া যাইবে। উচ্ছৃঙ্খলাতা ছাড়া ইহাকে তো অন্য কিছু বলিতে পারি না। কিন্তু কথাটা এত সহজ নহে। ঠাকুর আমাকে মাছ ছাড়িতে নিষেধ করার কারণ এও হইতে পারে যে, বাহ্যতঃ মাছ ছাড়িলেও আমি হয়তো (হয়তো কেন নিশ্চয়ই) মনে মনে মাছ খাইতাম এবং আমাকে এই পাটোয়ারী হইতে রক্ষা করিবার জন্যই ঐরূপ আদেশ করিয়াছিলেন। আমি এক ভদ্রলোকের কথা জানি, যিনি কিছু দিনের জন্য মাছ ছাড়িয়া দিয়াছিলেন কিন্তু প্রত্যহ বাজার আসিলেই কি মাছ আসিয়াছে তাহার অনুসন্ধান করিতেন এবং কি ভাবে কি রান্না হইবে তাহার ব্যবস্থাও করিয়া দিতেন।একদিন আমি সেই ভদ্রলোকের বাহিরের ঘরে বসিয়া তাহার সহিত গল্পগুজব করিতেছিলাম, এমন সময় বাজার আসিয়াছে দেখিয়া তিনি উঠিয়া গেলেন। পোনা মাছের কালিয়া, চিংড়ি মাছের ভাপা আর চুনো মাছের টকের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া তিনি ফিরিয়া আসিলেন। আমি বলিলামঃ আপনি তো মাছ ছাড়িয়াই দিয়াছেন,তবে এই মাথাব্যাথা কিসের জন্য?” তিনি বলিলেনঃ তোমার বৌদির একটা মস্ত বড় দোষ কি জান, এই মাছের ব্যবস্থাটা তিনি মোটেই করিতে পারেন না, তাই ব্যবস্থাটা ক’রে দিয়ে এলুম, ওরাই খাবে ভাল, আমার আর কি?” ভদ্রলোকের স্ত্রী আমার সম্মুখে বাহির হইতেন না কিন্তু আজ তিনি সে কথা বুলিয়া গেলেন। তিনি নিকটেই কোথাও ছিলেন এবং কথাগুলি তাহার কানে গিয়াছিল। তিনি সটান ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া পরিলেন এবং স্বামীকে মিথ্যাবাদী, ভন্ড ইত্যাদি বলিয়া খুব এক হাত লইলেন। হঠাৎ বোধ হয় তাহার হুঁস হইল যে, আমি সেখানে বসিয়া আছি, তাড়াতাড়ি মাথার কাপড় টানিয়া দিয়া চলিয়া গেলেন। এই ভদ্রলোক সামান্য কয়েক দিন পরেই মাছ ধরিয়াছিলেন। গীতায় যে মিথ্যাচারের কথা আছে, ইহাও তাহাই। বাহ্যতঃ ইন্দ্রিয় সংযম করিয়া মনে মনে বিষয়ানুসরণই এই মিথ্যাচার, পাটোয়ারীরই নামান্তর। মাছ ছাড়িতে নিষেধ করিয়া ঠাকুর আমাকে এই পাটোয়ারীর হাত হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন।
কিন্তু ইহাতেও বিষয়টার সুমীমাংসা হইল না। প্রশ্নটা উঠিয়াছিল এই যে, কোন প্রকারের বিধি-নিষেধের ব্যবস্থা না করিলে প্রকারান্তরে উচ্ছৃঙ্খলতাকেই প্রশ্রয় দেওয়া হয় কিনা? ঠাকুর বলিতেন যে, মন বুদ্ধির ছটফটানি ও ইন্দ্রিয়গ্রামের বিরুদ্ধে অনবরত যুদ্ধ করিতে হইলে নিজেরই শক্তি ক্ষয় হয় মাত্র, লাভ কিছুই হয় না। সুতরাং সেরূপ কোন চেষ্টা না করিয়া নিজের ইষ্টকর্ম্মে যথাসম্ভব লিপ্ত হইয়া থাকার চেষ্টাই প্রকৃত পথ। মন, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়াদির সহিত যতই যুদ্ধ করিবে ততই তাহাদের অত্যাচার বাড়িবে বৈ কমিবে না নিজেকেই ক্রমশঃ দূর্বল