ধর্ম বলতে ঠাকুরের নির্দিষ্ট কোন মতবাদ নাই, তিনি ভক্তদের
ক) সর্বদা নামে শরণ থাকতে
খ) কর্তব্য কর্ম সম্বন্ধে সচেতন থাকতে
গ) দুঃস্থদের সেবা করতে
ঘ) অপরের দোষ অন্বেষণ এবং কারো ওপর ক্রোধ প্রকাশ না করতে
ঙ) আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করতে ইত্যাদি উপদেশ দিতেন, ইহাই তাঁর ধর্ম, মানবধর্মে বিশ্বাসী ঠাকুর সর্বধর্ম্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।
ধর্ম কী?
ধর্ম কেন প্রয়োজন?
মানবজীবনে ধর্মের গুরুত্ব বা ভূমিকা কী?
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন যে, স্থৈর্য এবং সত্য এ-দুইই হল ধর্ম। শাশ্বত এই সত্যের নাম দেওয়া হয়েছে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তিনি না থাকলে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের অস্তিত্বরক্ষা অসম্ভব। ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজমান শক্তিরূপে। ঠাকুরের কথা – চিরন্তন সত্য হল মানুষের একমাত্র আশ্রয়। জাতি ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষমাত্রেরই সবথেকে মূল্যবান সম্পদ হল তার দিব্য চেতনা এবং সেই চেতনার বিকাশই হল ধর্ম। মানুষের ধর্ম হল মনুষ্যত্ব জাগরণ। ধর্ম মূলত এক ও অভিন্ন। তবে মত ও পথ হল বহু। সাধারণত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলমান ইত্যাদিকেই ধর্ম বলে মনে করা হয়; কিন্তু প্রকৃত অর্থে, এগুলি হল পূজার্চনার ভিন্ন ভিন্ন পথ বা আচরণের নানাবিধ পদ্ধতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলি হল বিভিন্ন সম্প্রদায় অনুসৃত বিশ্বাস ও বিধিবিধান।
সত্য ধর্মের মূর্ত প্রতীক শ্রীশ্রী রামঠাকুর অবতার সত্যনারায়ণ রূপে অবতীর্ণ হয়ে প্রতিটি মানুষকে “সত্যধর্মে’র প্রতি অনুরক্ত ও আন্তরিক থাকার ও “সত্যাশ্রয়ী” হওয়ার প্রাণমাতানো আহ্বান জানান।
শ্রীশ্রীঠাকুর সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতি, সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তাঁর অনুসারীদের অনুরূপ অনুশীলনের অনুরোধ করেন।
তাঁর মতে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও পদবীধারী সমস্ত জীবিত প্রাণীর মধ্যে একটাই সত্তা বা আত্মা বিরাজ করছে। শ্রীশ্রীঠাকুর অবশ্য হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, ইসলাম ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্ম থেকে আসা তাঁর অনুসারীদের কখনও আপন আপন ধর্ম ত্যাগ করার কথা বলেননি। ফলে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তাদের সকলের কাছেই তিনি ছিলেন আপনজন। একবার জনৈক ভক্তের একটি প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন যে, তাদের দেশ, জন্মভূমি বা জাত যাই হোক, তারা সকলেই মনুষ্য সম্প্রদায় ভুক্ত।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম প্রতিষ্ঠার পর ঠাকুর বলেছিলেন : কৈবল্যধামের চারপাশে বহু বিস্তীর্ণ অঞ্চল। হিন্দু, খ্রীষ্টান, মুসলমান সাধুসন্তেরা পূজা ও ধ্যান করতে এখানে আসবেন। এখানে তীর্থযাত্রীদের সমাবেশ কুম্ভমেলার ভিড়কেও ছাপিয়ে যাবে। এটি হবে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের তীর্থক্ষেত্র। এই ধামে সংগঠিত হবে “সর্বধর্ম্ম সমন্বয়” এবং এই ধাম থেকে উৎসারিত হবে “স্বভাব ধর্মের” মন্ত্র ভবিষ্যতে যা বরণ করে নেবে আমাদের এই গ্রহে বসবাসকারী সমস্ত মানুষ। ভবিষ্যতে, বিশ্বের এই ধামের মাহাত্ম্য প্রচার করতে আবির্ভূত হবেন মহাশক্তিধর এক মহাত্মা।
শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্র দেব অঙ্কিত সর্বধর্ম্ম প্রতীকের ব্যাখ্যাঃ-
এই প্রতীকটি শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্র দেব স্বহস্থে আঁকিয়া ছিলেন। এই প্রতীকটি কৈবল্যসংঘের প্রতীক স্বরূপ স্বয়ং কৈবল্যনাথ। ধর্মজগতের গুরুগোষ্ঠির মধ্যে শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্র দেব সর্বধর্ম্ম সমন্বয়বাদ এই চক্রের মধ্যে সু-পরিষ্ফুট করিয়াছেন এবং স্বয়ং আচরণ করিয়া জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে শ্রীশ্রী ঠাকুর হয়ে আছেন।
এই প্রতীক-এর মাধ্যমে শ্রীশ্রী ঠাকুর এই সংকেত দিয়া গিয়াছেনঃ-
# প্রতীকটির তিনটি চক্র আছে। তন্মধ্যে বড় চক্রটির নাম দিয়েছেন “ব্রহ্মাণ্ড” তার চেয়ে ছোট চক্রটির নাম “বুদ্ধচক্র”। এটি বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক। |
# সবচেয়ে ছোট চক্রটির নাম “গুরু নানন চক্র” এটি গুরু নানক সম্প্রদায়ের প্রতীক। |
# এরপর লক্ষ্য করিলে দেখা যাইবে এই চক্রত্রয়কে ভেদ করিয়া উত্তর-দক্ষিনে একটি দণ্ড গিয়াছে। এই দণ্ডের উপরে আছে গরুর মূর্ত্তি। এই দণ্ডটির নাম ব্রহ্মদণ্ড। আর গরুর মূর্ত্তি দিয়ে ভক্তের স্থান বুঝানো হইয়াছে। |
# এরপর দেখা যায় পূর্ব ও পশ্চিম দিয়ে আরো একটি দণ্ড আগের দণ্ডটিকে “ক্রস” করিয়া গিয়াছে। যে দণ্ডটি “ক্রস” করিয়া গিয়াছে সেটি শ্রীভগবানের বাঁশী। |
# এইভাবে ব্রহ্মদণ্ড আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী “ক্রস” করিয়া যাওয়ার ফলে যে “ক্রস চিহ্ন” হইল সেইটি খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতীক। |
# অগ্নি ও বায়ু কোণ দিয়া মহাদেবের একটি ত্রিশুল দণ্ড রহিয়াছে। ওই দণ্ডটি “শৈব ও শক্তি” ধর্মের প্রতীক। |
# বৃত্তের কেন্দকে ভেদ করিয়া আর একটি দণ্ড ঈশান ও নৈঋত কোণের দিকে চলিয়া গিয়াছে। ওই দণ্ডটির একদিকে রহিয়াছে “চাঁদ”। এটি ইসলাম ধর্মের প্রতীক। অন্যদিকে রহিয়াছে “খুন্তি”। এটি রামায়েত সম্প্রদায়ের প্রতীক। |