হইয়া পড়িতে হইবে। অতএব ঐ দিকে লক্ষ্য রাখিতে নাই, লক্ষ্য রাখিতে হইবে নিজের ইষ্টনিষ্ঠার দিকে। একদিক স্থির হইয়া আসিলে অপর দিক আপনিই দূর্ব্বল হইয়া পড়িবে, তাহার জন্য আর পৃথক চেষ্টার প্রয়োজন হইবে না। একখানি পত্রে ঠাকুর লিখিয়াছিলেনঃ “বাসনাদি যাহা রজগুণের তরঙ্গ তাহারা সকলই উদয় হইয়া অস্ত হইবে। তাহাদের তাড়না জালের প্রতি লক্ষ্য না রাখিয়া আপন ইষ্ট সেবায় লক্ষ্য রাখিয়া যাইবেন। অচিরেই ভগবান এই মায়াক্ষেত্রের বিকার হইতে উদ্ধার করিয়া লইবেন সন্দেহ নাই। সাধ্যমতই ভগবানের সেবাচর্য্যা করিয়া যাইবেন। মনের চঞ্চলতার দিকে লক্ষ্য না রাখিয়া কেবল সেবার আশ্রয়ে থাকিবেন। মনের ধর্ম্মই হইয়াছে চঞ্চল।” (বেদবাণী, প্রথম খন্ড, ৪৪নং)। একদিন ঠাকুর আমার নিকট হইতে একখানা কাগজ ও একটি পেন্সিল চাহিয়া লইলেন। কাগজখানাতে একটি গোলাকার বৃত্ত আঁকিয়া তাহার মধ্যস্থলে একটি বিন্দু বসাইলেন। পরে কাগজখানা আমার সম্মুখে ধরিয়া বলিলেনঃ “এই যে বৃত্তটি দেখিতেছেন ইহাই হইল সীমাবদ্ধ মন, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়াদির অধিকারের পরিধি, আর আপনাকে যাহা দেওয়া হইয়াছে তাহা হইল এই বিন্দুটি। এই বিন্দুটির আয়তন যতই বাড়িবে, উহাদের অধিকারের পরিধি আপনিই সঙ্কুচিত হইতে থাকিবে। আপনি এই বিন্দুটির সেবা পরিচর্যা লইয়াই থাকেন, উহাদের সহিত মিত্রতাও করিবেন না, উহাদের বিরোধিতাও করিবেন না।” সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, ঠাকুরের ব্যবস্থায় উচ্ছৃঙ্খলতার কোন কথাই উঠিতে পারে না। আমার সামান্য অভিজ্ঞতা হইতে আমি নিঃসন্দেহে বুজিয়াছি যে, এই পথই সহজ এবং স্বাভাবিক।
কিন্তু কথাটাকে আরও একটু তলাইয়া দেখা প্রয়োজন। স্বভাবতঃ অতিচঞ্চল, প্রমাতী ও বলবান মনের নিগ্রহ বায়ুর নিগ্রহের ন্যায় কঠিন, অর্জ্জুনের এই আশঙ্কার উত্তরে ভগবান বলিলেন যে, অর্জ্জুন যাহা বলিলেন তাহা নিতান্তই সত্য, তথাপি “অভ্যাসেন ত কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে।” (গীতা ৬-৩৪) অর্থাৎ মন দূর্নিগৃহ হইলেও অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা নিগৃহীত হইয়া থাকে। পতঞ্জলিও তাঁহার যোগসূত্রে বলিয়াছেনঃ “অভ্যাসে বৈরাগ্যাভাং তন্নিরোধঃ”, অর্থাৎ অভ্যাস ও বৈরাগ্য দ্বারাই মনকে নিরোধ করিতে হয়। কিন্তু কথা হইল এই যে, অভ্যাসকে হয়ত কিছুটা বুজিতে পারি এবং প্রতিনিয়ত চেষ্টা করিলে হয়তো ইহার মাধ্যমে কিছু ফলও পাইতে পারি, কিন্তু বৈরাগ্যকে আমি কোথায় খুঁজিয়া পাইব? “বিরাগী হইব” মনে করিলেই কেহ বিরাগী হইতে পারে না এবং বৈরাগ্য যে চেষ্টাসাপেক্ষ আমাদের অভিজ্ঞতাও তাহা বলে না। কেহ কেহ বলেন যে, বিচারের সাহায্যে ধৈর্য্য সহকারে পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করিলে বিষয়ের অনিত্যতা ও দুঃখস্বরূপতা উপলব্ধি হইতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে বৈরাগ্যেরও উদয় হইতে পারে কিন্তু এরূপ যুক্তিও কতকটা বিচারসহ, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। বিষয়ের অনিত্যতা বুজিতে বা বুজাইতে বিশেষ কোন বেগই পাইতে হয় না। মরিতে যে হইবেই এবং মরিলে যে স্ত্রী, পুত্রকন্যা,বিষয়-আশয় কিছুই সঙ্গে যাইবে না, এইটুকু বুজিবার মত বুদ্ধি সকলেরই আছে, কিন্তু কৈ বৈরাগ্য তো আসে না। বিষয়ী লোকেরাও যে বিষয়ের দুঃখস্বরূপতা মোটেই বুজিতে পারে না, তাহাও বলা যায় না। কখন কখন “দূর ছাই, এই সব আর ভাল লাগে না”, এমন কথা যে তাহারাও না বলে এমন নহে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই, ফলে কিছুই হয় না। যে বিষয়ী সে বিষয় লইয়াই থাকে, বৈরাগ্য তাহার কাছেও ঘেঁষিতে পারে না। সুতরাং সংসার যে অনিত্য এবং বিষয় যে শুধু সুখেরই কারণ নহে, দুঃখেরও আকর, ইহা বুজিয়া লইতে বিশেষ কোন দুর্ব্বোধ্য যুক্তিতর্কের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু শুধু বুজিলে হইবে কি, বৈরাগ্যের সন্ধান তাহাতে মিলে না। ঠাকুরের কোন কোন কথায় আমি বুজিয়াছি যে, প্রত্যেক মানুষই একটা বিশেষ সত্তা লইয়া জম্মায় এবং এই সত্তায় যে-বস্তুর অধিষ্ঠান নাই, শত চেষ্টা করিলেও সেই বস্তু লাভ করা যায় না। আমার মনে হয় যে, আমাদের অভিজ্ঞতাও ঠিক এই কথাই বলে। এমন লোকও দেখিয়াছি যিনি নানা শাস্ত্রে সুপন্ডিত, বৈরাগ্য সম্বন্দ্ধে হয়তো দু’চার ঘন্টা বক্তৃতা করিয়া যাইতে পারেন এবং এই বিষয়ে অল্পায়াসেই একখানা মনোরম ও প্রামাণিক গ্রন্থ রচনা করিয়া দিতে পারেন, কিন্তু বৈষয়িক ব্যাপারে তাহার একেবারে কড়াক্রান্তি হিসা্ব, কোথাও কিছু ফাঁকে পড়িবার জো নাই । বিচার-বুদ্ধির নিরসনই বিচারের প্রকৃত উদ্দেশ্য ।শ্রুতি বলিতেছেনঃ
“নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো
ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন ।”
অর্থাৎ “এই আত্মাকে বহু স্বাধ্যায় অর্থাৎ বেদপাঠ সহায়ে, অথবা ধারণাশক্তি সহায়ে, কিংবা বহু শাস্ত্র শ্রবণের দ্বারাও জানা যায় না ।” এই কথাটা বুঝিয়া লইবার জন্যই বিচারের প্রয়োজন । কিন্তু ভিতরে বৈরাগ্যের অধিষ্ঠান না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, বিচারের এই মূল উদ্দশ্য আর স্মরণে থাকে না, তর্ক লইয়াই মাতিয়া উঠে এবং নিরর্থক তর্কজালে নিজেকে আবদ্ধ করিয়া ফেলে । কবীরের একটি দোহাতে পড়িয়াছিলাম যে, গাধা যেমন নানা প্রকারের বোঝা বহিয়া বেড়া্য়, লবণও বহে, তুলাও বহে, আবার চন্দন কাঠও বহে, কিন্তু তাহাদের পার্থক্য উপলদ্ধি করিতে পারে না, পন্ডিতেরাও সেইরুপ শাস্ত্রের বো্ঝা ঘাড়ে লইয়াই বেড়ায়, তাহার মর্মার্থ বোঝে না । ঠাকুর বলিতেনঃ “গ্রন্থ- গ্রন্থি”, এবং বিচার ও তর্ককেই যাহারা সার বলিয়া ধরিয়া লইয়াছে, তাহাদের সম্বন্ধে কখনও কখনও একটা দৃষ্টান্তের উল্লেখ করিতেন । যাহাদের গ্রাম্য জীবনের সহিত পরিচয় আছে তাহাদের মধ্যে অনেকেই হয় তো দেখিয়া থাকিবেন যে,
একটা দড়ির এক প্রান্ত পাঁঠার গলায় বাঁধিয়া এবং অপর প্রান্ত একটা খুঁটিতে আটকাইয়া পাঁঠাকে গোছর দেওয়া হয় ; উদ্দেশ্য যে পাঁঠাটা ঘুরিয়া ফিরিয়া ঘাস খাইয়া বেড়াইবে, অথচ ছুটিয়া পলাইয়া যাইতে পারিবে না । কিন্তু পাঁঠার এমন স্বভাব যে, সে ঘুরিতেই থাকে, ফিরিবার কথা আর তাহার খেয়াল থাকে না এবং দড়িটা খুঁটিতে জড়াইতে জড়াইতে তাহার চরিবার স্হানও ক্রমশঃ ছোট হইতে থাকে । পরিশেষে তাহার গলাটা খুঁটিতে আসিয়া আটকাইয়া যায় এবং তাহার শ্বাসরোধের উপক্রম হয় । তখনও যে একবার ফিরিলেই সে মুক্ত হইতে পারে, এই সহজ বুদ্ধিটা তাহার মাথায় আসে না ।উপয়ান্তর না দেখিয়া সে “ব্যা ব্যা” করিয়া ডাকিতে সুরু করে এবং তাহার ডাক শুনিয়া মালিক আসিয়া তাহাকে মুক্ত করিয়া দেয় । কেবলমাত্র তর্ক ও যুক্তির সাহায্যে সত্য নিরুপণ করিতে গিয়া তার্কিকদেরও শ্বাসরোধের উপক্রম হয় । সহজ রাস্তাটা যে সম্মুখেই পড়িয়া আছে, তাহা আর তাহাদের নজরে পড়ে না । পরিত্রাহি চিৎকার করিতে পারিলে হয়তো বা একটা উপায় হইযা যাইত কিন্তু পান্ডিত্যাভিমান আসিয়া রুখিয়া দাঁড়ায়, কাজেই কিছুতেই কিছু হয় না । কিন্তু ভিতরে যদি বৈরাগ্যের অধিষ্ঠান থাকে তাহা হইলে গ্রন্হ আর গ্রন্হি হইয়া উঠে না, নানাভাবে সহায়তাই করে । মূল কথাই হইল বৈরাগ্য এবং আমরা দেখিলাম যে, বিচারের দ্বারা এই বস্তু লাভ করা যায় না । এই বৈরাগ্য যাহার আছে তাহার আছে, যাহার নাই তাহার না্ই, ইহা কেহ কাহাকেও দিতে পারে না এবং চেষ্টার দ্বারাও ইহাকে অর্জ্জন করা যায় না । সুতরাং উপরোক্ত ভগবদ্বাক্যে “অভ্যাস” ও “বৈরাগ্য” এই শব্দ দুইটিকে আলাদা না ধরিয়া একত্রেই ধরিতে হইবে এবং বাক্যটির অর্থ হইবে এই যে, বৈরাগ্যের ভিত্তিতে ও সহায়তায় অভ্যাস-যোগের অনুষ্ঠান করিতে পারিলে দুর্নিগ্রহ যে মন তাহাও নিগৃহীত হইতে পারে । বৈরাগ্যবিহীন অভ্যাসের দ্বারা মনস্হির করিতে চেষ্টা করিলে হয়তো বা কিছু কিছু বিভূতি আয়ত্ত হইতে পারে কিন্তু কল্যাণের পথে অগ্রসর হওয়া যায় না । কাজেই নিবৃত্তি-মার্গ সকলের জন্য নহে ।
শুধু বৈরাগ্য কেন, চেষ্টার দ্বারা আরও অনেক কিছুই লাভ করা যায় না । একখানি পত্রে ঠাকুর লিখিয়াছিলেনঃ “বিবেকবুদ্ধি উৎপন্ন হইলে আপনি আপনিই সকল অভাব নাশ করিবে । চেষ্টা করিয়া বিবেকতা আসে না ।” (বেদবাণী, প্রথন খন্ড, ১৬০ নং) । কথাটা অত্যন্ত গুরুতর এবং আমাদের এই বিধি-নিষেধ প্রশ্নের সহিত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । এ কথা না বলিলেও চলে যে, চেষ্টার দ্বারা মানুষ অনেক কিছু করিয়াছে ও করিতেছে । পিরামিড তুলিয়াছে, তাজমহল গড়িয়াছে, যুগে যুগে শিল্প, ভাঙ্কর্য্য, চিত্রকলা, গী্ত, নৃত্য, বাদ্য, সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদির নানাবিধ অবদানে মানুষের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করিয়া তুলিয়াছে । বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের এই যে বিস্ময়কর জয়যাত্রা এবং যান্ত্রিক সভ্যতার নানাপ্রকার ঊপকরণ ও উপঢৌক্ন, সমস্তই মানুয়ের চেষ্টাতেই হইয়াছে । উপযুক্ত শিক্ষায়তনের মাধ্যমে মানুষকে অনেক কিছুই শিখাইয়া দেওয়ার ব্যবস্হা হয় এবং একটু চেষ্টা করিলে অনেকেই তাহা অন্ততঃ আংশিকরুপে শিখিয়া লইতে পারে । সাময়িক শিক্ষার প্রভাবে মানুষ যে কিছু দিনের মধ্যেই আজ্ঞানুবর্ত্তিতা, সময়নিষ্ঠা, কর্ত্তব্যপরায়ণতা, নিয়মানুবর্ত্তিতা প্রভৃতি নির্দ্দেশগুলি আয়ত্ত করিতে পারে, এ কথা বলিয়া বুঝাইবার অপেক্ষা রাখে না । আমি যদি মনে করি যে, প্রত্যহ সূর্যোদয়ের পূর্ব্বে শয্যাত্যাগ করিব, আহার ক্রমে সামান্য ফলমৃলে আনিয়া দাঁড় করাইব, বাক-সংযম অবলম্বন করিব, এবং নিদ্রার সময়টাকেও ক্রমশঃ সঙ্কুচিত করিয়া আনি্ব, আন্তরিক চেষ্টা করিলে কষ্টসাধ্য হইলেও ইহা যে অসম্ভব, এরূপ মনে করিবার কোন হেতু নাই । সুতরাং ইহা অবশ্য স্বীকার্য যে, আন্তরিক চেষ্টা করিলে মানুষ অনেক কিছুই করিয়া উঠিতে পারে ।
অনেকেই বলেন যে, মানুষ ক্রমশঃ উন্নত হইতে উন্নততর অবস্হায় উঠিতেছে । বাহ্যতঃ দেখিতে গেলে একথা কেহই অস্বীকার পারিবে না । কিন্তু জিজ্ঞাসা এই যে, ক্রোধ, লো্ভ, হিংসা, দ্বেষ প্রভৃতি মানুষের মৌলিক বৃত্তিগুলির বিশেষ কোন পরিবর্তন হইতেছে না কেন ? সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বৃত্তিগুলির প্রকাশভঙ্গীর কিছুটা প্রকার-ভেদ হইলেও ইহাদের মোট পরিমাপ যে কমিয়াছে, ইতিহাস তাহা বলে না ।ইহার কারণ যে নিতান্ত দুরধিগম্য তাহাও মনে হয় না । একটু নিবিষ্ট মনে চিন্তা করিলেন বুঝিতে পারা যায় যে, ক্রোধ, লোভ, হিংসা দ্বেষাদি বৃত্তিগুলির মূল হইল মানুষের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব । ভাল মন্দ, সুখ দুঃখ, লাভ লোকসান, শত্রু মিত্র, শুভ অশুভ মানুেষর এই যে দ্বন্দ্ববুদ্ধি্, ইহাকে আশ্রয় করিয়াছ এই বৃত্তি গুলি আছে । অল্পায়াসেই বুঝা যায় যে, এই দ্বন্দ্ব বুদ্ধি না থাকিলে এই বৃত্তিগুলিরও কোন তৎপরতা থাকিতে পারে না । কিন্তু মানুষের নিজের দিকে দৃষ্টি দিবার আর ইচ্ছাও নাই, অবসরও নাই, বাহির লইয়াই সে মাতোয়ারা হইয়া উঠিয়াছে । কত রঙিন স্বপ্নই না সে আজ দেখিতেছে, চাঁদে অভিযান পাঠাইবার প্রস্তুতি সুরু করিয়াছে, আণবিক শক্তির সাহায্যে পৃথিবী কে কল্পনাতীত প্রাচুর্যে ভাসাইয়া দিবে ভাবিতেছে, কিন্তু ভিতরে সে যে ইতর সেই ইতরই থাকিয়া যাইতেছে । বরং তথাকথিত প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রকারের কৃত্রিমতা ও ভণ্ডামি এই ইতরতা সঙ্গে মিশিয়া ইহাকে আরও ভয়াবহ করিয়া তুলিতেছে ।
মানব-সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের নিজের যে বিশেষ কোন উন্নতি হইতেছে না, অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তিই একথা বলিয়াছেন ও বলিতেছেন । আমার স্হির বিশ্বাস যে, আমি যে দ্বন্দ্ববুদ্ধির কথা বলিতেছিলা্ম, সেই দিকে দৃষ্টি না দিলে এবং তাহাকে অন্ততঃ কিছুটা সাম্যের দিকে আনিতে না পারিলে, এই অবস্হার পরিবর্তন হইবে না । কতকগুলি অসুস্থ লোকে মিলিয়া সুস্থ ও সুষ্ঠু কোন কিছুই গড়িয়া তুলিতে পারে না ।
যুগে যুগে মহাজনেরা নানাভাবে ও নানা ভাষায় এই দ্বন্দ্বসাম্যের কথাই বলিয়া আসিতেছেন । যখনই মানুষ তাহাদের নির্দ্ধারিত পথে চলিতে চেষ্টা করিয়াছে তখনই পাইয়াছে শান্তি এবং কল্যাণ কিন্তু অনেকেই এই পথে হাঁটিতে চাহে নাই বা পারে না । মহাজনদের ব্যক্তিত্বের প্রভাব কিছুটা স্তিমিত হইয়া আসিতেই শাঁস ছাড়িয়া খোসা লইয়া ঝগড়া সুরু করিয়াছে, অথবা তাহাদের নির্দ্দেশগুলির মতলবী ব্যাখ্যা করিষা নিজেদের বৈষয়িক কার্য্যসিদ্ধির উপায় স্বরূপে ব্যবহার করিয়াছে । হালফিলের একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি । এই সেদিন ভগবান বুদ্ধকে লইয়া একটা নাচানাচি হইয়া গেল । এই তথাকথিত জয়ন্তীর কিছুদিন পূর্ব্বে এক বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু বলিয়াছিলেনঃ “We have decided to celebrate the 2500th anniversary of the death of Buddha, but without the religious colour”, অর্থাৎ বুদ্ধের পরিনির্ব্বাণের দুই সহস্র পাঁচ শত বার্ষিক তিথিতে তাঁহারা একটা উৎসবের অনুষ্ঠান করিবেন স্থির করিয়াছেন, কিন্তু ইহাতে ধর্মের কোন রঙ থাকিবে না । কথাটা পড়িয়া মোটেই বিস্মিত হইলাম ন্।, কারণ এই শ্রেণীর প্রগতিপন্থীদের ধারণা হইল এই যে, যাহার সহিত ধর্মের কিছু না কিছু সংস্পর্শ আছে তাহাই প্রতিক্রিয়াশীল । কিন্তু চিন্তিত হইলাম এই ভাবিয়া যে, ধর্মকে তাঁহার অবদান হইতে ছাটিয়া দিয়া বুদ্ধকে লইয়া যে অনুষ্ঠান হইবে তাহা কোন বুদ্ধে্র, প্রকৃত বুদ্ধের, না নেহেরুর বুদ্ধের ? দুঃখাবসানের পন্থার অন্বেষণেই বুদ্ধ গৃহ ছাড়িয়া বাহির হইয়াছিলেন এবং সুদীর্ঘ জীবনের অক্লান্ত সাধনায় তিনি যে পথের সন্ধান দিয়াছিলেন, এক কথায় বলিতে গেলে, তাহা ত্যাগ ও সংযমের পথ । কিন্তু ইহাদের মতে আজিকার এই বিজ্ঞানসমৃদ্ধ যুগে যুদ্ধের এই জীর্ণ,পুরাতন ত্যাগের পন্থার আর কোন কার্য্যকারিতা না্ই, উহাকে বাতিল করাই প্রয়োজন । দুঃখাবসানের জন্য ইহাদের পন্থা হইল সুখবৃদ্ধির চেষ্টা । ভালমন্দের কথায় আমার কোন প্রয়োজন না্ই, আমার বক্তব্য হইল এই যে, এই দুইটি পন্থার মধ্যে কোন সম্পর্ক না্, ইহারা সম্পূর্ণ বিপরীত । যাহারা এই জয়ন্তী লইয়া মাতামাতি করিলেন তাহাদের প্রায় সকলেরই বুদ্ধের নির্দ্দেশিত পন্থার প্রতি আন্তরিক কোন শ্রদ্ধা নাই এবং তাহারা এই পথে চলিতে নিতান্তই অনিচ্ছুক ও অপারগ । তবে এই অনুষ্ঠানের অর্থ কি ? অর্থ অতি সহজ, এই জয়ন্তী বুদ্ধের বিরাট ও সুমহান ব্যক্তিত্বকে নিজেদের কাজে লাগাইবার একটা কৌশল মাত্র । মানুষ যুগে যুগে ইহাই করিয়া আসিয়াছে, শালগ্রাম দিয়া শুধু বাটমাই বাটিয়াছে ।
কোথায় যেন পড়িয়াছিলাম যে, বহুদিন পূর্ব্বে কোনও এক চিন্তাশীল প্রবন্ধকার মনুষ্য সমাজে যুদ্ধের আত্যন্তিক নিবৃত্তি সম্বন্ধে আলোচনা করিয়া উপসংহারে বলিয়াছিলেনঃ “ War will abolish itself by its own frightfullness “, অর্থাৎ যুদ্ধের ভয়াবহতাই যুদ্ধের আত্যন্তিক নিবৃত্তি ঘটাইবে । এটম বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা যুদ্ধের ভয়াবহতাকে সেই চরম স্তরেই আনিয়া ফেলিয়াছে এবং জনসাধারণও ক্রমে এই বিষয়ে অধিকতর সজাগ হইয়া উঠিতেছে । কিন্তু মানুষের লোভ ও হিংসা দুর্নিবার এবং এই জন্যই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক অবিশ্বাস কিছুতেই মিটিতে চাহিতেছে না । এই অবিশ্বাস ও তদানুষঙ্গিক ভীতি এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি করিয়াছে । এই জয়ন্তীর উদ্যোক্তারা হয়তো ভাবিয়াছিলেন যে, এতদুপলক্ষে বুদ্ধের অহিংসা ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করিয়া এবং বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধদিগের সঙ্গে নূতন করিয়া একটা যোগসূত্র স্থাপন করিয়া শান্তির ক্ষেত্রকে অন্ততঃ কিছুটা বিস্তৃত করিতে পারিবেন । কিন্তু গাছের গোড়া কাটিয়া আগায় জল ঢালিলে কোন দিনই কোন ফল পাওয়া যায় না । যাহারা আসিল তাহারা তামাসা দেখিতেই আসিল ; গান, বাজনা, শুনিয়া এবং নৃত্য ও অভিনয়াদি দেখিয়া বাড়ী ফিরিয়া গেল । বুদ্ধের প্রতি কোন আকর্ষণ লইয়া কেহ আসিলও না এবং কোন আকর্ষণ লইয়া কেহ ফিরিয়াও গেল না । আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার অভাবে সমস্ত ব্যাপারটাই একটা হাস্যকর প্রহসনে পরিণত হইয়া গেল । যাহা হইল তাহাকে বুদ্ধের জয়ন্তী কোন ক্রমেই বলা চলে না, যাহারা নাচানাচি করিলেন ইহা তাহাদেরই জয়ন্তী । কেহ কেহ আবার এতদুপলক্ষে প্রদত্ত বক্তৃতা ও লিখিত প্রবন্ধাদিতে বুদ্ধ ও গান্ধীজীকে সমপর্য্যায়ভুক্ত করিয়া ফেলিলেন । একটু নির্দিষ্ট মনে চিন্তা ও বিচার করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, বুদ্ধের অহিংসা ও গান্ধীমার্কা মতলবী অহিংসা এক বস্তু নহে । পরে প্রসঙ্গান্তরে কথাটা সবিস্তারে আলোচনা করিতে হইবে, সুতরাং এখানে আর বিশেষ কিছু বলিলাম না ।
কেহ কেহ বলিতে পারেন যে, বক্তৃতা ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে এই যে নূতন করিয়া বৌদ্ধধর্মের সারকথাগুলি লোকদিগকে শুনাইয়া দেওয়া হই্ল, ইহাতে কিছু কাজ তো হইলই । আমি বলিব কিছুই হইল না । “অহিংস হও, অহিংস হও “, এই উপদেশ শুধু শুনিয়া তো দূরের কথা, উপদেশানুসারে চেষ্টা করিলেও অহিংস হওয়া যায় না । মূল শিক্ষার সহিত সম্বন্ধ বজায় না থাকিলে শুধু নীতিকথা আওড়াইয়া কোন কাজই হয় না । আমাদের নেতাদের অনেককেই বলিতে শুনি যে, ভারতীয় ঐতিহ্যের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্যই হইল পরমতসহিষ্ণুতা (toleration) এবং কোনক্রমেই ইহাকে হারাইলে চলিবে না । কিন্তু এই সহিষ্ণুতা কোথা হইতে আসিল ? বহুকাল ধরিয়া একটা বিশিষ্ট জীবনাদর্শ অনুসরণের ফলেই ইহা আসিয়াছে এবং সেই আদর্শ বজায় না থাকিলে শুধু গলাবাজি দ্বারা ইহাকে বজায় রাখা যাইবে না । নেতাদের এই কথাগুলি শুনিলে আমার মনে হয় যে, ইহারা যেন বলিতে চাহিতেছেন যে, আমটি অতি রসাল ও মনোর্ম, ইহাকে কিছুতেই ছাড়া চলিবে না, কিন্তু আমগাছটা আব্বর্জ্জনা, উহাকে কাটাইয়া ফেলাই প্রয়োজন ।
আবার ঠাকুরের কথায় ফিরিয়া আসিতে হইতেছে । “চেষ্টা করিয়া বিবেকতা আসে না “। ঠাকুরের এই কথাটা লইয়াই আলোচনা সুরু হইয়াছিল । ব্যাপারটা হইল এই যে, অক্রো্ধ,অহিংসা্, নির্লোভতা প্রভৃতিকে পৃথক পূথক ভাবে সোজাসুজি অর্জ্জন করিবার কোন উপায় নাই । বিনয়ী হইতে চেষ্টা করিলে মর্কট-বিনয়ী হয়তো হইতে পারা যায় কিন্তু প্রকৃত বিনয়ী হওয়া যায় না । যদি কেহ মনে করে যে্, সে অক্রোধ হইবে এবং সাধ্যানুসারে চেষ্টাও করে্, সে অক্রোধ হইতে তো পারিবেই না্, বরং সময় সময় এমন আচরণ করিয়া বসিবে যে্, অপরের হাস্য সম্বরণ করা কঠিন হইয়া উঠিবে । এখানে একটি গল্প বলিবার প্রলোভন ত্যাগ করিতে পারিলাম না । এক ভদ্রলোক নিয়মিত পাঠ শুনিতে যাইতেন । একদিন তিনি পাঠ শুনিয়া ফিরিয়া
ctnd. page no. 187